ঢাকা, শনিবার   ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪

মানুষ হওয়ার প্রক্রিয়া করতে হবে 

ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম

প্রকাশিত : ১৯:৫৫, ১২ জানুয়ারি ২০২৩

১৯৭১ সাল। সেসময় আমি বঙ্গবন্ধুর লাইব্রেরি রুমে বসে কাজ করতাম। পত্রিকা ঘেঁটে সারাদিনের খবরাখবর, নোটিশ সব টুকে পাঠাতাম তার জন্যে। সে আলোকেই তিনি বিভিন্ন নির্দেশনা দিতেন।

২২ বা ২৩ মার্চের দিকে একদিন ঢাকার মার্কিন দূতাবাস থেকে একটা টেলিফোন এলো। আমি ভাবলাম, হয়তো বঙ্গবন্ধুর সাথে কথা বলতে চাইছে। কিন্তু তারা বললো, না, তারা আমার সাথেই কথা বলতে চায়। নাম ধাম জেনেই কথা বলছিল। বললো, কিছু জরুরি কথা আছে। দেখা করতে পারব কি না।

তো গেলাম একটি চাইনিজ রেস্টুরেন্টে। তাদের বক্তব্য ছিল, দেখ, এই যে তোমরা এখন স্বাধীনতার দাবী তুলেছ, আন্দোলন করছ, এসব করে কোনো লাভ হবে না। কারণ পেন্টাগন, সিআইএ অর্থাৎ মার্কিন সরকারের স্বীকৃত কোনো ম্যাপে বাংলাদেশ নামে কোনো দেশ নেই। আর পাকিস্তান আর্মি যখন তোমাদের আক্রমণ করবে, তখন তোমরা বাঁচবে কি করে?

আমি বললাম, দেখ, এই পৃথিবী যখন প্রথম সৃষ্টি হয়েছিল, তখনও বাংলাদেশ নামে কোনো ভূমি ছিল না। সমুদ্রের ঢেউয়ে ঢেউয়ে পাথর চূর্ণ হয়ে, বছরের পর বছর ধরে সৃষ্টি হয়েছে এ অপূর্ব ভূখণ্ড। আর এ ভূখণ্ডেই জন্ম হয়েছে এ মানুষগুলোর তোমাদের ভাষায় যারা দুর্বল। এরাই সেই মানুষদের বংশধর যারা খরা-দুর্ভিক্ষের কবল থেকে বাঁচতে হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে এসেছিল এ ভুখণ্ডে বেঁচে থাকার আশায়। যারা সারভাইভারস, শত প্রতিকূলতাকে জয় করে তারা টিকে গিয়েছিলেন। যে দেশে এরকম মানুষরা রয়েছেন, তারা শুধু একটি দেশ নয়, পুরো পৃথিবীকেই নেতৃত্ব দেয়ার যোগ্যতা রাখে।

তবে এই নেতৃত্ব দেয়ার জন্যে যথার্থ মানুষ লাগবে সেটা আমি সবসময়ই বিশ্বাস করতাম। যে কারণে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরে বঙ্গবন্ধু যখন তার ভাষণে বলেছিলেন, হে কবিগুরু, তোমাকে আজ মিথ্যে প্রমাণিত করে দিলাম। তুমি বলেছিলে ‘সাত কোটি সন্তানেরে হে মুগ্ধ জননী, রেখেছ বাঙালি করে মানুষ করনি’। আজকে দেখো তোমার বাঙ্গালী মানুষ হয়েছে’।, আমি সুযোগ খুঁজছিলাম কবে তাকে আমার বিশ্বাসের কথাটা বলতে পারব। দুদিন পর সুযোগ পেয়েও গেলাম। বললাম, দেখেন একটা মুক্তিযুদ্ধ করলেই কিন্তু জাতি মানুষ হয় না। মানুষ হওয়ার জন্যে একটা প্রক্রিয়া লাগে। এবং সেটা আপনিই করতে পারেন। আপনি যদি এটা করে না যেতে পারেন, সেটা কি করে সম্ভব হবে তা আমি জানি না।

আমরা এখনো ‘মানুষ’ হতে পারি নাই। মানুষ তৈরির এ উপকরণগুলো আমি কোনো বিদ্যালয়, কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে খুঁজে পাইনি- এই দুঃখবোধ আমার ছিল। কিন্তু এখানে এসে মনে হয়েছে, লামার যে কসমো বিশ্ববিদ্যালয় হবে, তাদের ‘মোটো’ হবে মানুষ হওয়া, প্রথম হওয়া। আর সে গর্বের অংশ হওয়াটা আমারও মনছবি যে, ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার জন্যেও যেন থাকে একটি ঘর।

আমাদের সকল ধর্মের যে মূল জায়গাগুলো, বিশেষ করে আমাদের নিজেদের ধর্ম এবং নবীজি এবং তার জীবনাদর্শ, সেইসাথে যে বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার এবং তার সাথে মনস্তাত্তিক বিষয় এবং আমাদের দেহ, মন এবং এর যে একটা কমান্ড স্ট্রাকচার, প্রত্যেকেই আমরা আপাতদৃষ্টিতে বিচ্ছিন্ন হলেও সকলে যে একত্রিত।

সূত্র: ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলামের বক্তব্য থেকে নেওয়া।


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি