ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্বে আটকে গেল লিগভিত্তিক ক্রিকেট
প্রকাশিত : ২২:০৫, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৭ | আপডেট: ১৬:৫৭, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭
ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্বে আটকে গেল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সংস্কৃতি বদলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসির উদ্যোগ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট লিগভিত্তিক করার উদ্যোগ শুরুতেই অনিশ্চয়তায় মুখে পড়ে গেল।
বর্তমানে দ্বিপক্ষীয় সিরিজভিত্তিক ক্রিকেটে যে দুটো দল খেলে, এর বাইরে বাকি দলগুলোর আগ্রহ তেমন থাকে না। এর থেকে মুক্তির পথ বের করেছিল আইসিসি।
আগামী মাসে অকল্যান্ডে আইসিসির সভা অনুষ্ঠিত হবে। তাতেই চূড়ান্ত হওয়ার কথা প্রস্তাবিত এই লিগভিত্তিক ক্রিকেট। যেটির খসড়া হয়ে গেছে। কেবল আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করা বাকি। কিন্তু পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) শক্ত অবস্থান নিয়েছে। ভারতের সঙ্গে তাদের দ্বিপক্ষীয় সফরগুলোর ব্যাপারে পরিষ্কার কোনো ব্যাখ্যা না থাকলে এই চুক্তিতে সই করবে না পিসিবি।
আইসিসির প্রস্তাব হলো, টেস্টের শীর্ষ ৯টি দল দুই বছর মেয়াদে হোম-অ্যাওয়ে সিরিজে প্রতিটি প্রতিটির সঙ্গে খেলবে। আর ওয়ানডের দুই বছরের লিগে মুখোমুখি হবে ১৩টি দল। এতে করে দুই বছরের মধ্যে প্রতিটি দল একবার নিজেদের মাঠে আরেকবার প্রতিপক্ষের মাঠে গিয়ে সিরিজ খেলবে।
সবার সঙ্গে সবার খেলা শেষ হলে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থাকা দুটি দল প্লে অফ ম্যাচ খেলে নির্ধারিত হবে টেস্ট চ্যাম্পিয়ন। এখন যেটি র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে থাকা দলকে দেওয়া হয়। ওয়ানডেতেও প্রায় একইভাবে চ্যাম্পিয়ন নির্ধারণ করা হবে।
লিগভিত্তিক ক্রিকেটের সুবিধা হলো, সবগুলো দলকে সবার সঙ্গে খেলতে হবে বলে খেলার বৈচিত্র্য বাড়াবে। এখন অনেক সময়ই দেখা যায়, প্রায় একই দুই দল বেশি বেশি সিরিজ খেলছে। আবার লিগে অন্য দলের পয়েন্ট হারানো বা প্রাপ্তির সঙ্গে প্রতিটা দলের স্বার্থ জড়িত থাকে। এতে করে সবগুলো সিরিজের ব্যাপারে কৌতূহল থাকবে সব দেশের সমর্থকদের। ফুটবল লিগগুলোতে যেটা হয়। রিয়াল পয়েন্ট হারাল কি না, খোঁজ রাখে বার্সেলোনা।
এর বাইরেও দলগুলো দ্বিপক্ষীয় সিরিজ নিজ উদ্যোগে আয়োজন করে নিতে পারবে। যদিও এই অতিরিক্ত সিরিজগুলোর পয়েন্ট লিগ টেবিলে যোগ হবে না। শুধু র্যাঙ্কিংয়ে প্রভাব ফেলবে। দলগুলো যেন দ্বিপক্ষীয় সিরিজগুলো খেলতে পারে, এজন্য ৮ মাসের একটি ফাঁকা জায়গাও রাখা হয়েছে।
কিন্তু ভারত-পাকিস্তানের যে সম্পর্ক, সেটি এই সিরিজ চালুর পথে বড় বাধা। ঝামেলা এড়াতে হোম-অ্যাওয়ে সিরিজে ভারত-পাকিস্তানকে মুখোমুখি না করে লিগ সম্পন্ন করার বিকল্প ভেবে রাখা হয়েছে। কিন্তু পিসিবির ভয়টা হলো, নতুন এই কাঠামোতে ভারত-পাকিস্তান যদি পরস্পরের সঙ্গে না খেলে, এর বাইরে দ্বিপক্ষীয় সিরিজেও না খেলে; তাহলে আগামী ১০ বছরের মতো সময়ে ভারতের বিপক্ষে তাদের খেলা হবে না।
ভারতের বিপক্ষে খেলার সূচি না থাকলে পিসিবির টিভি স্বত্ব সে রকম দামে বিক্রি হবে না। যে টিভি স্বত্ব থেকে তারা ১৩০ মিলিয়ন ডলার প্রত্যাশা করে।
পাকিস্তানের যুক্তিটা হলো, অন্য কোনো দল কি রাজি হবে ভারতকে ছাড়া এতগুলো বছর খেলতে? অস্ট্রেলিয়া বা ইংল্যান্ড? ফলে লিগভিত্তিক ক্রিকেটে যদি না-ও হয়, যে ৮ মাসের ফাঁকা সূচি আছে, তাতে তারা ভারতকে দ্বিপক্ষীয় সিরিজে চায়। এর নিশ্চয়তা না পেলে নতুন কাঠামোতে পিসিবি সই করবে না।
২০০৭ সালের পর ভারত-পাকিস্তান পূর্ণ দ্বিপক্ষীয় সিরিজ হয়নি। ২০০৮ সালে মুম্বাইয়ে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার দায় ভারত সরকার সরাসরি পাকিস্তানের উপর চাপিয়েছে। ভারত সরকার এরপর থেকে তাদের কোনো ক্রিকেট দলকে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ খেলতে দিতে রাজি হয়নি। যদিও পিসিবি ও বিসিসিআই একাধিক সিরিজ খেলতে সমঝোতা চুক্তি পর্যন্ত করেছিল। সেই চুক্তি আর আলোর মুখ দেখেনি। পিসিবি মামলার উদ্যোগ নিয়েছে। আইসিসি সমঝোতা করার জন্য সালিস কমিটি গঠন করেছে। কিন্তু অগ্রগতি সামান্যই।
আগামী সভায় পিসিবি তাই জোর গলায় নিজেদের অবস্থান তুলে ধরবে। যদিও তাদের একার ভোট নতুন প্রক্রিয়াকে থামাতে পারবে কি না, তা নিশ্চিত নয়। যা-ই হোক না কেন, নতুন লিগভিত্তিক ক্রিকেট শুরুর আগে একটা অনিশ্চয়তায় পড়ল।
কেআই/ডব্লিউএন