ঢাকা, রবিবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

ভাষা সৈনিক ছালেহা বেগমের উপর তথ্যচিত্র উদ্বোধন

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৪:৫৭, ৩ জুলাই ২০২৩ | আপডেট: ১৫:৩৯, ৩ জুলাই ২০২৩

হৃদয়ে ৭১ সাংস্কৃতিক পরিষদের উদ্দোগে পল্টন টাওয়ারে ইকোনোমিকস রিপোর্টাস মিলনায়তনে “বিশ্ব পরিবেশ দিবস ও একজন ভাষা সৈনিক“ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান এবং ভাষাসৈনিক ছালেহা বেগমের উপর নির্মিত একটি তথ্যচিত্রের প্রদর্শন হয়।

তথ্যচিত্র নির্মতা সারোয়ার তমিজউদ্দিন এর নির্দেশনায় ২৯ মিনিটের ঐ তথ্যচিত্রে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীপেশার বুদ্ধিজিবিদের সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে ভাষাসৈনিক ছালেহা বেগমের সাহসীকতার কথা। 
যিনি ১৯৫২ সালে ময়মনসিংহ মুসলিম গার্লস হাই স্কুলের দশম শ্রেনীর ক্রমিক নং ১ ধারী মেধাবী ছাত্রী ছিলেন। রাষ্ট্রভাষার দাবীতে ঢাকার রাজপথে ছাত্রহত্যার প্রতিবাদে সারাদেশে শোক ও বিক্ষোভ প্রদর্শনের অংশ হিসেবে ময়মনসিংহ মুসলিম গার্লস হাই স্কুলের ছাত্রীদের সংগঠিত করে রাজপথে মিছিলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এবং স্কুলে জাতীয় পতাকার সরিয়ে নিজের বোরকা কেটে পতাকা তৈরী করে কালো পতাকা তুলে প্রতিবাদ করেছিলেন। 

যা রাস্ট্রদ্রোহীতা বলে তাকে রাস্ট্রিকেট করা হয়, স্কুল কর্তৃপক্ষ চরম শাস্তিস্বরুপ তাকে শিক্ষা জীবন থেকে বহি:ষ্কার করে । ঐ বহিষ্কার আদেশ মরোনোত্তর বাতিল চেয়ে সকলেই ঐ তথ্যচিত্রে সোচ্চার দাবী তোলেন। 

যাদের মধ্যে অন্যতম কয়েক জন হলেন ভাষাসৈনিক আহমেদ রফিক, ভাষাসৈনিক প্রতিভা মুৎসুদদি, ভাষাসৈনিক রাজিয়া হেসেন, অধ্যাপক ড. মনজুরুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. আবু মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন, অধ্যাপক দীনা হক, লেখক সাংবাদিক ফরিদ আহম্মেদ দুলাল, সাংবাদিক গবেষক , লেখক তুষার আবদুল্লাহ, মুক্তিযোদ্ধা গবেষক বুলবুল খান মাহবুব, ড. আতিউর রহমান প্রমুখ। 

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন  প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সাবেক মহাপরিচালক, অধ্যাপক দীনা হক। 

তিনি ভাষাসৈনিক ছালেহা বেগমের অবদানের কথা উল্লেখ করে বলেন “ আমরা যখন সৃষ্টিকর্তার সাথে কথা বলি তখন কি কেউ অন্য কোন ভাষায় কথা বলি? কখনই না, আমরা আমাদের মায়ের ভাষায়ই কথা বলি, বাংলা ভাষায় কথা বলি, এই বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দানের জন্য যে সকল নারী নেত্রীরা সংগ্রাম করেছিলেন তাদের মধ্যে ছালেহা বেগম ছিলেন অনন্যা।

দশম শ্রেনীর একজন বাচ্চা মেয়ে সেই আমলে যিনি নেত্রী ছিলেন, স্কুলে কালো পতাকা তুলেছিলেন, শহরে ছেলেদের সাথে নিয়ে কালো পতাকা হাতে মিছিল করেছিলেন, যা অত্যান্ত সাহসীকতার ব্যাপার এবং এই কালো পতাকা উড়ানোর জন্য তিনি শিক্ষা জীবন থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। আমাদের বর্তমান প্রজন্মের কাছে তার এই অবদানের কথা তুলে ধরা উচিত। আমি সশ্রদ্ধচিত্তে তাকে সম্মান জানাই এবং ছালেহা বেগমের জন্য আল্লাহর দরবারে মাগফেরাত কামনা করি। তিনি তো আর বেচে নেই, তিনি এই দুনিয়াতে সম্মান পেলেন কি পেলেন না সেটা বড় কথা নয়। তিনি যেন আল্লাহর দরবারে সম্মানিত হন । আমি তার জন্য জান্নাতুল ফেরদৌস ও মাগফেরাত কামনা করছি।

বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে অধ্যাপক দীনা হক বলেন পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে গিয়ে আমাদের উচিত মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর নির্দেশমত প্রতিটি বাড়িতে অন্তত একটি করে বৃক্ষ রোপন করে আমাদের সবুজায়ন প্রকল্পকে সফল করে তোলা। বাড়ীর আঙ্গিনায় কোন জমি ফেলে না রেখে শাকসবজি চাষ করা।

অন্যান্য বক্তাদের মাঝে ভাষাসৈনিক ছালেহা বেগমের বড়ছেলে সৈয়দ শাকিল আহাদ অনুষ্ঠানের আয়োজক হৃদয়ে ৭১ সাংস্কৃতিক পরিষদকে এবং ভাষাকন্যা ছালেহা বেগম নামের তথ্যচিত্রের নির্মাতা সারোয়ার তমিজউদ্দিন সহ ঐ তথ্যচিত্রে সাক্ষাৎকার প্রদান সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানান এবং তার মা ভাষা সৈনিক ছালেহা বেগমের বহিঃষ্কারাদেশ মরোনোত্তর বাতিলের দাবী জানান। তিনি বলেন, “ইনশাআল্লাহ আপনাদের এই প্রচেষ্টায়আমার আম্মার বহি:ষ্কার আদেশ মরোনোত্তর বাতিল তরান্নিত হবে।”

আরো বক্তব্য দেন কুলাউড়া সমিতি ঢাকার সাংগঠনিক সম্পাদক বিশিষ্ট আইনজীবী ও কুলাউড়া আই টি বি এল এর উপদেষ্টা ব্যরিষ্টার আবু সাদেক আবদুল্লাহ।

তিনি বলেন “ ভাষাসৈনিক ছালেহা বেগম ও তার বোনেরা কুলাউড়া গার্লস হাই স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন এবং ভাষাসৈনিক ছালেহা বেগম কিশোরগন্জে বয়স্ক নারী শিক্ষা কেন্দ্র গড়ে তোলেন। 

মনোহরদী কলেজের অধ্যক্ষ গোলাম ফারুক বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে সচেতনতা বৃদ্ধি ও ভাষাসৈনিক ছালেহা বেগমের তৎকালীন বহিষ্কার আদেশ ময়মনসিংহ মুসলীম গার্লস হাই স্কুল থেকে বাতিল চেয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

ভাষাসৈনিক ছালেহা বেগমের মেয়ে এ্যডভোকেট ফরিদা আক্তার তার মায়ের সংগ্রামী জীবনের নানা দিক তুলে ধরে ব্যাপক আলোচনা করেন। 

বক্ত্যব্য রাখেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল কলেজের অধ্যক্ষ্য শিবলী সাদিক, মনোহরদী কলেজের অধ্যক্ষ শিবলী সাদিক, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান মামুন, সভাপতি লায়ন আবুল কালাম আজাদ, অনুষ্ঠানের সভাপতি লে.ক. (অব.) ডা. রেহানা খানমসহ অনেকে।

প্রত্যেকেই ভাষাসৈনিক ছালেহা বেগমের বহি:ষ্কারাদেশ মরোনোত্তর বাতিলের দাবী জানান।

এমএম//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি