নীতিমালা যাচ্ছে মন্ত্রণালয়ে
মাংস উৎপাদনে স্বয়ংসম্পন্ন দেশ, রফতানির উদ্যোগ
প্রকাশিত : ১৯:২২, ২৮ আগস্ট ২০১৮ | আপডেট: ১৮:৫৭, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৮
দেশের চাহিদা মিটিয়ে এবার বিদেশেও রফতানি হবে বাংলাদেশের উৎপাদিত মাংস। রফতানিকে সহজতর ও কাঠামোগত প্রক্রিয়ায় নিতে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর এরই মধ্যে তৈরি করেছে এর খসড়া নীতিমালা। সংশ্লিষ্টদের মতামতের পর নীতিমালাটি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হীরেশ রঞ্জন ভৌমিক এ বিষয়ে বলেন, দেশ এখন মাংসে স্বয়ংসম্পন্ন। এখন আর আমাদের মাংস আমদানি করতে হয় না। তাই সরকার মাংস রফতানির উদ্যোগ নিচ্ছে। উদ্যোগের অংশ হিসেবে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর নীতিমালার খসড়া করেছে। খসড়া এ নীতিমালার উপর সংশ্লিষ্টদের মতামত নেওয়া হবে। এরপর তা অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, খসড়া নীতিমালায় মানসম্পন্ন উপায়ে নিয়মিত উৎপাদন বজায় রাখার উপর সর্বাধিক গরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এতে উৎপাদক, গ্রাহক ও ভোক্তারা ঝুঁকিতে না পড়ে সেদিকে নজর দেওয়া হয়েছে। এছাড়া পশু জবাইয়ের আধুনিক ব্যবস্থা, জবাইয়ের আগে ও পরে পরীক্ষা, দক্ষ জনবল ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও বলা হয়েছে।
মাংস ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক রবিউল আলম বলেন, মাংস রফতানিতে নীতিমালা প্রস্তুত সবার জন্য মঙ্গলজনক। দেশে যে হারে মাংস উৎপাদন হচ্ছে সে অনুযায়ী বিক্রি হচ্ছে না। ফলে অনেকেই মাংস উৎপাদনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। মাংস যদি বিদেশে রফতানি বাড়ে তবে গরু, পোল্ট্রি ও ছাগলের পালনকারীরা এর সঠিক সময়ে সহজেই পশুগুলো বিক্রির সুযোগ পাবে। তাতে তারা পশুর দামও বেশি পাবে এবং নতুন করে আরো পশু পালনে আগ্রহী হয়ে উঠবেন।ফলে মাংসের উৎপাদনও দেশে বেড়ে যাবে।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ পাঁচ বছর আগে থেকেই মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে মাংস রফতানি করে। বেঙ্গল মিটসহ ৫টি প্রতিষ্ঠান এ মাংসসহ গরুর বিভিন্ন অংশ রফতানি করে।এখন নীতিমালা হলে এ রফতানি আরো বহুগুণে বেড়ে যাবে। কেননা মুসলিম দেশ হিসেবে বাংলাদেশের মাংস হালাল এবং সুস্বাদু বলে একটি সুখ্যাতি আছে। তবে বাংলাদেশ মাংসে স্বয়ংসম্পূর্ণ এখনও হয়নি। এখনও চাহিদার ৫ শতাংশ আমরা পূরণ করতে পারছি না।
অভ্যন্তরীন চাহিদার ৫ শতাংশ ঘাটতি রেখে মাংস রফতানি হলে দেশে মাংসের দাম বেড়ে যাবে কি না এমন প্রশ্নে রবিউল আলম বলেন, রফতানি হলে মাংসের দাম মোটেও বাড়বে না। দাম কম রাখতে হলে মাংস ব্যবসায়ীদের চাঁদাবাজি থেকে মুক্তি দিতে হবে। কারণ চাঁদাবাজিসহ একটি গরুর জন্য মাংস ব্যবসায়ীকে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত গুণতে হয়।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে উৎপাদন হয়েছিল ৭১ লাখ ৫৫ হাজার টন। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দেশে ৭২ লাখ টন মাংস উৎপাদন হয়েছে। চলতি বছরে মাংসের উৎপাদন ৭৫ লাখ টন ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন সংশ্নিষ্টরা।
মাংসহ রফতানি প্রতিষ্ঠান বেঙ্গল মিটের পরিচালক আবদুস সালাম মুর্শেদী বলেন, মাংস রফতানি দেশের একটি সম্ভাবনাময় খাত। আমরা এরই মধ্যে মাংস রফতানি শুরু করেছি। আমাদের এ শুরু বা সম্ভাবনা এগিয়ে নিতে সরকারের মাংস রফতানি নীতিমালা খুবই সময় উপযোগি উদ্যোগ।
তবে একটি সম্ভাবনাময় খাতকে এগিয়ে নীতে সরকারের কিছু নীতিসহায়তার দরকার হয়।যেমন নীতিসহায়তা গার্মেন্টসসহ অন্য পণ্যের রফতানিতে আছে। মাংস ব্যবসা যেহেতু সম্পূর্ণ নগদ অর্থের উপর হয়। সেহেতু সরকারের উচিত হবে এ ক্ষেত্রে অর্থ সহায়তা দেওয়া।৫ শতাংশ সুদে ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করা।পাশাপাশি অন্য খাতের মতো প্রণোদনা রাখা।
বাংলাদেশের গরু ও ছাগলের মাংসের চাহিদা রয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। এর আগে ২০১৬ সালে সৌদি আরব বাংলাদেশ থেকে মাংস আমদানির আগ্রহ দেখায়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মালদ্বীপ, দুবাই, কুয়েত ও কোরিয়ায় মাংস রফতানি হয়। তবে বিভিন্ন ধরনের জটিলতা ও দেশে বেশি চাহিদার কারণে নিয়মিত রফতানি হচ্ছে না। বর্তমানে দেশে মুরগির মাংসের উৎপাদন দৈনিক প্রায় দুই হাজার টন। আর ছাগল উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে এখন চতুর্থ। দেশের ব্ল্যাকবেঙ্গল জাতের ছাগল বিশ্বের সেরা জাত হিসেবে স্বীকৃত।
আরকে// এআর