মন : শক্তিরহস্য
প্রকাশিত : ১৭:৫৬, ২০ জুন ২০২১ | আপডেট: ১৫:৪০, ২০ জুলাই ২০২১
মন কী? মনের শক্তির উৎস কোথায়? এককথায় এর জবাব দেয়া মুশকিল। কারণ মনকে ধরা যায় না, ছোঁয়া যায় না। আজ পর্যন্ত কোনো বিজ্ঞানী মনকে ধরতে বা ছুঁতে পারেন নি বা কোনো ল্যাবরেটরিতে টেস্ট টিউবে ভরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতে পারেন নি। তবে মনের কার্যপ্রণালী সম্পর্কে আদি যুগের সাধকরা যেমন সচেতন ছিলেন তেমনি বর্তমান যুগের বিজ্ঞানীরাও সচেতন।
হাজার বছরের পর্যবেক্ষণ-পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তারা একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন, তা হলো, মন মানুষের সকল শক্তির উৎস। মনের এই শক্তিরহস্যকে যথাযথভাবে উপলব্ধি করতে পারলেই এই শক্তিকে আমরা পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারব।
মনের শক্তিরহস্য উন্মোচনের আগে মানুষ সম্পর্কে আমাদের ধারণাটা একবার পর্যালোচনা করা দরকার। একসময় বিজ্ঞান মনে করত মানুষ হচ্ছে বস্তুর সমষ্টি যা কোনো না কোনোভাবে চিন্তা করতে শিখেছে। আর এখন বিজ্ঞান মনে করে মানুষ চেতনা বা তথ্যের সমষ্টি যাকে কেন্দ্র করে দেহ গঠিত হয়েছে। মানুষ সম্পর্কে বিজ্ঞানের ধারণা পরিবর্তনের মূলে রয়েছে জেনেটিক গবেষণায় অভাবনীয় অগ্রগতি। বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে সমস্ত প্রাণীর বিকাশের মূল নিহিত রয়েছে জেনেটিক কোড তথা ডিএনএ-তে (ডিএনএ=ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড)। প্রতিটি জীবকোষের কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে এই ডিএনএ। প্রাণের বিকাশ কীভাবে ঘটবে তার সবটাই লিপিবদ্ধ আছে এই ডিএনএ-তে। গাছপালা, পশু-পাখি, ব্যাকটেরিয়া-ভাইরাস, সবকিছুর প্রাণকেন্দ্র হচ্ছে ডিএনএ। মানবদেহের বিকাশের দিকে তাকালে আমরা দেখি যে, মাতৃগর্ভে একটি ডিম্ব এবং একটি শুক্রকীটের মিলনের পর ডিম্বের ডিএনএ ও শুক্রকীটের ডিএনএ মিলে সৃষ্টি হচ্ছে নতুন ডিএনএ। এই ডিএনএ কোডেই লিপিবদ্ধ হয়ে যাচ্ছে পর্যায়ক্রমে তা কীভাবে পূর্ণাঙ্গ মানব-শিশুতে পরিণত হবে এবং ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত কীভাবে শরীরের কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
ভাবলে অবাক হতে হয়, এই ডিএনএ নিজে নিজে ভাগ হয়ে ক্রমাগত জীবকোষের সংখ্যা বৃদ্ধি করছে, শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এমনকি ব্রেনের মতো জটিল অঙ্গ তৈরি করছে। পূর্ণাঙ্গ শিশুতে পরিণত হয়ে ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর দেহ-মনকে সর্বাঙ্গীণভাবে বিকশিত করে নিজে নিজেই নিজের সবকিছু পরিচালিত করছে। এককথায় ডিএনএ-কে বলা যায় প্রাণের ব্লু-প্রিন্ট।
ডিএনএ-কে ব্যাখ্যা করার জন্যে আমরা একটি গাড়িকে উদাহরণ হিসেবে ধরতে পারি। ধরুন আপনি বাজার থেকে একটি গাড়ির ব্লু-প্রিন্ট কিনে এনে গ্যারেজে রেখে দিলেন। এবার কল্পনা করুন, ব্লু-প্রিন্টটি নিজে নিজে আস্তে আস্তে গাড়ির ইঞ্জিন তৈরি করল, গাড়ির বডি তৈরি করল, সিট ও সিট কভার তৈরি করল, ড্রাইভিং প্যানেল, চাকা, উইন্ডশিল্ড ইত্যাদি তৈরি করে গাড়িতে রঙ স্প্রে করে চকচকে ঝকঝকে করে ফেলল। তারপর পেট্রোল ট্যাঙ্কি তৈরি করে পেট্রোল ভরে নিজে নিজেই চলা শুরু করল। এই ধারণা বুঝতে ও উপলব্ধি করতে পারলেই প্রাণের বিকাশে ডিএনএ-র ভূমিকা উপলব্ধি করা সম্ভব।
ডিএনএ-র গঠন সম্পর্কে সংক্ষেপে বলা যায়, এটি পর্যবেক্ষণ করতে ইলেক্ট্রন মাইক্রোস্কোপ-এর প্রয়োজন। দেখতে প্যাঁচানো সিঁড়ির মতো। নোবেল পুরস্কার বিজয়ী বিজ্ঞানী ও ডিএনএ বিশেষজ্ঞ ড. জন কেনড্রু বলেছেন, 'এটি জীবকোষের নিউক্লিয়াসে টেপের মতো প্যাঁচানো থাকে। ডিএনএ টেপকে সোজা করা হলে তা এক মিটার লম্বা হবে। মানবদেহে এই ডিএনএ-র কাজের সংখ্যা সাত লক্ষ। একটি সেলের ডিএনএ-তে যে তথ্য রয়েছে তাকে ভাষান্তর করে লিপিবদ্ধ করতে এক হাজার খণ্ড বিশ্বকোষ লাগবে।
লেখাটি কোয়ান্টাম মেথডের প্রবক্তা মহাজাতক এর মেডিটেশন বই থেকে সংগৃহীত
এসি
আরও পড়ুন