ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪

ভাগ্য পরিবর্তনে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হয়েছেন আদিবাসী নারীরা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২৩:০৭, ৮ ডিসেম্বর ২০১৭ | আপডেট: ১১:৫৭, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

চাং পাং। চাকমা ভাষার শব্দ। যার বাংলা করলে দাঁড়ায় যা চাইবেন তাই পাবেন। তবে আমাদের এ প্রতিবেদনে এটি একটি দোকানের নাম। রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমীতে পাঁচ দিনব্যাপী আয়োজিত পার্বত্য মেলায় আসা দোকানগুলোর মধ্যে এটিও একটি। এরকম প্রায় আশিটিরও বেশি দোকান নিয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে মেলাটির উদ্বোধন করেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।

এসময় উপস্থিত ছিলেন- পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর। মূলত তিন পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ির তৃণমূলের নারী উদ্যেক্তাদের উৎপাদিত পণ্য দেশব্যাপী পরিচিত করানো ও সর্বত্র দেশীয় ঐতিহ্যকে তুলেই ধরাই এ মেলার উদ্দেশ্য। মূলত আদিবাসী নারীরা তাদের সংস্কৃতির সঙ্গে মিল রেখে পোশাকসহ নিজ হাতে উৎপাদিত যেসব পণ্য বাজারজাত করে থাকে তা প্রদর্শনী ও বিক্রয় করা হচ্ছে এ মেলায়।

তেমনি একজন উদ্যোক্তা অঞ্জনা চাকমা। ২০১৫ সালে স্বাস্থ্যকর্মীর চাকরি ছেড়ে উদ্যোক্তা হওয়ার ঝুঁকি নেন। অল্প সময়ে সফলতার মুখও দেখতে শুরু করেছেন। মেলায় তার মেয়ে সুড়ুপা চাকমার সঙ্গে কথা বলে জানা যায় শার্ট, ব্যাগ, পাজামা, পাঞ্জাবী, মেয়েদের পার্টস, বেডশিট, খাদী ওড়না, মণিপুরী শাল, কাঁথাসহ বিশটিরও বেশি অধিক পণ্য উৎপাদন করেন তারা। অঞ্জনা চাকমার অধীনে রযেছে নিয়মিত একশ জনের বেশি কর্মচারী। প্রতি কর্মচারীর পরিবার তাদের ওপর নির্ভরশীল।

তবে ফ্রু ফ্রু চো ফ্যাশন স্টোরের স্বত্ত্বাধিকারী মাচাচিং মারমার ব্যাপারটা ভিন্ন। তার নিয়মিত কর্মচারীর সংখ্যা কম হলেও অনিয়মিত কর্মচারী অনেক। এদের কেউ ভাল শাল বুনে আবার কেউ শাড়ি বুনতে পারদর্শী। মাচাচিং মারমা শিকার করলেন, খুব বেশি পড়াশোনা না জানলেও উদ্যোক্তা হিসেবে তিনি সফল। স্বামী ভাল চাকরি করলেও তিনি বরাবরই নিজের পায়ে দাঁড়াতে চেয়েছেন।

এসএস হ্যান্ডিক্র্রাফটসের স্বত্বাধিকারী শিরীণ সুলতানার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হাতে তৈরি এসব পণ্যের পিছনে সৃজনশীল চিন্তা ও কঠোর শারীরিক শ্রম দিতে হয়। এক একটা শাল তৈরি করতে লাগে এক সপ্তাহেরও বেশি সময়। সবচেয়ে বেশি সময় লাগে কাঁথায়।

মাইসা হ্যান্ডিক্র্যাফটসের স্বত্ত্বাধিকারী পারভিন আক্তার জানালেন, উৎপাদনের পাশাপাশি চীন থেকে ছাতা, ব্যাগ, পাখা, ক্যাপ এসব পণ্যও আমদানি করেন তারা। তারা চান দেশব্যাপী আদিবাসীদের হাতে উৎপাদিত এসব পণ্য ছড়িয়ে দিয়ে দেশীয় ঐতিহ্যকে তুলে ধরতে।

মেলায় আসা মহারাণী টেক্সটাইলের স্বত্ত্বাধিকারী মহারাণী চাকমা জানালেন, তার স্বামী অন্য আরেকটি বিয়ে করলে একমাত্র মেয়েকে নিয়ে ঘর ছাড়েন। অল্প পুঁজিতে শুরু করেন হাতে উৎপাদিত পণ্যের ব্যবসা। কর্মচারীর অভাবে নিজের পরিবারের সদস্যরা মিলেই কাজ করতেন। তবে তিনি এখন সফল। তিনি জানালেন, ব্যবসায়ে ঝুঁকি থাকবেই। তবে যারা ধৈর্য্য ধরে পরিশ্রম করতে পারে তারা সফল হবেই।

মেলায় আসা একজন উদ্যোক্তা মনোয়ারা বেগম। তিনি বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার রাঙ্গামাটি জেলার সভাপতি। তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শুধু রাঙ্গামাটিতে নারী উদ্যোক্তা আছেন ১০৮ জন। সহযোগী নারী উদ্যোক্তা আছেন ২০০ জনের বেশি। তাদের প্রতি সরকার সুদৃষ্টি দিলে রফতানি আয়ে তারাও হতে পারেন গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার।

 

আর/এসএইচ 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি