ঢাকা, শনিবার   ২২ মার্চ ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

মানবজীবনের অলংকার শুদ্ধাচার

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:০৫, ১৯ মার্চ ২০২৪ | আপডেট: ১০:৩৯, ১৯ মার্চ ২০২৪

Ekushey Television Ltd.

শুদ্ধাচার ও শিষ্টাচার মানবজীবনের অলংকার। শুদ্ধাচার বেশ রাশভারী একটি শব্দ। শুদ্ধ ও আচার শব্দের সমন্বয়ে সৃষ্টি শুদ্ধাচার শব্দের। এর অর্থ চরিত্রনিষ্ঠা। সাধারণত ‘নৈতিকতা ও সততা’ দ্বারা প্রভাবিত আচরণ ও উৎকর্ষ সাধনকে শুদ্ধাচার বলা হয়। 

শুদ্ধ বলতে সহজ ভাষায় বুঝি পবিত্র, সাধু, খাঁটি, পরিষ্কার, শোধিত, নিষ্কলুষ, নিষ্কণ্টক, নির্ভুল ও নির্দোষ ইত্যাদি। একজন মানুষের চরিত্রের বৈশিষ্ট্য প্রকাশের জন্য যখন সমাজ এই অভিধাগুলোর ব্যবহার ও প্রয়োগ করে, তখনই সেই মানুষ ‘শুদ্ধ মানুষ’ হিসেবে গণ্য হন। এ জন্য সত্য, সুন্দর ও কল্যাণকর, নৈতিক আদর্শকে চরিত্রে ধারণ ও বাস্তবে রূপায়ণ করতে হয়। ব্যক্তি ও পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণ জীবন ধারণের জন্য ভালো আচরণ, ভালো রীতিনীতি, ভালো অভ্যাস রপ্ত ও পরিপালন করা অত্যাবশ্যক।

শুদ্ধাচারের বিপরীত গর্ব, অহমিকা, দুরাচার কলঙ্ক ও অন্ধকার। এর সবগুলোই মানুষের মন্দ বৈশিষ্ট্য হিসেবে পরিচিত। এ প্রসঙ্গে হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা আমল করে নাও এসবের আগেই। ওই দারিদ্র্য, যা আত্মবিস্মৃৃত করে দেয়, ওই প্রাচুর্য যা দাম্ভিক করে তোলে, ওই রোগব্যাধি যা জরাগ্রস্ত করে ফেলে, ওই বার্ধক্য যা বুদ্ধিহীন করে ছাড়ে। (’সুনানে তিরমিজি: ২৩০৬)

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেন, ‘তোমরা পাঁচটি জিনিসের আগে পাঁচটি জিনিসের মূল্যায়ন করো। যৌবনকে বার্ধক্যের আগে, অবসরকে ব্যস্ততার আগে, সময়কে সময় চলে যাওয়ার আগে, সুস্থতাকে অসুস্থতার আগে, জীবনকে মৃত্যুর আগে। (’সুনানে তিরমিজি ও আবু দাউদ)

শুদ্ধাচার দ্বারা একটি সমাজের কালোত্তীর্ণ মানদণ্ড, নীতি ও প্রথার প্রতি আনুগত্য বোঝানো হয়। ব্যক্তি পর্যায়ে শুদ্ধাচারের অর্থ হলো কর্তব্যনিষ্ঠা ও সততা, তথা চরিত্রনিষ্ঠা। বর্তমান প্রেক্ষাপটে সেবা খাতে শুদ্ধাচার কৌশল বাস্তবায়নের বিষয়টি নিয়ে বিভিন্নমুখী আলোচনা হচ্ছে। বিশৃঙ্খলা, অনিয়ম, অসাধুতা ও অনৈতিকতার চর্চারোধে সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং দুর্নীতি দমনে শুদ্ধাচার প্রতিপালন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির মূল কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে সেবা খাত। শৃঙ্খলা, সুশাসন ও শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠা ছাড়া উন্নয়নের আশা করা বৃথা। শুদ্ধাচারের চর্চা না থাকলে বিশৃঙ্খলা, অনিয়ম, দুর্নীতি সহসাই বাসা বাঁধে। ফলে সমৃদ্ধি ও উন্নয়ন প্রক্রিয়া চরম হুমকির মধ্যে পড়ে।

বিবেকবোধই হলো নৈতিকতার ‘উৎস’। বিবেকও সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞাহীন। তবে বিবেক বলতে নিজের জন্য যা প্রত্যাশা, তা অন্যের জন্যও চাওয়া। বিবেকের তাড়নায় তাড়িত হয়ে ভালো কাজ করতে, সৎপথে চলতে মানুষ উৎসাহিত হয়। পৃথিবীর প্রত্যেকটি মানুষ, পৃথিবীর সবচেয়ে উৎকৃষ্ঠ জিনিসটি পেতে চায়। বর্ণ, রং, উচ্চতা, চিন্তাশক্তি, আকৃতি, গঠনভেদে মানুষ আলাদা হলেও সব মানুষের চাওয়া অভিন্ন। মন্দ জিনিসটি নিজের জন্য নিতে চায় না, সবাই ভালোটি পেতে চায়। কেউ চায় না তার সঙ্গে কেউ দুর্ব্যবহার করুক কিংবা কেউ তার ক্ষতি করুক। নৈতিকতা হলো মানুষের মনের এই নিরন্তর চাওয়া-পাওয়ার নীতি। নৈতিকতার চর্চা আমাদের অন্যের প্রতি যত্নশীল, সহমর্মী, দয়ালু ও অন্যের অধিকার বজায় রাখার ও অন্যের ক্ষতি হতে বিরত থাকার শিক্ষা দেয়। প্রেরণা যোগায় সমাজ ও প্রতিষ্ঠানের কল্যাণে কাজ করার।

নৈতিকতা থেকে উৎসারিত হয় সৎসাহস, দেশপ্রেম সত্যবাদিতা ও দৃঢ় প্রত্যয়। যা একটি শৃঙ্খলাপূর্ণ, স্থিতিশীল এবং শুদ্ধ সমাজ বিনির্মাণের অন্যতম শর্ত। মনে রাখতে হবে, ব্যক্তির সমষ্টিতে যেমন প্রতিষ্ঠানের সৃষ্টি হয়। তেমনি ব্যক্তির সম্মিলিত লক্ষ্যই প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্যে প্রতিফলিত হয়। একজন মানুষের নৈতিকতা শিক্ষা শুরু হয় পরিবারে এবং শুদ্ধাচার অনুসরণের ক্ষেত্রে তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। দ্বিতীয় ধাপে রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। নৈতিক জীবন গঠনে যার গুরুত্ব অপরিসীম। তৃতীয় ধাপে রয়েছে তার কর্মস্থল। শুদ্ধাচার নির্ভর করে প্রাতিষ্ঠানিক দৃষ্টিভঙ্গি ও নৈতিক চর্চার ওপর। কিন্তু সর্বক্ষেত্রে ন্যায়ের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকার বিষয়ে ইসলামসহ প্রত্যেক ধর্মেই নির্দেশনা রয়েছে।

ইসলামি স্কলারদের মতে, আত্মপর্যালোচনা ও আত্মসমালোচনার মাধ্যমে শুদ্ধাচারের যথাযথ চর্চা সম্ভব। কোরআনে কারিমে শুদ্ধাচার সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! তোমরা আল্লাহকে যথাযথ ভয় করো এবং প্রকৃত মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ কোরো না। (’সুরা আলে ইমরান: ১০২)

কোরআনে কারিমের অন্য আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে, ‘যে ব্যক্তি শুদ্ধাচার করেছে সেই সফল, আর যে নিজেকে কলুষিত করেছে সে ব্যর্থ মনোরথ হয়েছে।’

উল্লিখিত আয়াত দ্বারা বোঝা যায়, পরকালে মুক্তির জন্য শুধু বাহ্যিক আমল যথেষ্ট নয়, বরং শুদ্ধাচার জরুরি। তাই নবী করিম (সা.) নিজের অন্তরকে ঠিক করতে নির্দেশ দিয়েছেন। অন্তরের শুদ্ধতা করে নৈতিকতা শিক্ষার পূর্ব শর্ত। সততা ও নৈতিকতা দ্বারা প্রভাবিত আচরণগত উৎকর্ষই মূল শুদ্ধাচার। শুদ্ধাচার ছাড়া সভ্যতার দিকে এগিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আর শুদ্ধাচার অর্জনে ধর্মচর্চা ও নৈতিকতা শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই।

এমএম//


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি