মাতা-পিতার হক সম্পর্কে কুরআন ও হাদীস
প্রকাশিত : ১৩:৩১, ১৮ মে ২০১৯
সন্তানের কাছে মাতা-পিতার প্রাপ্য অধিকারই তাদের হক। সৃষ্টি জগতে মানুষের প্রতি সর্বাধিক অনুগ্রহ প্রদর্শনকারী ব্যক্তি হচ্ছে মাতা-পিতা। তাই মাতা-পিতাই তার সর্বাপেক্ষা আপনজন। মাতা-পিতার প্রতিই সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য সর্বাধিক। সন্তানের জন্য অবধারিত মাতা-পিতার প্রতি অবশ্য পালনীয় এসব দায়িত্ব কর্তব্যই মাতা-পিতার হক রূপে আখ্যায়িত হয়।
মাতা-পিতার হক সম্পর্কে পবিত্র কুরআন শরীফে আল্লাহ বলেন : ‘আর তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর, তার সঙ্গে কোন বস্তুকে শরীক করো না এবং মাতা-পিতার প্রতি উত্তম আচরণ কর।’ (নিসা ৩৬)
‘আর তোমার প্রতিপালক এ আদেশ করেছেন যে, তোমরা তাঁকে ভিন্ন অপর কারো ইবাদত করো না। আর মাতা-পিতার প্রতি উত্তম আচরণ কর। যদি তাঁদের একজন কিংবা উভয়ে তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাঁদের উদ্দেশ্যে কখনো ‘উহ’ পর্যন্ত বলবে না। তাদেরকে ধমক দিও না, বরং তাদের সঙ্গে মার্জিত ভাষায় কথা বল। আর তাদের উদ্দেশ্যে অনুগ্রহে বিনয়ের বাহু অবনমিত কর। আর বল, হে আমার প্রতিপালক! তাদের উভয়কে অনুগ্রহ কর, যেমন তাঁরা আমাকে শৈশবে প্রতিপালন করেছেন।’ (বনী ইসরাঈল ২৩-২৪)
‘আর আমি মানুষকে তার মাতা-পিতা সম্পর্কে আদেশ করেছি। তার মাতা কষ্টের পর কষ্ট সহ্য করে তাকে গর্ভধারণ করেছেন। দুই বছর পর্যন্ত তাকে স্তন্য দান করেছেন। এ মর্মে যে, তোমরা আমার এবং তোমাদের মাতা-পিতার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। আমার দিকেই প্রত্যাবর্তন করতে হবে।’ (লোকমান ১৪)
‘আমি মানুষকে তার মাতা-পিতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছি। আর যদি তোমার মাতা-পিতা তোমাকে আমার সঙ্গে শিরক করার জন্য পীড়াপীড়ি করে, যে সম্পর্কে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তাহলে তুমি তাদের আনুগত্য করো না।’ (আনকাবুত ৮)
‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে মাতা-পিতা ও আমার গৃহে মুমিন হয়ে প্রবেশকারীদেরকে এবং সব ঈমানদার নর-নারীকে ক্ষমা করুন।’ (নূহ ২৮)
মাতা-পিতার হক সম্পর্কে হাদীস : হযরত আবু হোরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। নবী করীম (সা.) বলেছেন, তার নাক ধূলায় মলিন হোক, তার নাক ধূলায় মলিন হোক, তার নাক ধূলায় মলিন হোক। সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! সে হতভাগ্য ব্যক্তিটি কে? হুজুর (সা.) বললেন সে হলো সেই ব্যক্তি যে তার মাতা-পিতা উভয়কে অথবা কোন একজনকে বার্ধক্য অবস্থায় পেয়েও বেহেশতে যেতে পারল না। (মুসলিম)
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল হে আল্লাহর রাসূল (সা.)! আমার সর্বোত্তম ব্যবহারের হকদার কে? হুজুর (সা.) বললেন তোমার মা। লোকটি পুনরায় প্রশ্ন করল অতঃপর কে? হুজুর (সা.) বললেন তোমর মা। লোকটি আবার জিজ্ঞেস করল অতঃপর কে? হুজুর (সা.) এবার জবাব দিলেন তোমার মা। লোকটি পুনঃজিজ্ঞেস করল অতঃপর কে? এবারে নবী করীম (সা.)জওয়াব দিলেন যে, তোমার বাবা।’ (বুখারী, মুসলিম)
হযরত মুগীরা (রা.) হতে বর্ণিত নবী করীম (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা মায়েদের নাফরমানী করা, হকদারের হক না দেয়া এবং কন্যা সন্তানদের জীবন্ত কবর দেয়া, তোমাদের উপর হারাম করে দিয়েছেন। আর আল্লাহ তায়ালা তোমাদের জন্য গল্প-গুজবে মত্ত হওয়া, অতিরিক্ত সওয়াল করা এবং মাল-সম্পদ নষ্ট করাকে অপছন্দ করেছেন। (বুখারী)
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন এক ব্যক্তি তার মাতা-পিতাকে ক্রন্দনরত অবস্থায় ত্যাগ করে হিজরাতের উদ্দেশ্যে বায়াত করার জন্যে নবী করীম (সা.) এর খেদমতে এসে হাজির হয়। রাসূলুল্লাহ (সা.) তাকে বললেন ফিরে যাও তোমার মাতা-পিতার কাছে এবং তাদের খুশী করে এসো যেমনি তাদের কাঁদিয়ে এসেছিলে। (আদাবুল মুফরাদ)
(কুরআন ও হাদীস সঞ্চয়ন গ্রন্থ)
এএইচ/