ঢাকা, রবিবার   ০১ ডিসেম্বর ২০২৪

মনছবি করবেন যেভাবে

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৬:১৩, ১৯ মার্চ ২০২১

পাখি যেমন তার গন্তব্যে পৌঁছায় ডানায় ভর করে, আপনিও সাফল্যের শিখরে পৌঁছবেন মনছবির ডানা মেলে দিয়ে। এখন বলবেন কীভাবে? খুব সহজ নিজে নিজেই মনছবি তৈরি করুন। কী করতে চান, কোথায় যেতে চান বা নিজেকে কোথায় দেখতে চান ঠিক করুন। তারপর সময়ের গুরুত্ব দিয়ে সে অনুযায়ী কাজ করতে থাকেন। মনে রাখতে হবে কঠোর পরিশ্রম ছাড়া এমনি এমনি মনছবি বাস্তবায়ন হবে না।

সন্দেহ নেই, মনের শক্তি অসীম। তবে এ শক্তিকে কাজে লাগাতে হলে প্রথমত প্রয়োজন এ শক্তির ওপর বিশ্বাস, অর্থাৎ আত্মবিশ্বাস। ‘আমি পারি, আমি পারব’ এ বিশ্বাস যে সাফল্যের জন্যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ যুগে যুগে মানুষ নিজের শক্তির ওপর বিশ্বাসই ইতিহাস সৃষ্টি করেছে, ইতিহাসকে পাল্টে দিয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলেন, আমি পারব, এই দৃঢ় বিশ্বাসই সকল সাফল্যের ভিত্তি। তারা মনে করেন, 'পারব বলে বিশ্বাস করলে আপনি অবশ্যই পারবেন।' পৃথিবীর অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিরাই সাধারণ ঘর থেকে এসে অসাধারণ হয়ে উঠেন শুধু অধ্যবসায় আর নিজের মনের জোড়ে।

১৯০৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর বেলা ১০টা। পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বাতাসের চেয়ে ভারী শক্তিচালিত এক যান নিয়ে মানুষ সফলভাবে আকাশে উড়ল, হাজার বছর ধরে যা ছিল শুধু এক অসম্ভব কল্পনা। আর তা করলেন দুভাই- উইলবার রাইট এবং অরভিল রাইট। মজার ব্যাপার হলো, তারা কেউ কিন্তু কোনো বিজ্ঞানী ছিলেন না। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অংক, পদার্থবিজ্ঞান বা এরোনটিকেল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে তাদের কোনো উচ্চতর ডিগ্রি ছিল না, এমনকি হাইস্কুলের গণ্ডিও তারা পেরোন নি। ডেটনের দুজন বাইসাইকেল মিস্ত্রি কি করে এই অসম্ভবকে সম্ভব করলেন? এককথায় তার উত্তর মনছবি।

ছোটবেলায় বাবার এনে দেয়া একটি উড়ন্ত খেলনা থেকেই দুভাইয়ের মাথায় প্রথম উড়ে যাওয়ার চিন্তা জাগে। তারপর বছরের পর বছর ধরে গবেষণা, চেষ্টা, ব্যর্থতার পর তারা লাভ করেন এ সাফল্য। অনুভব করার চেষ্টা করেন কত সাধারণ একটি ভাবনা থেকেই না এ বাস্তবতার শুরু হয়েছিল। কারণ মন যা ভাবতে পারে, যা বিশ্বাস করতে পারে; মন পারে তা অর্জন করতেও। এখানেই মনছবির শক্তি।

আপনি কি ঠিক করেছেন আপনি কী হবেন? আগামী পরীক্ষায় আপনি কত নম্বর পেতে চান? এইচএসসি’র পর ভর্তি হবেন কোথায় তা কি ভেবেছেন? অথবা শতভাগ বৃত্তি নিয়ে বিশ্বের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যেতে চান? কোন রকম সংশয় নিয়ে নয়, মনছবি দেখতে হবে বিশ্বাসের সাথে। মনে রাখতে হবে মনছবি সফল করতে প্রয়োজন মনোশক্তির যথাযথ ব্যবহার। মনই কাঙ্খিত লক্ষে নিয়ে যাবে। অখণ্ড মনোযোগ এবং সময়কে কাজে লাগিয়ে যে কেউ সাফল্য বা নির্ধারিত লক্ষে পৌঁছে যেতে পারে। মনছবি তরুণ বয়সেই করাই ভালো।

সময়ের ব্যাপারে সার্বজনীন মূলনীতি হচ্ছে প্রতিদিন আমাদের প্রত্যেকের জন্যেই সমপরিমাণ ঘণ্টা ও মিনিট বরাদ্দ রয়েছে। এই ঘণ্টা ও মিনিটগুলোকে আপনি জমা রাখতে পারবেন না, অন্য কারো সাথে বিনিময়ও করতে পারবেন না। সময় অত্যন্ত মূল্যবান। কিন্তু এ মূল্যের সাথে টাকা-পয়সার মূল্যের পার্থক্য রয়েছে। টাকা-পয়সা সঞ্চয় করা যায়, ধার দেয়া যায়। প্রয়োজনে ধার নেয়া যায়। কিন্তু সময় ধারও দেয়া যায় না, ধার নেয়াও যায় না। যে সময় চলে গেল তা আর কখনও ফেরত আসে না। সময় আর অর্থের ব্যাপারে একটি মৌলিক সত্য হলো দুটোই আমাদের খুব বেশি প্রয়োজন। এত বেশি প্রয়োজন যে সে চাহিদা সহজে পূরণ হওয়ার নয়। মনে রাখতে হবে, যে সময়ে আপনি যে কাজটি করেন, সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে মনোযোগী হয়ে কাজটি করতে হবে।

ড. বি আর আম্বেদকর। জন্ম ১৯ শতকের শেষভাগে ব্রিটিশ ভারতের মধ্যপ্রদেশে এক দলিত পরিবারের ১৪ নম্বর সন্তান হিসেবে। অস্পৃশ্য হওয়ায় স্কুলে তাকে বসতে হতো ক্লাসের বাইরে বারান্দায়। এমনকি তেষ্টা পেলে স্কুলের উচ্চবর্ণের দপ্তরীটি ছোঁয়া বাঁচিয়ে ওপর থেকে পানি ঢেলে না দেয়া পর্যন্ত পানি খাওয়ার অনুমতিটুকুও ছিল না তার। এন্ট্রান্স পরীক্ষা দিতে ১৯ মাইল দূরের পরীক্ষা কেন্দ্রে যাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু মাঝপথে গাড়োয়ান তাকে গরুর গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়েছিল অস্পৃশ্য হয়ে গাড়িতে ওঠার অপরাধে।

এতকিছুর পরও হার মানেন নি। দারিদ্র্য আর রোগ-শোকের বিরুদ্ধে লড়াই করে বেঁচে যাওয়া মাত্র পাঁচ ভাইবোনের একজন ছিলেন তিনি এবং একমাত্র তিনিই পেরোন হাইস্কুলের গণ্ডি। ভারতের ইতিহাসে তিনিই প্রথম দলিত সম্প্রদায়ের সদস্য, যিনি কলেজে ভর্তি হন। পরবর্তীতে কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি ও লন্ডন স্কুল অব ইকনমিক্স থেকে আইন ও অর্থনীতিতে উচ্চতর ডিগ্রিসহ অর্জন করেন কয়েকটি ডক্টরেট।

দেশে ফিরে একজন প্রতিষ্ঠিত আইনজীবীর পাশাপাশি তিনি হয়ে ওঠেন সমকালীন রাজনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। দলিত সম্প্রদায়ের অধিকার রক্ষার আন্দোলনে জীবনকে উৎসর্গ করেন। স্বাধীন ভারতের সংবিধান প্রণয়নের গুরুদায়িত্ব পালন করেন উদার মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে, যা অর্জন করে সবার সপ্রশংস সমর্থন।

বাবা আম্বেদকর নামে ভারতবর্ষে তিনি হয়ে ওঠেন সর্বজনশ্রদ্ধেয়। প্রতিবছর তার জন্ম ও মৃত্যুদিবসে হাজারো মানুষ সমবেত হয় তার স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাবার উদ্দেশ্যে। বাবা আম্বেদকর যদি পারেন, তাহলে আপনিও পারবেন।


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি