ঢাকা, রবিবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

ভাব থেকে ভাবনা

আহমেদ মুশফিকা নাজনীন

প্রকাশিত : ১৯:১৭, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | আপডেট: ১৯:১৯, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

কয়টা বই লিখলে তবে লেখক বলা যায় ? কয়টা কবিতা লিখলে তাকে কবি বলা হয় ? আজকাল প্রায়ই দেখি অনেকে নিজেই নিজের নামের আগে কবি, কথাসাহিত্যিক, গল্পকার, শিশুতোষ লেখক এসব উপাধি বসান। আর ব্যাপক এক ভাব নিয়ে তারা সমাজ সংসারে ঘুরে বেড়ান।

ভাবছি একজন সারা জীবন একটা বই বের করেছেন একুশের বই মেলায়। তাকে কি লেখক বলা যাবে ? আমার ৩টা বই বেরিয়েছে আমি কি তাহলে শিশুতোষ লেখক বলবো নিজেকে নিজেই? 

অনেকে আবার ৩০ থেকে ৪০টা বই বের করেছেন শিশুদের নিয়ে লিখে। তাহলে তাকে কি বলবো ? তিনি তো অনেক বেশি লিখেছেন আমার চেয়ে।

অনেক মেধাবী মানুষ আবার জনমভর শুধু লিখেই যান। একটাও বই প্রকাশ করেন না। তাকে সবাই চেনে। তিনি কি তাহলে লেখক নন? 

সমাজে নানান ধরনের ভাবের লেখক, কবি, গায়ক, নায়ক হিরোসহ বড় বড় কর্মকর্তাদের দেখে বিস্মিত হই। 

অনেক উঠতি কবির গল্প শুনি তারা নাকি কবি হবার জন্য বিখ্যাত কবির কাছে ধর্না দেন। সারাদিন রাত কবির বাড়ি পড়ে থাকেন তাকে কবি বানিয়ে দেবার জন্য। এভাবে কি কবি হওয়া যায় ? 

লেখক হবার জন্য অনেকে নাকি লেখকের কাছে মাথা কুটে মরেন। প্রশ্ন জাগছে মনে, কেউ কবিতা লিখে দিলে কি সে কবি হয়ে যায়! কেউ লেখা লিখে দিলে কি মন থেকে লেখক হওয়া যায় ? 

একবার এক কর্মশালায় গেছি। দেখি সেখানে উঠতি নামকরা অনেক কবি লেখক। অবাক হয়ে দেখি তারা সমানে শ্ল্যাং বলছেন। আমরা অনেকেই বিব্রত। শুনলাম কবি হতে গেলে, লেখক হতে গেলে নাকি শ্ল্যাং বলতে হয়। 

ছোটোবেলায় শুনেছিলাম আর্টিষ্ট হতে গেলে নাকি চুল বড় করতে হয়। পোশাকে নোংরা থাকতে হয়। নাহলে নাকি ভাব আসে না। আসলেই কি তাই ? 
ভাব জিনিসটা কি ? 

আমি যা নই তাই ভাবা ? অন্যকে তাই ভাবানো ? এতে উদ্দেশ্যটা কি ? ভাবের ভাবনায় ভাবতে বসি। 

সমাজে ছোট  বড় মাঝারি লোকেরা ভাব ধরেই আজ সমাজটাকে দুর্নীতির আখড়ায় নিয়ে গেছেন। ভাব ধরেই আজ সাহেদ, সাবরিনা, শারমিনরা অনিয়ম করার সুযোগ পায়। ভাব ধরেই সাহেদের মতো নকল লোক গণমাধ্যমে বড় বড় কথা বলে। নেতার ভাব ধরেই পাতি নেতা, চুনোপুটি নেতারা আরও বড় নেতা হয়ে যায়। ভাব ধরেই নকল মানুষ জ্ঞানী হয়ে যায়। 

তাদের জ্ঞানের ভারে সবাই নুজ্জ্য। 

আমাদের এই ভাব-পাগলা দেশে শুধু ভাব নিয়ে না থেকে যিনি ভাবের মানুষ তিনি যদি নিজ স্বার্থসিদ্ধি ভুলে মানুষের সূক্ষ অনুভূতি ও ভাবকে জাগিয়ে তুলে কাজ করতেন তাহলে বরং মঙ্গলই হতো মানুষের। 

একবার এক কোর্পোরেট ব্যাংকের আয়োজনে গানের অনুষ্ঠানে গেছি। সেখানে সব প্রতিষ্ঠিত সুটেড বুটেড মানুষেরা। সব ভাব ধরে গান শুনছে। সুবেশী তরুণ তরুণীরা খুব ভাব নিয়ে মাথা নাড়ছে। মনে মনে হাসলাম। আমি শতভাগ শিউর এ তরুণ বা তরুণী কোনোদিনই রবীন্দনাথের বই পড়েনি। চিনেও না কবিকে। তবুও ভাব ধরছে তারা রবীন্দ্র প্রেমিক বলে। আহা আহা বলে যখন মন্তব্য করছে তখন অবাক হয়ে তাদের ভাব ধরা দেখছি। কি নিখুঁত ভাব!

অনেক দেশপ্রেমিক সাজা মানুষকে দেখেছি সমাজে ভাব ধরতে। তারা দেশীয় সংস্কৃতি চলে গেলো চলে গেলো বলে গলা ফাটিয়ে মরে যাচ্ছেন অথচ তাদের সন্তানদের পড়াচ্ছেন ইংলিশ মিডিয়ামে। কি ভাব! 

বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে ভাব ধরা মানুষরা একজনের কাজ আরেকজন ক্রেডিট নিয়ে ভাব ধরছেন উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে। 

সংসারেও ভাব ধরছি আমরা সুখী কাপলের। সব সুখ কি ধরা দেয় এ জীবনে ? মন খুঁজতে আমরা মন হাতরে বেড়াই এদিক ওদিক। হেথা নয় হোতা নয় অন্যকোনখানে। যখন বুঝতে পারে, তখন ফিরে আসার সব পথ হয়ে যায় বন্ধ। 

প্রিয় মানুষ হয়ে যায় বড় অচেনা। এক ছাদের নীচে থেকেও দুজন থাকে যোজন যোজন দূরে। 

ভাব ধরে ধরে মানুষ আজ বড় একা। সকালে একা, বিকেলে একা, রাতে একা। ভাবের সর্ম্পকের টানাপোড়নে পরে মানুষের মন আজ রক্তাত্ব। ভাবের চক্করে পরে হারিয়ে যাচ্ছে সব সরলতা। 

ভাবের সাগরে ডুব দিয়ে তাই সত্যিকারের ভাবের মানুষরা অভিমানে সংসারে আজ খুঁজছেন শুধুই আড়াল। ভাব নিয়ে তারা তাই পরেছেন ভীষন ভাবনায়।

এসি

 


** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।
Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি