মহামারি মোকাবেলায় প্রয়োজন মানবিক উদ্যোগ
প্রকাশিত : ১৮:১৫, ২৭ জুলাই ২০২০ | আপডেট: ১৯:৩৮, ২৭ জুলাই ২০২০
বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস শুরু হওয়ার পর থেকে নানা সংকট শুরু হয়েছে। আমাদের দেশেও এর প্রভাব দেখা যাচ্ছে। এই খারাপ সময়ে প্রয়োজন একজনের প্রতি আরেকজনের হাতটি বাড়িয়ে দেওয়া। দুঃসময়কে একে অপরের মাঝে ভাগ করে নেওয়া। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি করোনার মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মচারীদের বেতন কমানো শুরু করেছে। তাদের যুক্তি ব্যবসা ভাল হচ্ছে না তাই বেতন দেওয়া সম্ভব নয়।
অনেকে আবার বেতনের কিছু অংশ কমানোর চিন্তা করছে। বাংলাদেশে করোনার সর্বোচ্চ সংক্রমনের এই সময়ে সিটি ব্যাংক তাদের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন ১৫ শতাংশ কর্তন করেছে। তাদের ব্যাংকের লাভের কথা চিন্তা করেই তারা এটি করেছে। তাদের সিইও ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক যুক্তি উপস্থাপন করে বলেছেন, আমরা টিকে থাকার জন্যই এটা করেছি। আরও জোরালোভাবে তিনি বললেন, বিশ্বের ফরচুন-৫০০ কোম্পানীর অনেকেই টিকে থাকার জন্য বেতন কর্তন করেছে।
তবে করোনার এই মহামারির সময়ে যতই ব্যবসা কম হোক, লাভ না আসুক। অধিকাংশ ব্যাংক তাদের কর্মীদের বেতন কমায়নি বা বন্ধ করেনি। তারা এই মহা দুর্যোগে তাদের কর্মীদের পাশে রয়েছে। এটাই আসলে মানবিকতা। দুঃসময়ে কর্মীদেরকে ছেড়ে না যাওয়া। তাদের চাকরিচ্যুত না করে খারাপ সময়, পাশে নিয়েই অতিক্রম করছে এটি অনেক বড় পাওয়া।
বাংলাদেশে করোনা রোগী প্রথম সনাক্ত হয় ০৮ মার্চ, ২০২০। পর্যায়ক্রমে অবস্থা যখন খারাপ হতে থাকলো তখন সরকার ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি (অনেকটা লক-ডাউনের মতো) ঘোষনা করলো। সারা বাংলাদেশের মানুষ আতংকগ্রস্থ হয়ে একরকম ঘরবন্দী জীবন যাপন করতে শুরু করলো। শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী ও ঔষধ কেনার জন্য মানুষ ঘরের বাহির হচ্ছিল, তাও অত্যন্ত সতর্ক ও ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে। বিভিন্ন গ্রামে করোনা রোগী পাওয়া গেলে, স্থানীয় জনগন লাল পতাকা টানিয়ে দিলো। করোনা রোগে আক্রান্ত পরিবারকে সমাজ একঘরে করে ফেললো অনেক জায়গায়। করোনা রোগে মৃত ব্যাক্তিকে দাফন করার লোকও পাওয়া গেলো না। আক্রান্ত বৃদ্ধ বাবা-মাকেও রাস্তায় ফেলে রেখে গেলো। এই যখন অবস্থা, তখন জনগনের সেবা করার জন্য জীবনের ঝুকি নিয়ে কিছু মানুষ কাজ করা শুরু করলো। তাদের মধ্যে ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ ও ব্যাংকাররা অন্যতম।
জীবন বাজী রেখে ওই সমস্ত করোনা যোদ্ধারা যখন যুদ্ধক্ষেত্রে কর্মরত, তখন অনেক বড় প্রতিষ্ঠান বেতন কর্তন করছে। এটা কতটুকু যুক্তিসঙ্গত তা নিয়ে বহু বিতর্ক হয়েছে এবং বিতর্ক করার সুযোগ আছে। কিন্তু বেশির ভাগ বিশেষজ্ঞ বলেছেন, যখন প্রয়োজন অনুপ্রেরণা তখন বেতন কর্তন এটা একপ্রকার অমানবিক এবং অবিবেচনা প্রসূত কার্যের নিদর্শন।
অনেকেই বলেন, বেসরকারী ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ ও অফিসারদের বেতন বেশি, কিন্তু সেটাতো অন্য একটি বিতর্ক। এর পক্ষে-বিপক্ষে অনেক যুক্তি উপস্থাপন করা যাবে। এই সংকটকালীন সময়ে তো এবিষয়ে আলোচনা করার কোন সুযোগ নেই।
যদি সমস্ত বেসরকারী ব্যাংকের নির্বাহী ও কর্মকর্তাদের বেতন কর্তন করা হয়, তবে তাদের জীবনযাপন পরিকল্পনা পরিবর্তন করতে হবে। বড় ভাড়া বাসা থেকে ছোট ভাড়া বাসায় যেতে হবে, ছেলে-মেয়ের হাউস টিউটরকে বিদায় দিতে হবে, কাজের বুয়াকে কোন কোন ক্ষেত্রে বিদায় করতে হবে, কম ভাগ্যবান নিকট আত্নীয়কে সাহায্য সহযোগীতা বন্ধ করতে হবে, কোন কোন ক্ষেত্রে বাবা-মার বাজেটেও হাত দিতে হবে- সার্বিকভাবে কিন্তু অর্থনীতিই ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
প্রান্তিক জনগনের কাছে যতটুকুই টাকা এদের মাধ্যমে যেত, সেই পথটুকুও অনেক সংকোচিত হবে। সবকিছু বিবেচনা করে- অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, বেতন কর্তনের উপযুক্ত সময় এটা নয়- আরও সময় নিয়ে টিকে থাকার জন্য যুদ্ধ করে পরাস্ত হলে তখন এই ধরনের চিন্তা করা যায়। এটা যেন যুদ্ধে যাওয়ার আগেই হেরে যাওয়া। এই সময় প্রয়োজন মানবিকতা। একে অন্যের পাশে দাঁড়ানো। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সমস্যার মোকাবেলা করা। অনেক প্রতিষ্ঠান কর্মীদের বেতন না কমিয়ে তাদের পাশে রয়েছে। সবাই যেন এই কাজটি করে। আর কর্মীদেরও উচিৎ প্রতিষ্ঠানকে সঠিক সময়টি দেওয়া। প্রয়োজনে বেশি সময় দিয়ে প্রতিষ্ঠানকে জীবিত রাখা। প্রতিষ্ঠান না বাঁচলে কর্মীরাও বাঁচবে না। এটি মনে রাখা। এখন মহামারি মোকাবেলায় সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হলো মানবিক উদ্যোগ গ্রহণ করা। কেউ কাউকে ছেড়ে না গিয়ে হাতে হাত রেখে মহামারি মোকাবেলা করা।
লেখক: গণমাধ্যম কর্মী
এসি
** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।