মধুসূদনের স্মৃতিবিজড়িত সাগরদাঁড়ি
প্রকাশিত : ১১:০৬, ২৯ জুন ২০২১
ভ্রমণের কথা মাথায় এলেই চোখে ভেসে উঠে ঝর্ণা, সাগর, পাহাড়, বিশাল লেক, চা বাগান, হাওড় কিংবা গহীন অরণ্যের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য। এ চিত্তাকর্ষক দৃশ্যের সঙ্গে যদি যোগ হয় ঐতিহাসিক কোনো ব্যক্তির নাম, তার শৈশব কাটানো পথঘাট, বসতবাড়ি ও তার কর্ম জীবনের নিদর্শন, তবে তো কথাই নেই। ভ্রমনটা হয়ে উঠে আরও চিত্তাকর্ষক। যা মনকে করে প্রফুল্ল আর জ্ঞানের জগতকে করে প্রসারিত। মনের খোরাক আর জ্ঞানের পিপাসা মেটাতে ভ্রমণটা তাই হতে পারে যশোরের কেশবপুরের সাগরদাঁড়ি গ্রাম। যে গ্রামের নাম লেখা হয়েছে বইয়ের পাতায়। যে স্থানে জন্মেছিলেন বাংলা সাহিত্যে অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক মাইকেল মধুসূদন দত্ত।
মাইকেলের সাগরদাঁড়ির কথা মনে করতেই প্রথমে আসে কপোতাক্ষ নদ। কারণ সরাসরি বঙ্গোপসাগরে সংযোগ থাকা এ নদের কূলেই কবির বাড়ি। বাবার সঙ্গে রাগ করে কবি দেশ ছাড়ার পর পুনরায় যে নদের ঘাটে এসে নৌকা ভিড়িয়েছিলেন, সেই নদ এই কপোতাক্ষ। নদের সেই স্মৃতিবিজড়িত ঘাট এখনো আছে। তবে কবির স্মৃতিবিজড়িত নদের সেই প্রবাহ আর নেই। নদের অধিকাংশই এখন মাছ চাষ প্রকল্প। দখলদারদের গ্রাসে নদ তার ঐতিহ্য হারালেও সরকারের বিশেষ উদ্যোগে সংরক্ষিত আছে কবির বাড়ি। মধুসূদনকে ঘিরে এখানে নির্মিত হয়েছে জেলা পরিষদের ডাকবাংলো, সাগদাঁড়ি পর্যটন কেন্দ্র, মধুসূদন মিউজিয়াম। এছাড়া কপোতাক্ষের পাশে কবির স্মৃতি বিজড়িত কাঠবাদাম গাছ ও বিদায় ঘাট পর্যটকদের আকর্ষণ করে চলেছে নিরন্তর।
কথিত আছে ১৮৬৮ সালে কবি যখন সপরিবারে সাগরদাঁড়ি এসেছিলেন তখন ধর্মান্তরিত হওয়ার কারণে জ্ঞাতিরা তাকে বাড়িতে উঠতে দেয়নি। তিনি এ কাঠ বাদাম গাছের নিচে তাঁবু খাটিয়ে ১৪ দিন অবস্থান করেন, পরে বিফল মনে কপোতাক্ষের তীর ধরে হেটে বিদায় ঘাট হতে কলকাতার উদ্দেশে বজরায় উঠেছিলেন। ১৯৬৫ সালে ২৬ অক্টোবর তদানীন্তন সরকার বাড়িটি পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা করে। মধুসূদনের পরিবারের ব্যবহার্য কিছু আসবাব ও অন্যান্য স্মৃতিচিহ্ন নিয়ে এ বাড়িতেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মধুসূদন যাদুঘর। স্থাপিত হয়েছে লাইব্রেরী। আগামীতে একটি মাইকেল গবেষণাগারও নির্মানের পরিকল্পনা এগিয়ে চলছে। তবে গবেষণাগার নির্মাণের কাজটি এখনও সরকারের দাপ্তরিক পর্যায়ে আছে।
সাগরদাঁড়ির তত্ত্বাবধায়ক মহিদুল ইসলাম বলেন, মাইকেলের সাগরদাঁড়ি ইতিহাসের অন্যতম অধ্যায়। এখানে বছরের সবসময়ই দেশী-বিদেশী পর্যটকরা আসেন। তাদের থাকার জন্য এখানে রয়েছে একটি মোটেল। পর্যটকদের এখানে থাকার ব্যবস্থা করা হয়। তবে এখানে পর্যটক নির্বিঘ্নে আসার জন্য রাস্তা-ঘাট আরও উন্নত করা দরকার। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নজরে নিলে এখানে পর্যটক আরও বেড়ে যাবে। তাতে সরকারের রাজস্ব বাড়বে। কারণ এটি প্রত্মতত্ত্ব অধিদফতরের অধীন।
তিনি জানান, মাইকেল মধুসূদন দত্তের বাড়িতে প্রতিবছর ১৫-২০ হাজার পর্যটক আসেন। এতে বার্ষিক ৬-৭ লাখ টাকার রাজস্ব আয় হয়। তবে এটি আশানুরূপ নয়। যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ জনবল সংকটে আশানুরূপ দর্শনার্থী হচ্ছে না। তিনি জানান, এখানে একজন কাস্টডিয়ান, দুজন সাইট অ্যাটেন্ডেন্ট, ১ জন প্রহরী, ১ জন নৈশ প্রহরী, ৬ জন সাধারণ শ্রমিক কর্মরত রয়েছে।
স্বপ্নের গ্রাম
যশোর শহর থেকে কেশবপুর হয়ে সাগরদাঁড়ি যাওয়ার পিচঢালা সরু পথ, দুই পাশে খেজুরগাছের সারি, গাছের ফাঁক দিয়ে ডানে-বামে তাকালে দেখা যাবে খোলা মাঠ। যা মৌসুমের শুরুতে প্রস্তুত করা হচ্ছে আবাদের জন্য। অথবা মৌসুমের শেষ পর্যায়ে চলছে ফসল কাটার ধূম। শীত মৌসুমে দেখা যাবে সরষে ফুলে মৌমাছিদের আনাগোনা। তার মাঝে হঠাৎ চোখে পড়তে পারে দূরের কোনো বড় আইল দিয়ে দুষ্টু ছেলেদের সাইকেল রেস। অনাবিল এই প্রকৃতির রূপ দেখতে দেখতে কখন কবির বাড়ি গিয়ে পৌঁছবেন সেটা বুঝে উঠতেও পারবেন না। সাগরদাঁড়ি গ্রামের বিখ্যাত দত্ত পরিবারের উঠোনে দাঁড়িয়ে যখন ভাববেন, এখানেই ১৮২৪ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন আধুনিক বাংলা সাহিত্যের জনক। তখনই মনে বইতে থাকবে আনন্দের হিল্লোড়। মুহূর্তেই শরীরে সৃষ্টি হবে এক ধরণের শিহরণ।কারণ এই জমিদারবাড়িতে কাটে কবি মধুসূদনের শৈশব। বর্তমানে বাড়িটির চার পাশে রয়েছে অসংখ্য আম-কাঁঠাল গাছসহ নানাবিধ বনোজ বৃক্ষ। বৃক্ষের আবরণ ভেদ করে সূর্যের আলো এখানে নামতে পারে না। একান্ত নিরিবিলি ছায়াময় এ পরিবেশে হরেক রকমের পাখির কলতানে মন কখন যে হারিয়ে যাবে বুঝে ওটাও কঠিন হতে পারে। এছাড়া শানবাঁধা পুকুরের পাড় ঘেষে বিভিন্ন গুল্ম ও পাতাবাহারী ফুলের দৃশ্য বিমোহিত করতে পারে পর্যটকদের। কবির কাচারী ঘর ও এর আশপাশের পাতাবাহারী ফুল গাছের সমাহার পরিবেশকে করেছে দৃষ্টিনন্দন। যেখানে ঘুরে বেড়ানোর মধ্যেই কাটতে পারে দারুণ সময়। ঘুরে ঘুরে দেখা যাবে কবির দাঁড়িয়ে থাকা ইতিহাসের সাক্ষী স্মৃতির চিহ্নগুলো। তবে প্রতিবছর জানুয়ারীর শেষ সপ্তাহে যে মধুমেলা অয়োজন করা হয়। সে মেলা উপলক্ষ্যে সাগরদাঁড়িতে লোকসমাগম হয় অনেক বেশি। দর্শনার্থীর ভিড়ে কবির স্মৃতিবিজড়িত সব এলাকা ঘুরে দেখা সব সময় সম্ভব নাও হয়ে উঠতে পারে। তখন ভ্রমণটাও অসম্পূর্ণ বা অতৃপ্ত হতে পারে। তাই একটু বেশি ঘুরতে বা দেখতে ভ্রমণটা অর্থপূর্ণ করতে মেলা ছাড়া বছরের অন্য সময়ে ভ্রমনটা হতে পারে সঠিক সিদ্ধান্ত।
জমিদারবাড়ি ও যাদুঘর
জমিদারবাড়ির সামনে রয়েছে কবি মধুসূদন দত্তের দু’টি আবক্ষ মূর্তি। এই বাড়ির ভেতর খোলা হয়েছে জাদুঘর। সেখানে মধুসূদনের পরিবারের ব্যবহৃত খাট, পালঙ্ক, আলনা গচ্ছিত করে রাখা হয়েছে। বাড়িটির চার পাশ পাঁচিল দিয়ে ঘেরা। বাড়ির পশ্চিম পাশে বিশাল আকৃতির পুকুর। পুকুরের যে ঘাটে বসে কবি মধুসূদন স্নান করতেন সেই পাকা ঘাটটি আজও কালের সাক্ষী হয়ে আছে।
কবির বাড়ি এখন প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের অধীনে রয়েছে। পর্যটন শিল্প বিকাশের লক্ষ্যে কবির জন্মস্থান সাগরদাঁড়িকে মধুপল্লী ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ সরকার। প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরে যাওয়ার পর রাজবাড়িটি পুনঃসংস্কার করা হয়। কবিকে স্মরণ করতে তার জন্মভূমি সাগরদাঁড়িতে প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে প্রতি বছর ২৫ জানুয়ারি থেকে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে ৭ দিনব্যাপী বসে মধূমেলা।
কাঠবাদাম গাছ
জমিদার বাড়ির ভেতরেই রয়েছে শানবাঁধা পুকুর। পুকুরের দক্ষিণ পাশে রয়েছে কবির স্মৃতিবিজড়িত কাঠবাদাম গাছ। কবি ছোটবেলায় এই গাছের গোড়ায় বসে কবিতা লিখতেন।
তবে কাঠবাদামগাছটি এখন মৃতপ্রায়। যত্নের কিছুটা অভাব আছে বলে মনে হলো। দর্শনার্থী ফুয়াদ আব্দুল্লাহ বলেন, শুধু কাঁঠবাদাম গাছ নয়, কয়েকটি আমগাছও মরে যাওয়ার অবস্থা। তিনি বলেন, কাঠবাদাম গাছের গোড়ার ইটের গাঁথুনি খুলে বন বিভাগ অথবা কৃষি অধিদফতরের আওতায় এনে গাছের পরিচর্যা করা হলে মধুস্মৃতি জড়িত গাছটাকে আরও কয়েক বছর বাঁচিয়ে রাখা যেত।
কবির স্মৃতিবিজড়িত বিদায় ঘাট
১৮৩০ সালে মধুসূদন সাগরদাঁড়ি ছেড়ে কলকাতা খিদিরপুর যান। তারপর দীর্ঘ পথচলা। কিন্তু ভোলেননি তার জন্মস্থানের কথা, কপোতাক্ষ নদের কথা। মায়ের অসুস্থতার খবর পেয়ে ১৮৬২ সালে কবি স্ত্রী-ছেলে-মেয়েকে নিয়ে নদী পথে বেড়াতে আসেন সাগরদাঁড়িতে। কিন্তু মায়ের দেখা পাননি। দাম্ভিক পিতার ধর্ম ও কুসংস্কার নাস্তিক ছেলেকে মায়ের সঙ্গে দেখা করতে দেয়নি। তখন তিনি চলে যান মামার বাড়ি পাইকগাছার কাঠিপাড়া গ্রামে। মামা বংশধর ঘোষের বাড়ি তিনি আপ্যায়ন পান। সেখান থেকে তিনি মায়ের সঙ্গে দেখা করার জন্য কপোতাক্ষ নদের পাড়ে তাঁবুতে কয়েক দিন অপেক্ষা করে আবার কলকাতায় চলে যান। এরপর তিনি আর দেশে ফেরেননি। যে ঘাট থেকে তিনি এ শেষ বিদায় নিয়েছেন তা আজও ইতিহাসে বিদায় ঘাট নামে পরিচিত। কবির এই স্মৃতিবিজড়িত বিদায় ঘাট সংস্কারের মাধ্যমে আধুনিকায়ন করা হয়েছে।
ত্রিগম্বুজ জামে মসজিদ
সাগরদাঁড়ি থেকে মাত্র এক কিলোমিটার উত্তর দিকে শেখপুরা গ্রামে অবস্থিত ত্রিগম্বুজ জামে মসজিদ। মসজিদটি মুঘল আমলে নির্মিত। এই মসজিদের তৎকালীন ইমাম ফার্সি পণ্ডিত খন্দকার মখমল আহম্মেদের কাছে মধুসূদন শৈশবে বাংলা ও ফার্সি শিক্ষালাভ করেন। এই মসজিদ সংস্কারের অভাবে জরাজীর্ণ হয়ে পড়লে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের আওতায় সংস্কার করা হয়। মসজিদটি দেখলেই কবির শৈশবস্মৃতি মনে পড়ে যায়।
কীভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে সড়ক, রেল ও আকাশপথে যাওয়া যায় যশোর। ঢাকার গাবতলী,কল্যাণপুর ও কলাবাগান থেকে গ্রিনলাইন পরিবহন, সোহাগ পরিবহন, ঈগল পরিবহন, শ্যামলী পরিবহনের এসি-ননএসি বাস যশোর যায়। ভাড়া ৭০০ থেকে ১২০০টাকা।
ঢাকা কমলাপুর থেকে সপ্তাহে শনিবার ছাড়া রোজ ভোর ৬টা ২০ মিনিটে থেকে আন্ত:নগর সুন্দরবন ট্রেন এক্সপ্রেস এবং সোমবার ছাড়া রোজ সন্ধ্যা ৭টায় আন্ত:নগর ট্রেন চিত্রা এক্সপ্রেস যশোরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ভাড়া শোভন ৩৫০টাকা, শোভন চেয়ার ৪২০টাকা, প্রথম শ্রেণী চেয়ার ৫৬০টাকা, প্রথম শ্রেণী বার্থ ৮৪০টাকা।স্নিগ্ধা শ্রেণী (এসি চেয়ার)৭০০টাকা, এসি বার্থ ১২৬০টাকা।
এছাড়া ঢাকা থেকে ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স, রিজেন্ট এয়ারলাইন্স ও নভোএয়ারের বিমান নিয়মিত যশোর চলাচল করে। যশোর বাস টার্মিনাল থেকে বাসে করে যেতে হবে কেশবপুর। ভাড়া ৩৫ টাকা। সেখান থেকে ব্যাটারী চালিত রিক্সায় যেতে হবে সাগরদাঁড়ি। ভাড়া ৭০ থেকে ১০০টাকা।
সময়সূচী
এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর-প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এবং অক্টোবর থেকে মার্চ প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে মধুপল্লী। শুক্রবার সাড়ে ১২টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত বিরতি। মধূপল্লীর সাপ্তাহিক ছুটি রোববার। এছাড়া অন্যান্য সরকারি ছুটির দিনও বন্ধ থাকে।
কোথায় থাকবেন
সাগরদাঁড়িতে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের একটি মোটেল আছে। ভাড়া ৬০০ থেকে ১২০০টাকা। এছাড়া একদিনেই ভ্রমণ শেষ করতে পারলে ৪৫ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে আসা যেতে পারে যশোর জেলা শহরে। আর এ শহরেই আছে ছোট-বড় অনেক আবাসিক হোটেল। যেখানে রাতযাপনটা হতে পারে আরামদায়ক।
টিকেট মূল্য
মধুপল্লীতে প্রবেশমূল্য দেশী পর্যটক ১০টাকা এবং বিদেশী পর্যটকদের জন্য ১০০টাকা। এছাড়া পার্কিংয়ের জন্য বাস ১০০ টাকা, মাইক্রোবাস ও জ্বীপ ২০ টাকা, মোটরসাইকেল ১০টাকা।
দরকার সংস্কার
সাগরদাঁড়ির প্রহরীর দায়িত্বে থাকা হারুন অর রশিদ বলেন, শীতের সময় লোকজন বেশি আসে। অন্য সময় লোক খুব কম আসে। লোকজন এসে হতাশা প্রকাশ করেন। স্থাপনাগুলো সংস্কার করলে আরও ভাল হয়। মিউজিয়াম অ্যাটেন্ডেন্ট নাজমা আক্তার বলেন, মিউজিয়ামের জিনিসপত্র সংরক্ষণ করা হয়েছে। এটা আরও আধুনিক উপায়ে সংরক্ষণ করলে ভাল হয়। পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য প্রাচীন ভবনগুলো সংস্কার করা প্রয়োজন। প্রাচীর নির্মাণ করতে হবে। এছাড়া জনবল বৃদ্ধি করা দরকার।
কয়েক বছর ধরে সাগরদাঁড়িতে একটি সাংস্কৃতিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি উঠেছে। কিন্তু প্রাচীন স্থাপনা ও নিদর্শনের ইতিহাস ঐতিহ্যকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার কোন প্রচেষ্টা নেই। বছরের একবার মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মদিন ঘিরে থাকে যত আয়োজন। এরপর সারাবছর আর মনে থাকে না। ফলে মধুসূদনের সাগরদাঁড়ি সম্পর্কে মানুষের কাছে তেমন কোনো বার্তা যাচ্ছে না। দত্তবাড়ির ইতিহাস তুলে ধরার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া জরুরী।
শান্তি নিকেতনের আদলে বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবি
জানতে চাইলে সাগরদাঁড়িতে ঘুরতে আসা পার্শবর্তী গ্রামের সরকারি চাকরিজীবী আরিফা জামান বলেন, মাইকেল মধুসূদনের জন্ম সাগরদাঁড়িতে। কিন্তু জীবনের বেশিরভাগ সময়ে কেটেছে ভারত ও ফ্রান্সে। শান্তি নিকেতনের আদলে সাগরদাঁড়িতে মধুসূদন সংস্কৃতি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে তাকে তুলে ধরা সম্ভব। এতে দেশ বিদেশের সাহিত্য ও সংস্কৃতিপ্রেমীদের মিলনমেলায় পরিণত হবে সাগরদাঁড়ি। এজন্য আমারা সাগরদাঁড়িতে সংস্কৃতি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানাই।
সাগরদাঁড়ির তত্বাবধায়ক মহিদুল ইসলাম বলেন, সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে মাইকেল মধুসূদনকে আমরা মানুষের কাছে নিয়ে যেতে পারি। সংস্কৃতি চর্চার অংশ হিসেবে মাইকেল মধুসূদন দত্তের যাত্রাপালা এখনও শীর্ষে রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, মাইকেল মধুসূদন দত্তের বাড়িটি প্রত্মতত্ত্ব অধিদপ্তর সংরক্ষণ করছে।প্রাচীন স্থাপত্য ও নিদর্শনগুলো ক্রমে ক্ষয়ে যাচ্ছে।এটি সংস্কার ও নান্দনিক করে তুলতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এমএম দত্তবাড়ির প্রাচীন ভবন, কাচারী বাড়ি, বসতবাড়ি সংস্কার ও সংরক্ষণ এবং প্রাচীর নির্মাণের জন্য সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে প্রকল্প প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। এই প্রকল্প পাশ হলে পর্যটকদের কাছে আরও আকর্ষণীয় হবে দত্তবাড়ি।
এসএ/
আরও পড়ুন