ঢাকা, বুধবার   ২৭ নভেম্বর ২০২৪

চলন্ত বাসে জরিনা হত্যা

মামলা বাদীই হত্যার পরিকল্পনাকারী

প্রকাশিত : ১৮:১৯, ১৭ নভেম্বর ২০১৮

ঢাকার উপকন্ঠ আশুলিয়ায় জরিনা হত্যার ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন করেছেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন। ঘটনার এক সপ্তাহ পর বাসটি জব্দসহ ঘটনার সঙ্গে জড়িত তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পিবিআই’র তদন্তে হত্যার মূল পরিকল্পানাকারী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে জরিনা হত্যা মামলার বাদী ও মেয়েরে জামাই নূর ইসলাম ও তার মা আমেনা বেগম। পরিবারিক কলহের জের ধরেই তাকে হত্যা করা হয়েছে।

ঘটনার এক সপ্তাহ পর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- মামলার বাদী ও নিহতের মেয়ের জামাই ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানাধীন গাজীরচট এলাকার মতিয়ার রহমানের ছেলে মো. নুর ইসলাম (২৯) ও তার মা মোছা. আমেনা বেগম (৪৮), সিরাজগঞ্জ জেলার চৌহালি থানার করোয়াজানি গ্রামের মোকছেদ আলীর ছেলে মো. স্বপন (৩৫)।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, সিরাজগঞ্জ জেলার চৌহালী থানার খাসকাওলী গ্রামের মৃত মহির উদ্দিনের স্ত্রী জরিনা খাতুন তার পিতা আকবর আলী মন্ডলসহ (৭০) গত ০৯ নভেম্বর দুপুরে আশুলিয়া থানার গাজীরচট মুন্সীপাড়া এলাকায় জরিনার মেয়ের জামাই মামলার বাদী নুর ইসলামের বাড়িতে বেড়াতে আসেন। ওই দিন তারা দুপুরের খাবার খেয়ে বিকাল অনুমান ৫টার সময় নিজ বাড়ি সিরাজগঞ্জের উদ্দেশ্যে বের হয় এবং ইউনিক বাস স্ট্যান্ড থেকে টাঙ্গাইলগামী একটি মিনিবাসে উঠেন। কিছুক্ষণ পর বাসে থাকা হেলপার ও আরো কয়েকজন লোক মারধর করে জরিনার বাবা আকবর আলী মন্ডলকে আশুলিয়া মরাগাং এলাকায় ফেলে দেয়। জরিনা খাতুনকে নিয়ে বাস চলে যায়। আকবর আলী তখন টহল পুলিশকে ঘটনা জানালে তারা প্রায় ৫ শত গজ দূরে মরাগাং এলাকায় মহাসড়কের পাশে জরিনার লাশ পায়। জরিনার শরীরে কোনো ক্ষত না থাকলেও গলায় কালো দাগ ছিল।

শাশুড়ি খুনের পর নূরই ঘটনাটি ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করতে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দৃষ্টি থেকে নিজেকে বাঁচাতে অজ্ঞাতদের আসামি করে মূল পরিকল্পাকারী মেয়ের জামাই নুর ইসলাম বাদী হয়ে ১০ নভেম্বর সকালে আশুলিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা নং- ৩৫। মামলাটি প্রথমে আশুলিয়া থানা পুলিশ তদন্ত করে। মামলাটি একটি চাঞ্চল্যকর মামলা হওয়ায় পরবর্তীতে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স এর আদেশে পিবিআই ঢাকা জেলা তদন্ত শুরু করেন।

জরিনা সিরাজগঞ্জ জেলার চৌহালী থানার খাস কাওলিয়া গ্রামের মহির মোল্লার স্ত্রী। তিনি নিজের বাবাকে নিয়ে আশুলিয়ায় জামাতা নূরের বাড়িতে এসেছিলেন। পিবিআইর তদন্তে নূর ইসলাম ও তার মা আমেনা বেগমকে জরিনা হত্যার মূল পরিকল্পনাকরী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

ঢাকা জেলা পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার হাসান বারী নুর জানান, মামলার ভিকটিম নিহত জরিনা খাতুনের মেয়ে রোজিনার সঙ্গে বিয়ের পর থেকেই তার জামাই এবং শ্বশুর শ্বাশুড়ির কলহ চলে আসছিল। গত সপ্তাহ খানেক আগে এই কলহ মারাত্মক আকার ধারন করেছিলো। এক পর্যায়ে ভিকটিমের মেয়ে রোজিনাকে তার স্বামী নুর ইসলাম ব্যাপক মারধর করে। ঘটনাটি জানাজানি হলে এই নিয়ে উভয় পরিবারের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হয়। রোজিনার স্বামী এবং তার শ্বাশুড়ি তাদের পরিবারের কলহের জন্য রোজিনার মাকে দায়ী করেন এবং নিজেদের মধ্যে পরামর্শ করে তাকে কিভাবে সরিয়ে দেওয়া যায় এর পরিকল্পনা করতে থাকে।

পরিকল্পনার অংশ হিসেবে মামলার বাদী নূর ইসলাম এবং তার মা আমেনা বেগম জরিনার বিয়াই স্বপন এর সহযোগিতায় ১০ হাজার টাকার চুক্তিতে একটি মিনি বাস (ঢাকা মেট্রো জ-১১-১৭৯২) এর চালক, কন্ট্রাকটর ও ২ জন হেলপারসহ মোট ০৪ (চার) জনকে ভাড়া করে। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বাসটি আগে থেকে শিমুলতলা একটি পেট্রোল পাম্পের কাছে দাড় করিয়ে রাখে এবং আসামি স্বপন তাদেরকে উক্ত বাসে উঠিয়ে দেয়। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত আটক বাসটি আব্দুল্লাহপুর-বাইপাইল-নবীনগর-মানিকগঞ্জ রোডে চলাচল করতো।

বাসটিতে জরিনা এবং তার বাবা ছাড়া আর কোন যাত্রী না থাকায় বাসের মধ্যে থাকা চালক ও অপর সহযোগীরা বাসটি আশুলিয়া এলাকার বিভিন্ন রাস্তা ঘুরিয়ে রাত অনুমান সাড়ে ৭টার দিকে আশুলিয়া থানাধীন মরাগাং এলাকায় আশুলিয়া ব্রিজের উত্তর পার্শ্বে প্রথমে জরিনার বাবাকে মারধর করে চলন্ত গাড়ি থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। এর পর ভিকটিম জরিনাকে মারধর করে হত্যা করে গাড়ি থেকে ফেলে দিয়ে চলে যায়। প্রাথমিক ভাবে ধারনা করা হচ্ছে ভিকটিমকে শ্বাসরুধে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যান্যদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তিনি।

এসএইচ/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি