ভবিষ্যৎ সন্তানের সুস্থতার জন্য বিয়ের পূর্বে রক্ত পরীক্ষা করুন
প্রকাশিত : ২১:৩৭, ৭ মে ২০১৯ | আপডেট: ২৩:১৭, ৭ মে ২০১৯
প্রতিটি মানুষ নিজ দেহে নানা প্রকার জিন বহন করে থাকে। এ জিন কোনটা দেহের জন্য ভালো আবার কোনটা ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কখনো কখনো এ জিন শরীরে মারাক্তক রোগের সৃষ্টি করে আবার কখনও ভবিষৎ প্রজন্মকে ঠেলে দেয় নিশ্চিত ঝুঁকিতে। সেক্ষেত্রে বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষা করে আগেই সতর্ক হলে বা একই দোষে দুষ্ট জিনের বাহকরা বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ না হলে তাদের অনাগত সন্তান ঐ রোগ থেকে মুক্ত থাকবে। ‘থ্যালাসেমিয়া’ আমাদের দেশে প্রচলিত ও অজ্ঞাত এক সমস্যা। থ্যালাসেমিয়ার বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রতি বছর ৮ মে বিশ্বব্যাপি থ্যালাসেমিয়া দিবস পালন করা হয়।
বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশনের তথ্য মতে, থ্যালাসেমিয়ার বাহকের শরীরে থ্যালাসেমিয়া রোগের জিন থাকলেও রোগের কোনো উপসর্গ সাধারণত প্রকাশ পায় না। দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১০ ভাগ অর্থাৎ প্রায় দেড় কোটি নারী-পুরুষ নিজের অজান্তে থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক। বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৮ থেকে ১০ হাজার এবং বিশ্বের লক্ষাধিক শিশু থ্যালাসেমিয়া রোগ নিয়ে পৃথিবীতে আসে।
দেশে বর্তমানে প্রায় ৩০ হাজার শিশু থ্যালাসেমিয়ার ভুগছে এবং সুস্থ থাকতে নিয়েমিত রক্ত নিতে হচ্ছে তাদের। এ ধীরগতির মরণব্যধিটি বংশানুক্রমিক রক্তবাহিত এবং এটি মূলত থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত বাবা ও মায়ের মাধ্যমে সন্তাদের দেহে ছড়ায়। এ ক্ষেত্রে সন্তানের দেহে থ্যালাসেমিয়া ঠেকাতে বিয়ের আগে বর ও কনের রক্ত পরীক্ষা করা জরুরী। বর ও কনে দুজন থ্যালাসেমিয়া বাহক যদি একে অন্যকে বিয়ে না করে তাহলে প্রতিটি আগত শিশুর শরীরে থ্যালাসেমিয়ার জিন থাকবে না।
ভূমিষ্ট হওয়ার পর পরই থ্যালাসেমিয়ায় আংক্রান্ত শিশুর মধ্যে থ্যালাসেমিয়ার লক্ষণ দেখা যায় না। বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশন জানায়, ২/৩ বছর বয়সে থ্যালাসেমিয়ায় আংক্রান্ত শিশুর মধ্যে থ্যালাসেমিয়ার লক্ষণ ধরা পরে। এর উপসর্গ হিসেবে শিশুর চেহারা ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া, দর্বলতা, চিন্তা ও স্বাভাবিক চলনে অবসাদ, শ্বাসকষ্ট, জন্ডিসের মত ত্বক হলদেটে হয়ে যাওয়া, শারীরিক বৃদ্ধি ধীরগতি, পেট মাত্রাতিক্ত প্রসারিত হওয়া ইতাদি দেখা যায়।
চিকিৎসকরা জানান, রক্তে হিমোগ্লোবিনের স্বল্পতা সৃষ্টি করে থ্যালাসেমিয়া। সৃষ্টি হয় রক্তশূন্যতা। মানব দেহের রক্তে লোহিত কনিকার মেয়াদ ১২০ দিন হলেও থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত রোগীর লোহিত কণিকার অর্ধেক সময়কালের মধ্যেই কমে যায়। রক্তে হিমোগ্লোবিন পরিমাপ মত না থাকায় এবং নতুন তৈরী না হওয়ায় লোহিত কণিকাগুলো সহজেই ভেঙে যায়। এতে রক্তশূন্যতা সৃষ্টি হয়, অন্যদিকে প্লীহা আয়তনে বড় হতে থাকে। পরবর্তী সময়ে অতিরিক্ত আয়রণ জমা হয়ে হার্ট, প্যানক্রিয়াস, লিভার, অণ্ডকোষসহ বিভিন্ন অঙ্গের কার্যক্ষমতাকে নষ্ট হয়ে যায়। বার বার রক্ত পরিবর্তনের কারণে থ্যালাসেমিয়ার রোগীদের রক্ত বাহিত বিভিন্ন রোগ যেমন-হেপাটাইটিস হতে পারে, অস্থিমজ্জা প্রসারিত হয়ে যায় এবং এতে হাড় পাতলা ও ভঙ্গুর হয়ে যায়। এতে মেরুদণ্ডের হাড় ভেঙ্গে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। থ্যালাসেমিয়া একটি ভয়ংকর রোগের নাম। এর ঠিক মত চিকিৎসা না হলে অল্পতেই কোন শিশু নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে ঝুঁকে পড়তে পারে।
থ্যালাসেমিয়ার চিকিৎসা অনেক ব্যয় বহুল হলেও বাংলাদেশে মানুষ এ থ্যালামিয়া সম্পর্কে তেমন একটা সচেতন না থাকায় অনেক সময় সঠিক চিকিৎসা করাও সম্ভব হয়ে ওঠে না। পরিবারের মধ্যে কোন সদস্যের শরীরে থ্যালাসেমিয়া থাকলে তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সে অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে। চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা পরমর্শ দিচ্ছেন, কোন দম্পতি যৌথভাবে থ্যালাসেমিয়ার বাহক হলে সন্তান নেওয়া থেকে বিরত থাকাই উত্তম।
বাংলাদশ থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডশনের মহাসচবি ডা. গোলাম রহমান একুশে টেলিভিশন অনলাইনকে বলেন, ‘র্বতমানে দেশের ১০ ভাগ মানুষ থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত। যখন কোনো ব্যক্তি মা-বাবার কাছ থেকেই থ্যালাসেমিয়ার জিন উত্তরাধিকার হিসেবে পায় তখন তাকে থ্যালাসেমিয়া মেজর বলে। অপরদিকে উভয়ের মাইনর হলে সে ক্ষেত্রে তাদের সন্তানদের থ্যালাসেমিয়া মেজর হওয়ার সম্ভাবনা থাকে ২৫ শতাংশ।’
থ্যালাসেমিয়া রোগীদের প্রতি ভালোবাসা পূর্ণ আচরণ করাই হবে এ রোগ প্রতিরোধের অন্যতম নিয়ামক। এ লক্ষে প্রতি বছর ৮ মে পালন করা হচ্ছে বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস। বাংলাদেশও থ্যালাসেমিয়া রোগীদের প্রতি শ্রদ্ধা, তাদের বাবা-মায়ের অক্লান্ত পরিশ্রম, অসীম ধৈর্য্যের প্রতি সম্মান প্রদর্শন, বিশ্বব্যাপী থ্যালাসেমিয়া রোগের বিস্তার প্রতিরোধ, রোগীদের অবস্থার উন্নতিকল্পে এ দিবসের কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়। রোগ প্রতিরোধের সাথে সাথে থ্যালাসেমিয়ায় আংক্রান্ত রোগীদের সুচিকিৎসাই মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হওয়া উচিত বলে মনে করা হয়।
এসি