ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪

ভাড়াটিয়াদের সমস্যা শোনার কেউ নেই

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৯:৪৬, ২২ জানুয়ারি ২০১৮

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে একটি ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকেন ব্যবসায়ী দম্পতি মুশফিকুর রহমান নিশো এবং তানিয়া আক্তার প্রোভা। তারা জানান, ‘ঢাকা শহরে ভাড়াটিয়ারা বাড়ি মালিকদের কাছে জিম্মি। ভাড়া নিতে গেলেই অনেকগুলো টাকা অগ্রিম দিতে হয়। কোনো কোনো বাসায় কমপক্ষে ৩ মাসের ভাড়া বা লক্ষাধিক টাকা এডভান্স দেয়া লাগে। নইলে বাসা ভাড়া পাওয়া যায় না।’

মিরপুরের পল্লবীতে বসবাসকারী ভাড়াটিয়া কাওসার হোসেন বলেন, ‘১১টার মধ্যে বাসায় ফিরতে হয়। নইলে মেইন গেট খোলে না। চাবিও দেয় না। মনে হয় কষ্টের টাকা দিয়ে জেলখানায় থাকি।’

মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক জাকির হোসেন বলেন, ‘জানুয়ারি মাস আসলেই ভাড়া বেড়ে যায়। বাড়ির দাম বাড়ে নাকি আমাদের বেতন বাড়ে বুঝি না। মাসিক বেতনের ৫০ভাগই বাড়ি ভাড়া দিয়ে দেই। কিছু বললে বাড়ি ছাড়ার নোটিশ দিয়ে দেয়।’

এমনই ছোট বড় অনেক সমস্যায় জর্জড়িত দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শহর ঢাকায় বসবাসরত ভাড়াটিয়াদের জীবন। ৩০৬ বর্গ কিলোমিটারের এই শহরে ঠিক কত মানুষের বাস, নেই তার কোনো সঠিক হিসাব। তবে উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে, প্রায় ১কোটি ৭০লাখ মানুষের বাস বিশ্বের ৩য় ঘনবসতিপূর্ণ এই শহরে।

বিশাল এই নগরবাসীর বড় অংশই ভাড়াটিয়া। বিভিন্ন বাসা-বাড়ি, ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকা এসব মানুষের আছে নানান সমস্যা। কিন্তু শুনবে কে তাদের কথা?

ভাড়াটিয়াদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সমস্যার অন্ত নেই তাদের। মোটা অংকের সার্ভিস চার্জ দিলেও লিফট বন্ধ থাকা, ভবনের সদর দরজায় সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা রক্ষী না থাকা, বাড়ির ইউটিলিটি সেবাগুলো ঠিকমত না দেয়াসহ অনেক ধরনের সমস্যা আছে। অনেক বাড়ির মালিক সরকারি চাকুরিজীবী ছাড়া ভাড়া দেন না। কেউ কেউ শর্ত জুড়ে দেন যে, মাসের ১তারিখেই ভাড়া পরিশোধ করতে হবে।

ওই সমস্যাগুলো ছাড়াও ভাড়াটিয়াদের ছাদে যেতে না দেওয়া, অতিথির গাড়ি গ্যারেজে রাখতে না দেওয়া, ভাড়াটিয়াদের প্রতিবেশি হিসেবে মূল্যায়ন না করার মতো ছোটখাটো সমস্যা তো রয়েছেই।

এসব সমস্যা বা এর কারণ যাই হোক, এব্যাপারে অভিযোগ জানানোর মত সুনির্দিষ্ট কোন কর্তৃপক্ষ নেই। বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৯১ এর বাস্তবায়ন করার জন্যও নেই কোন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ। নগরবাসীকে নাগরিক সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে এসব সমস্যার সমাধানে কোন উদ্যোগ নেই। 

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ দুই সিটি কর্পোরেশনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভাড়াটিয়াদের অভিযোগ গ্রহণ করার বা তা খতিয়ে দেখার জন্য কোন বিভাগ নেই তাদের।

এপ্রসঙ্গে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা উত্তম কুমার রায় বলেন, ‘বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনের অধীন কোন নীতিমালা প্রণয়ন না হওয়ায় আমাদের দিক থেকে এই ব্যাপারে এখন পর্যন্ত করার কিছু নেই।’

অন্যদিকে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আইন কর্মকর্তা এস এম মাসুদুল হক বলেন, ‘কোন নিয়মের অধীনে সিটি কর্পোরেশন কোন ভাড়াটিয়ার অভিযোগ গ্রহণ করবেন বা সেই অভিযোগের ভিত্তিতে কী পদক্ষেপ নেবেন তা এখনও প্রনয়ণ হয়নি। তবে আমরা পরামর্শ দিয়ে থাকি কোন ভাড়াটিয়া যদি তার অধিকার থেকে বঞ্চিত হন তবে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কাছে যেন লিখিতভাবে জানায়। অনেক সময় এধরনের সমস্যা স্থানীয়ভাবেই মীমাংসা করে দেয় হয়।’

তবে ভাড়াটিয়াদের সমস্যাগুলো সমাধানের একমাত্র স্থান হিসেবে আদালতকে বেছে নেওয়ার পরামর্শ আইনজীবীদের। 

হাইকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী মাহমুদুর রহমান সুজন বলেন, ‘বাড়ি ভাড়াজনিত কোন সমস্যায় সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি ঢাকা জজ কোর্টে সিনিয়র সহকারি জাজের আদালতে বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৯১ এর অধীন অভিযোগ জানাতে পারেন। অভিযোগটি দেওয়ানী মামলা হিসেবে পরিচালিত হবে।’

হাইকোর্টের আরেক আইনজীবী আশফাক আহমেদ বলেন, ‘আইনে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে যে বাড়ি মালিকেরা ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকে কোন অগ্রিম টাকা নিতে পারবেন না। শুধুমাত্র নিয়ন্ত্রকের অনুমতি সাপেক্ষে সর্বোচ্চ ১মাসের ভাড়া অগ্রিম নিতে পারবেন। তবে এই আইনের কোন লংঘন হলে ভুক্তভোগী ভাড়াটিয়া আদালতের দ্বারস্থ হতে পারেন। কোন বাড়ি মালিক কোন ভাড়াটিয়াকে বিনা কারণে বাড়ি ছেড়ে দিতে বললে সেই ভাড়াটিয়া আদালতের রায়ের মাধ্যমে উক্ত বাড়িতে থাকতে পারেন। আদালত প্রয়োজনে ব্যাংকের মাধ্যমে ভাড়াটিয়ার কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে বাড়ি মালিককে পরিশোধ করবেন।’

এখানে দেখা যাচ্ছে যে, ভাড়াটিয়াদের সমস্যা সমাধানে স্বল্প মেয়াদে প্রয়োগযোগ্য কোন ব্যবস্থা নেই। মামলা ব্যতিত অভিযোগ সমাধানের প্রাতিষ্ঠানিক কোন স্থান নেই।   সংশ্লিষ্টদের দাবি, বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৯১ এর আলোকে খুব দ্রুত বিধিমালা প্রনয়ণ করা হোক।

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি