ঢাকা, সোমবার   ১০ মার্চ ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

মধুর তামাশায় ছাত্র-শিক্ষক

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৫:২৪, ৫ জানুয়ারি ২০২১

Ekushey Television Ltd.

একজন শিক্ষাক তার ছাত্রকে নিয়ে ফসলি জমির আইল ধরে হাঁটছিলেন।
 
চলতে চলতে তারা আইলোর উপরে একজোড়া পুরাতন জুতা দেখতে পেলো। তারা বুঝতে পারলো জুতাজোড়া কোনো গরিব কৃষকের। হয়তো সে পাশেই কোনো জমিতে কাজ করতে নেমেছে। কিছুক্ষণ পরেই হয়তো কাজ শেষ হলে তা পয়ে পরে চলে যাবে।

: ছাত্রটির মাথায় একটু দুষ্টবুদ্ধি এলো। সে তার গুরুকে বললো, ‘উস্তাদজি! আমি যদি কৃষকের সাথে মজা করে তার জুতাজোড়া লুকিয়ে রাখি তাহলে কেমন হবে?’ ‘সে যখন এসে তার জুতা পাবে না তখন তার আচরণ কেমন হয়, তা দূর হতে দেখে মজা নিতে চাই!’

বিজ্ঞগুরু বললেন, কাউকে অনর্থক কষ্ট দেয়া উচিৎ নয়। বরং! তুমিতো ধনী বাবার সন্তান হিসাবে কৃষকের মাধ্যমে নিজের জন্য সৌভাগ্যের দ্বারকে খুলতে চেষ্টা করতে পারো। তুমি তার জুতাজোড়ার মাঝে কিছু টাকা গুঁজে রেখে লুকিয়ে লুকিয়ে তার চেহারার দ্বীপ্তি দেখতে পারো!

: ছাত্রটি উস্তাদের গভীর প্রজ্ঞার পরিচয় পেয়ে আশ্চর্য হয়ে তাঁর কথা মতো কৃষকের জুতার ভিতর কিছু টাকা রেখে তারা উভয়ে গাছের আড়ালে লুকিয়ে কৃষকের অবস্থা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে থাকলো।

খানিক সময় পর জরাজীর্ণ পোষাকের একজন কৃষক কাজ শেষ করে ফিরে আইলের উপর তার জুতা পরতে এলো। জুতা পায়ে দিতে গিয়ে সে জুতার ভিতর কোনো কিছুর অস্তিত্ব অনুভব করে জুতাটি হাতে নিলো। এরপর একটি জুতার ভিতর টাকা দেখে সে বিস্মিত হলো। সেই সাথে অপর জুতার মাঝেও টাকা দেখে সে অভিভূত হলো।

কৃষক ভ্রম কাটাতে বারবার টাকাগুলো ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতে লাগলো। কয়েক বার এদিক সেদিক তাকিয়ে যখন আশে-পাশে কাউকে দেখতে পেলো না, তখন আস্তে করে টাকাগুলো পকেটে ঢুকিয়ে রাখলো। এরপর অপরাধবোধ ও কৃতজ্ঞতায় সে হাটু ভাঁজ করে জমিনের উপর লুটিয়ে পড়লো।

কান্নাভেজা চোখে আকাশের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে বলতে লাগলো, ‘হে প্রভু! হাজার শোকর তোমার! তুমিই তো জানো আমার স্ত্রী অসুস্থ আর সন্তানগুলো ক্ষুধার্ত। ঘরে কোনো খাবারের ব্যাবস্থাও নেই। তুমি আমাকে আমার স্ত্রীকে ও আমার সন্তানদের খুশী করতে এই টাকা পাঠিয়েছো!’

আল্লাহর পক্ষ থেকে এমন করুণার প্রাপ্তি স্বীকার করে সে আকাশের দিকে তাকিয়ে কেঁদেই চললো। কৃষকের আচরণ দেখে ছাত্রটি খুব অভিভূত হলো এবং অজান্তেই তার চোখ দু’টো  ভিজে উঠলো।

উস্তাদ প্রশ্ন করে বললেন, জুতা লুকিয়ে রাখার চেয়ে, নিজেকে কী এখন বেশি সৌভাগ্যবান মনে হচ্ছে না?

ছাত্রটি কৃতজ্ঞতা ভরে বললো, 
: গুরুজি! আমি আজ এমন এক শিক্ষা পেলাম-যা আমরণ ভুলবো না। এমন কিছু অর্জন করেছি যা আমার অজানা ছিলো। আমি বুঝতে পেরেছি ‘গ্রহণ করার চেয়ে দানের মাঝেই অধিক তৃপ্তি।’

এবার উস্তাদজি তার ছাত্রকে উদ্দেশ্য করে বললেন, বাপু! দান অনেক প্রকারের হয়ে থাকে। যেমন :
- প্রতিশোধ গ্রহণে সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও ক্ষমা করে দেয়া।
- অপর ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে তার জন্য কল্যাণের দোয়া করা।
- কাউকে মা’জুর মনে করে তার ব্যাপারে খারাপ ধারণা সরিয়ে নেয়া।
- কারো অনুপস্থিতিতে তার সম্পদের হেফাযত করা।
- মুসলমান ভাইয়ের সাথে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করা।
- অসুস্থদের সেবা করা। ইত্যাদি।

ছাত্রটি তন্ময় হয়ে উস্তাদের দিকে চেয়ে থাকলো।

- সংগৃহীত
এসএ/


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি