‘মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী হতে পারেন সু চি’
প্রকাশিত : ১১:০৫, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ | আপডেট: ১১:১৭, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮
মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নিপীড়নের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান না নেওয়ায় মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হতে পারেন দেশটির স্টেট কাউন্সেলর ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী অং সান সু চি। এমনটাই মনে করেন জাতিসংঘের বিশেষ দূত ইয়াংহি লি। গতকাল যুক্তরাজ্যের সম্প্রচারমাধ্যম চ্যানেল ফোরকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে একথা বলেন ইয়াংহি লি। সু চির বিরুদ্ধে ‘গুরুতর অপরাধ’ প্রমাণিত হবে কি না প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অপরাধ সংঘটনে সহযোগিতাও জবাবদিহির আওতায় থাকে।
মিয়ানমারে মানবাধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তা লির মতে, সু চি কখনোই মানবাধিকারের দেবী ছিলেন না। তিনি একজন রাজনীতিক ছিলেন এবং এখনও তিনি একজন রাজনীতিক।
মিয়ানমারে মানবাধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তা লির মতে, অপরাধ সংঘটনে সহযোগিতা বা তা রোধে কিছু না করার জন্য তাকে দোষী সাব্যস্ত করা যায়।
মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের উপর যা হয়েছে, তা কোনো জনগোষ্ঠীকে লক্ষ্যবস্তু করে নিপীড়ন চালানো।
সেখানে কি রোহিঙ্গাদের জাতিগতভাবে নিধনের চেষ্টায় গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘একদম।’
লির ভাষ্য, গণহত্যা নিরূপনে আইনিভাবে নির্ভূল হতে হবে এবং এটা একটা আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে হতে হবে। তাই আমি শুধু এটুকু বলতে পারি, সেখানে গণহত্যার বৈশিষ্ট্য রয়েছে।’
রাখাইনে সেনাবাহিনীর হামলায় যে কয়জন রোহিঙ্গা নিহতের খবর প্রকাশ হয়েছে তার চেয়ে এই সংখ্যা অনেক বেশি বলে মনে করেন ইয়াংহি লি। তিনি বলেন, রাখাইনে আরও গণকবর পাওয়া যাবে তা তাড়াতাড়ি বা পরে হোক না কেন। কারণ সেখানে এরকম কিছু ঘটেছে বলে আমার কাছে খবর এসেছে।
বাংলাদেশে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ওপর সমীক্ষার ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক চিকিৎসা বিষয়ক দাতব্য সংস্থা মিতসঁ সঁ ফ্রঁতিয়ে (এমএসএফ) বলেছে, মিয়ানমারে ২৫ অগাস্ট সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার পর একমাসেই অন্তত ৬ হাজার ৭০০ রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে।
এ বিষয়ে সু চির অবস্থান নিয়ে তার মনোভাব জানতে চাইলে লি বলেন, হয় তিনি বিষয়টি অস্বীকার করছেন অথবা প্রকৃত ঘটনা থেকে তিনি অনেক দূরে আছেন।
সাক্ষাৎকারগ্রহীতা মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেত্রী অং সান সু চিকে ‘গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রতিমা’ অভিহিত করলে জাতিসংঘের বিশেষ দূত লি বলেন, তিনি কখনোই মানবাধিকারের দেবী ছিলেন না। তিনি একজন রাজনীতিক ছিলেন এবং এখনও তিনি একজন রাজনীতিক।’
ইয়াংহি লি ২০১৪ সালে জাতিসংঘের বিশেষ দূত হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে ছয়বার মিয়ানমার সফর করেছেন। তবে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের কথা বলে মিয়ানমার তাকে সব সময় অবাধে কাজ করার সুযোগ দেয়নি। তিনি সর্বশেষ মিয়ানমারে গিয়েছিলেন গত জুলাইয়ে। এরপরই রাখাইনে সহিংসতা থেকে বাঁচতে রোহিঙ্গারা পালাতে শুরু করলে মিয়ানমারে তার প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয় দেশটির সরকার।
বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন হবে না বলে মনে করেন জাতিসংঘের দূত লি। তিনি বলেন, আমি বলছি যে, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যে সব বৈষম্য ও নিপীড়নমূলক আইন আছে সেগুলো বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আপনারা আবারও একই ঘটনা ঘটতে দেখবেন। এমনকি, তারা ফিরে যাওয়ার পর।
সূত্র : চ্যানেল ফোর।
/ এআর /
আরও পড়ুন