ভেজাল দুধ খেলে হতে পারে গর্ভপাত : গবেষণা
প্রকাশিত : ১৫:৩৫, ৩ জানুয়ারি ২০১৮ | আপডেট: ১৬:০৬, ৪ জানুয়ারি ২০১৮
সবচেয়ে পুষ্টিকর খাবারই আজকাল বিষে পরিণত হয়েছে। বেশিরভাগ দুধ বিক্রেতাই লাভের অঙ্ককে বাড়াতে দুধে এমন সব জিনিস মেশাচ্ছে যে, পুষ্টিকর এই পানীয়টি শরীরের কোনও উপকার তো করছেই না, উল্টো মারাত্মক ক্ষতি করছে।
সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, দুধের সঙ্গে মেশানো স্টার্চ, ইউরিয়া, ডিটার্জেন্ট, সিন্থেটিক মিল্ক এবং নানাবিধ কেমিকাল, যেমন- সোডিয়াম কার্বোনেট, ফর্মেলিন এবং অ্যামোনিয়াম সালফেট বাচ্চাদের শরীরে প্রবেশ করতে করতে নানাবিধ জটিল রোগকে ডেকে আনছে। শুধু তাই নয়, এমন ভেজাল দুধ খাওয়ার কারণে নারীদের গর্ভপাতের আশঙ্কাও বাড়ছে চোখে পরার মতো।
তাই আজ থেকেই সাবধান হয়ে যান। তাই এখনই জেনে নিন খালি চোখে ভেজাল দুধ চেনার বেশ কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি।
পরীক্ষা ১: দুধকে পরিমাণে বাড়াতে একদল কুচক্রি আজকাল দুধে মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে বনস্পতি বা ডালডা মিশিয়ে থাকেন। বেশি মাত্রায় ডালডা বা বনস্পতি জাতীয় উপাদান আমাদের শরীরে বাজে কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি করে। সেই সঙ্গে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কাও বেড়ে যায়। শুধু তাই নয়, ডলডায় উপস্থিত ট্রান্স ফ্যাটের কারণে ব্রেস্ট এবং ইন্টেস্টাইনের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। দুধে ডালডা বা ঐ জাতীয় কোনও উপাদান মেশানো আছে কি-না তা বুঝার সহজ উপায় হচ্ছে, ১ চামচ দুধ নিয়ে তাতে ২ চামচ হাইড্রোক্লরিক অ্যাসিড এবং ১ চামচ চিনি মেশান। কিছু সময় পরে যদি দেখেন মিশ্রনটি লাল রঙের হয়ে গেছে তাহলে বুঝবেন ঐ দুধে মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে ডালডা মেশানো আছে।
পরীক্ষা ২: দুধকে অনেকক্ষণ তাজা রাখতে অনেকেই এতে ফরমালিন নামে একটি উপাদান মিশিয়ে থাকেন। ফরমালিনের প্রভাবে চোখ থেকে জল পরা, গলায় এবং নাকে জ্বালা করা, কাশি, মাথা ঘোরা, ত্বকে মারাত্মত জ্বালা ভাব প্রভৃতি। এক্ষেত্রে মাত্র ১০ এম এল দুধে ২-৩ চামচ সালফিউরিক অ্যাসিড মিশিয়ে নিন। কিছু সময় পরে যদি দেখেন মিশ্রনটির উপরের দিকে নীল রঙের আংঠির মতো গোলাকার অবয়ব তৈরি হয়েছে তাহলে সেই দুধ একেবারেই খাওয়া চলবে না।
পরীক্ষা ৩: পরিমাণ মতো দুধ একটা বাটিতে নিয়ে অল্প আঁচে কম করে ২-৩ ঘন্টা ধীরে ধীরে ফোটাতে থাকুন। নিদির্ষ্ট সময়ের পর দুধটা আর তরল থাকবে না। সেটা খোয়া ক্ষীরে পরিণত হয়েছে। তখন যদি দেখেন ক্ষীরটা খুব শক্ত হয়ে গেছে, তাহলে বুঝবেন দুধটা ভেজাল ছিল।
পরীক্ষা ৪: দুধে অনেকে নানা ধরনের স্টার্চও মিশিয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে ৫ এম এল দুধ নিয়ে তাতে ২ চামচ লবণ ফেলে দেখুন দুধটা নীল রঙের হয়ে যাচ্ছে কি-না। যদি দেখেন এমনটা হচ্ছে, তাহলে মনে কোনও সন্দেহ রাখবেন যে ঐ দুধটা ভেজাল।
পরীক্ষা ৫: আজকাল দুধে নানা ধরনের কেমিকেল, এমনকী সাবান মিশিয়েও দুধকে ঘন করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এমন দুধ ফোটালেই হালকা হলুদ বর্ণের হয়ে যায়। এবার থেকে তাই দুধ ফোটানোর সময় যদি দেখেন দুধের সাদা ভাব ধীরে ধীরে বদলে ফ্যাকাসে হলুদ রঙের হয়ে গেছে তাহলে ভুলেও সেটি মুখে তুলবেন না।
পরীক্ষা ৬: দুধের পরিমাণ বাড়াতে বেশিরভাগই তাতে ইউরিয়া মিশিয়ে থাকেন। এক চামচ দুধের সঙ্গে এক চামচ সোয়াবিন বা অরহর ডালের গুঁড়ো মিশিয়ে মিশ্রনটিকে ভাল ভাবে নারাতে থাকুন। ৫ মিনিট পরে তাতে লিটমাস কাগজ চুবিয়ে ৩০ সেকেন্ড পর যদি দেখেন মিশ্রনটি লাল থেকে নীল হয়ে যাচ্ছে। তাহলে বুঝবেন ঐ দুধে ইউরিয়া মেশানো রয়েছে।
পরীক্ষা ৭: দুধে পানি মেশানো তো কোন কাল থেকে হয়ে আসছে। আসলে পানি শরীরের পক্ষে কোন ক্ষতিকর নয়। কিন্তু তারপরও দুধে পানি মেশানো হয়েছে কি-না তা পারীক্ষা করে দেখতে পারেন। এক্ষেত্রে হাতের উপরে এক ড্রপ দুধ ফেলার পর যদি দেখেন দুধের ফোঁটাটা পেছনে রেখা তৈরি করে গড়িয়ে পরে যাচ্ছে, তাহলে বুঝবেন সেই দুধে মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণ পানি মেশানো হয়েছে।
নিজের এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের শরীরের কথা ভেবে দেরি না করে এখন থেকেই অনুসরণ করুন ভেজাল দুধ চেনার সহজ পদ্ধতিগুলো।
সূত্র: বোল্ডস্কাই
একে//