মাদক মামলায় লোকমানকে দুই দিনের রিমান্ড
প্রকাশিত : ১৬:০৯, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | আপডেট: ১৬:১২, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯
মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব লিমিটেডের ডিরেক্টর ইনচার্জ ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক (বিসিবি) লোকমান হোসেন ভূঁইয়াকে দুইদিনের রিমান্ড দিয়েছেন আদালত। আজ শুক্রবার র্যাবের করা আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত এই রিমান্ডের আদেশ দেন।
এর আগে বুধবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে মনিপুর পাড়ায় বাসা থেকে তাকে আটক করা হয়। এ সময় তার বাসায় অভিযান চালিয়ে অবৈধ বিদেশি মদ উদ্ধার করা হয়।
র্যাব-২ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ সাংবাদিকদের জানান, লোকমান হোসেন ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। সে বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এর আগে রাজধানীর তেজগাঁও মণিপুরী পাড়ায় লোকমান হোসেনের বাসায় অভিযান শুরু করে র্যাব-২-এর একটি দল। পরে বাসা থেকে লোকমান হোসেনকে আটক করে র্যাব কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
অভিযোগ আছে, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবে বসানো ক্যাসিনো থেকে প্রতিদিন গড়ে ৭০ হাজার টাকা নিতেন ক্লাবটির ডিরেক্টর ইনচার্জ লোকমান হোসেন ভূঁইয়া। ক্যাসিনোটি পরিচালনা করতেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি)কাউন্সিলর এ কে এম মোমিনুল হক ওরফে সাঈদ কমিশনার।
র্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়, মোহামেডান ক্লাব পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে একটি রেজ্যুলেশন করে ক্যাসিনোর জন্য কক্ষ ভাড়া হিসেবে এই টাকা নেওয়া হতো। তবে ক্যাসিনো থেকে পাওয়া টাকার প্রায় পুরোটাই ভোগ করতেন লোকমান। ক্লাবটিতে মাদকদ্রব্য পাওয়া গেছে এবং ক্যাসিনো কেলেঙ্কারির জন্যই লোকমানকে আটক করা হয়।
র্যাব জানায়, কাউন্সিলর ও যুবলীগ নেতা এ কে এম মমিনুল হক সাঈদের নেতৃত্বেই মোহামেডান ক্লাবে চলত ক্যাসিনো ব্যবসা। ভারপ্রাপ্ত পরিচালক হিসেবে লোকমান সহায়তা করতেন তাকে। তাই সময়মতো পৌঁছে দেয়া হতো ক্যাসিনো থেকে অর্জিত টাকা।
জানা গেছে, লোকমান একসময় বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সদস্য হওয়ায় তাকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে তিনি মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের ডিরক্টের ইনচার্জ পদটিও দখল করে রেখেছেন। সরকারের এক প্রভাবশালী ব্যক্তির ছত্রছায়ায় তিনি নানা অপকর্ম করে বেড়াতেন বলে অভিযোগ আছে।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব কর্মকর্তারা জানান, লোকমানের বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থপাচারেরও অভিযোগ রয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার এএনজেড ও কমনওয়েলথ ব্যাংকে লোকমানের ৪১ কোটি টাকা গচ্ছিত রয়েছে বলে তারা তথ্য পেয়েছেন। এসব তথ্য যাচাই করা হচ্ছে।
র্যাব সদস্যদের ধারণা, ক্যাসিনো থেকে আয় করা অর্থ লোকমান নিয়মিত বিদেশে পাচার করতেন। লোকমানের পাশাপাশি মোহামেডান ক্লাব পরিচালনা কমিটির আর কেউ এতে জড়িত কিনা, তাও খতিয়ে দেখছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
রবিবার বিকালে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবে অভিযান চালায় ঢাকা মহানগর পুলিশের ডিএমপি মতিঝিল বিভাগ। ক্লাব থেকে ১৬টি ডিজিটাল ক্যাসিনো বোর্ড, তাস খেলার বিপুল পরিমাণ সামগ্রী, জুয়া খেলার সামগ্রী এবং মাদকদ্রব্য (মদ, সিসা) উদ্ধার করা হয়। এদিন মোহামেডান ছাড়াও ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাব, দিলকুশা ক্লাব ও আরামবাগ ক্লাবেও অভিযান চালানো হয়।
মোহামেডানে ক্যাসিনো চালাতেন ১৩ নেপালি। যাদের প্রত্যেকের ডলারে বেতন দেয়া হতো। মাসে যার পরিমাণ ছয় লাখেরও বেশি। জানা গেছে, এই ১৩ নেপালি নাগরিকের মাসিক ৬০০ ডলার (৫১ হাজার ৩০০ টাকা) থেকে শুরু করে ১ হাজার ডলার (৮৫ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত ছিল। প্রতিমাসে এই ১৩ নেপালি নাগরিককে ৬ লাখ ৪৯ হাজার ৮০০ টাকার বেতন দিত মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব কর্তৃপক্ষ।
টিআর/
আরও পড়ুন