ঢাকা, সোমবার   ২১ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

‘মাসুদ রানা’ নিয়ে হচ্ছে কী?

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:৩৫, ১৭ জুন ২০২০ | আপডেট: ১২:৩৯, ১৭ জুন ২০২০

Ekushey Television Ltd.

‘মাসুদ রানা’ সিরিজ। গুপ্তচরবৃত্তি-থ্রিলারভিত্তিক বইপ্রেমী মানুষদের কাছে সিরিজটি বেশ পরিচিত। কিন্তু দেশে হঠাৎ করে এই ‘মাসুদ রানা’কে নিয়ে শুরু হয়েছে মাতামাতি। কিন্তু কেনো? কী এমন হয়েছে যার জন্য এতো দিন পরে শিরোনামে উঠে এসেছে  ‘মাসুদ রানা’। রহস্যময় এই সিরিজের আসল রহস্য খুঁজে দেখব আজ।

কাজী আনোয়ার হোসেন। শুরুতে স্পাই থ্রিলার সিরিজ ‘মাসুদ রানা’ তিনি লেখা শুরু করলেও সিরিজের আড়াই শতাধিক বই লিখেছেন শেখ আবদুল হাকিম। পারিশ্রমিকের বিনিময়ে তার কাছ থেকে লেখা নিয়ে কাজী আনোয়ার হোসেন নিজের নামে প্রকাশ করতেন এই বই। এমনটি জানিয়েছে কপিরাইট অফিস।

গত বছর জুলাইয়ে ‘মাসুদ রানা’ সিরিজের ২৬০টি ও ‘কুয়াশা’ সিরিজের ৫০টি বইয়ের লেখক হিসেবে মালিকানা স্বত্ব দাবি করে কাজী আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে কপিরাইট আইনের ৭১ ও ৮৯ ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগ দাখিল করেছিলেন শেখ আবদুল হাকিম।

তিন দফা শুনানি, দুই পক্ষের যুক্তি-পাল্টা যুক্তি ও তৃতীয় পক্ষের বক্তব্যের আলোকে রোববার কপিরাইট অফিসের এক রায়ে বলা হয়েছে, সেবা প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী কাজী আনোয়ার হোসেন কপিরাইট আইনের ৭১ ও ৮৯ ধারা লঙ্ঘন করেছেন।

কপিরাইট অফিসের রেজিস্ট্রার জাফর রাজা চৌধুরী জানান, মাসুদ রানা সিরিজের প্রায় ৪৫০টি বইয়ের মধ্যে ২৬০টি বইয়ের লেখক হিসেবে শেখ আবদুল হাকিমের দেওয়া তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে দেখা গেছে তিনিই বইগুলোর লেখক। সেই সঙ্গে কুয়াশা সিরিজের ৫০টি বইয়ের লেখকও তিনি।

তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সেগুলোর মধ্যে আগেই তার নামে ৬টি বইয়ের কপিরাইট করা ছিল। বাকি বইগুলোও নিজের নামে স্বত্বের জন্য কপিরাইট অফিসে আবেদন করতে পারেন।’

পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ পর্যন্ত মাসুদ রানা সিরিজের ২৬০টি ও কুয়াশা সিরিজের ৫০টি বইয়ের প্রকাশ বা বাণিজ্যিক কার্যক্রম গ্রহণ থেকে বিরত থাকার জন্য সেবা প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী কাজী আনোয়ার হোসেনকে নির্দেশ দিয়েছে কপিরাইট অফিস।

সেই সঙ্গে আবদুল হাকিমের নামে কপিরাইট নিবন্ধনকৃত প্রকাশিত বইগুলোর বিক্রিত কপির সংখ্যা ও বিক্রয় মূল্যের হিসাব বিবরণী আগামী ৩০ দিনের মধ্যে বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসে দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে শেখ আবদুল হাকিম বলেন, ‘মাসুদ রানা সিরিজের ২৬০টি বইয়ের লেখক হিসেবে ‍অবশেষে স্বীকৃতি পেলাম। এখন এই বইগুলো বিক্রি বাবদ পাওনা অর্থ আমি ফেরত চাই।’

তবে এ রায়ের বিরুদ্ধে কাজী আনোয়ার হোসেন আগামী ৩০ দিনের মধ্যেই কপিরাইট অফিসে আপিল করার সুযোগ পাবেন।

রায়ের পর্যবেক্ষণ বলা হয়েছে, পারিশ্রমিকের বিনিময়ে শেখ আবদুল হাকিমসহ একাধিক লেখককে দিয়ে মাসুদ রানা সিরিজের বইগুলো লিখিয়ে নিয়েছেন কাজী আনোয়ার হোসেন।

‘বাজারজাত করার স্বার্থে’ প্রকাশক প্রকৃত লেখকের পরিবর্তে মাসুদ রানার বইগুলোতে নিজের নাম ব্যবহার করতেন। বিষয়টি নিয়ে শেখ আবদুল হাকিমের আপত্তি না থাকলেও রয়্যালিটি নিয়ে তাদের মধ্যে মতপার্থক্য তৈরি হয়।

আবদুল হাকিমের অভিযোগ, তার লেখা বই একের পর এক মুদ্রণ প্রকাশিত হলেও প্রাপ্য রয়্যালিটি তাকে দেওয়া হয়নি; সেকারণেই কপিরাইট অফিসের দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি।

তার নামে কপিরাইট নিবন্ধনকৃত বইগুলোর রয়্যালিটি দাবি ও ক্ষতিপূরণ চেয়ে কপিরাইট বোর্ডে কিংবা দেওয়ানী আদালতে অভিযোগ দায়ের করতে পারেন।

তার নামে কপিরাইট নিবন্ধনকৃত বই কোনো দোকান, বাজার বা গুদামজাত করা থাকলে তা জব্দ করার জন্য স্থানীয় থানা কিংবা কপিরাইট টাস্ক ফোর্সের কাছে আবেদন করতে পারেন।

মাসুদ রানা সিরিজের ৫০টি বইয়ের লেখক হিসেবে দাবি করে কাজী আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে একই ধারায় অভিযোগ দায়ের করেছেন আরেক লেখক ইফতেখার আমিন। সেই অভিযোগও শিশগিরই নিষ্পত্তি করা হবে বলে জানা গেছে।

এ পর্যন্ত সবার জানা। কিন্তু আসল ঘটনা কী?

আসলে লিখিত চুক্তিপত্র না থাকায় সেবা প্রকাশনীর কাজী আনোয়ার হোসেন ও লেখক শেখ আবদুল হাকিমের মধ্যে দ্বন্দ্বের সূত্রপাত। ‘মাসুদ রানা’ সিরিজের ২৬০টি বইয়ের লেখক হিসেবে শেখ আবদুল হাকিমকে স্বীকৃতি দেওয়া রায় বলছে, ‘বই প্রকাশের আগে লেখক-প্রকাশকের মধ্যে প্রকাশিতব্য বইয়ের সংখ্যা, পারিশ্রমিক, কমিশনপ্রাপ্তি ইত্যাদি বিষয়ে একটি সুস্পষ্ট চুক্তি থাকা উচিত।’

আবদুল হাকিম সেবা প্রকাশনীতে টানা ৪৫ বছর লিখেছেন। কাজী আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্ক ছিল, সেই প্রসঙ্গটি রায়ে একাধিকবার উঠে এসেছে। আদালতে কয়েকজন সাক্ষীর বক্তব্যে তা প্রমাণিত হয়েছে।

রায় বলছে, বইয়ের রয়ালিটি দেওয়াকে কেন্দ্র করে মূলত কাজী আনোয়ার হোসেন ও শেখ আবদুল হাকিমের মধ্যে বিরোধের জন্ম। সেবা প্রকাশনীর অন্যান্য লেখকের মতো আবদুল হাকিম পাণ্ডুলিপি দিয়ে টাকা নিতেন। বই বিক্রির পর আরও টাকা পেতেন। কাজী আনোয়ার হোসেনের সৃষ্টি ‘মাসুদ রানা’ পাঠকসমাজে তুমুল জনপ্রিয়তা পায়। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন লেখককে দিয়ে লিখিয়ে লেখার কিছু পরিবর্তন বা সম্পাদনা করে কাজী আনোয়ার হোসেন নিজের নামে এসব বই প্রকাশ করেছেন।

তবে রায়ের সঙ্গে সম্পূর্ণ দ্বিমত পোষণ করছেন কাজী আনোয়ার হোসেন। রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সত্য বলতে, আমি একটা সিরিজ তৈরি করলাম— ‘ধ্বংস পাহাড়’। ‘মাসুদ রানা’। তাতে রাহাত খান আছেন, সোহেল আছে, সোহানা আছে, ইত্যাদি চরিত্র আমি তৈরি করলাম। একটা বিশেষ ঢঙে আমি এগুলো তৈরি করেছি। পাঠক পছন্দ করলেন। এভাবে চলতে শুরু করল। একটা সময়ে আমি দেখলাম, আমি আর কুলিয়ে উঠতে পারছি না। ব্যবসা–বাণিজ্য। তখন আমি শেখ আবদুল হাকিমকে বললাম, ‘আপনি লিখতে চান এটা? আমি বলে দেব, ঠিক কীভাবে লিখতে হবে। কীভাবে চরিত্র হবে। সে অনুযায়ী যদি লিখে দেন, তাহলে আপনাকে এককালীন টাকা দেব এবং এটার ওপর আপনার কোনো রাইট থাকবে না। যেহেতু আমার সিরিজ। আমার সিরিজে তো আপনি লিখতে পারেন না। আমার সিরিজ ‘মাসুদ রানা’ লিখে অন্য কোনো জায়গায় ছাপতে পারেন না। এটাতে উনি (শেখ আবদুল হাকিম) রাজি হলেন। টানা ৪৫ বছর ধরে লিখলেন। এরপর নানান ধরনের বইও তিনি লিখেছেন। সেগুলোয় তাঁর নাম গেছে। শুধু ‘মাসুদ রানা’ ও ‘কুয়াশা’ সিরিজে আমার নামে গেছে। কারণ, সিরিজ দুটি আমার।’

কাজী আনোয়ার হোসেনই যে ‘মাসুদ রানা’র জনক, তা স্বীকার করেন লেখক শেখ আবদুল হাকিম। তিনি বলেন, ‘কাজীদা ‘মাসুদ রানা’র জনক। কাজী আনোয়ার হোসেন। তিনি সত্যিকারের একজন ভদ্রলোক। গোপন করে তো উনি কিছু করেননি। ওনার নামে বই ছাপা হোক, তাতে আমার সম্মতি ছিল। আমি তো তখন আইন জানতাম না। উনি যেটা বলেছেন, সেটা মেনে নিয়েছি। বলেছেন, ওনার নামে ছাপলে বেশি বিক্রি হবে, আমরা মেনে নিয়েছি। আমি তো একা না। অনেকেই তো এভাবে লিখেছেন। একটা মানুষ, যিনি পরের নামে লেখেন, তাঁর তো নিডি অবস্থা। আমাকে লিখতে হয়েছে। আমাকে যদি কেউ প্রশ্ন করেন, আপনি জেনেশুনে কেন অন্যের নামে লিখেছেন। এর উত্তর দেওয়া যাবে না। আমি করতে বাধ্য হয়েছি। আমি লিখলাম, উনি কিনে নিলেন। দয়া করে আমাকে বছরের পর বছর টাকা দিয়েছেন। একবার তো দিচ্ছেন, আবার তিন মাস পরপর টাকা দিচ্ছেন। চাইলে টাকা দেন, না চাইলেও টাকা দেন। যখন আইন জানলাম, তখন আমার চোখ খুলে গেছে।’

বই বেশি ছাপলেও কম দেখানো হয় বলে দাবি করে শেখ আবদুল হাকিম বলেন, ‘একটা বইয়ের পাণ্ডুলিপি জমা দিলে ১০ হাজার টাকা আমাকে দিতেন কাজী সাহেব (কাজী আনোয়ার হোসেন)। এক মাস পর যখন বইটা বের হতো, তখন আরও কিছু টাকা পেতাম। পরে ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে রয়ালিটি দিতেন। কিন্তু গোলমাল লাগছে, আমার বই তাঁরা ছাপছেন, সেটা কিন্তু খাতায় তুলছেন না। এটা তো সিরিয়াস একটা সমস্যা। একটা বই তাঁরা ছাপলেন ৬০ হাজার কপি। কিন্তু আমাকে দেখাচ্ছেন সাত হাজার। আমি তো ৫৩ হাজার বইয়ের পয়সা পাচ্ছি না।’ 

বইয়ের এই রয়ালিটি চাওয়া নিয়ে সেবা প্রকাশনীর কাজী আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে তাঁর দ্বন্দ্বের মূল সূত্রপাত হয়েছিল বলে দাবি করেন লেখক শেখ আবদুল হাকিম।

‘মাসুদ রানা’ ও ‘কুয়াশা’ সিরিজের কিছু বই শেখ আবদুল হাকিম হাকিম লিখেছেন, সেটি কপিরাইট বোর্ডের কাছেও লিখিতভাবে কাজী আনোয়ার হোসেনের পক্ষ থেকে জানানো হয়। রায় বলছে, কাজী আনোয়ার হোসেনের পক্ষ থেকে যুক্তি দেখানো হয়, আবদুল হাকিম সেবা প্রকাশনীতে চাকরি করতেন। চাকরি থেকে আনোয়ার হোসেনের নির্দেশে বইগুলো লিখেছেন। মালিকের কথায় বই লেখায় আবদুল হাকিম বইয়ের স্বত্ব পেতে পারেন না। যেসব বইয়ের ভেতর আবদুল হাকিমের নাম রয়েছে, সেগুলো ছাড়া কোনোভাবে তিনি অন্য বইয়ের স্বত্ব দাবি করতে পারেন না।

তবে কপিরাইট বোর্ড রায় বলেছে, আবদুল হাকিম যে সেবা প্রকাশনীতে চাকরি করতেন, এর সপক্ষে কোনো তথ্য-প্রমাণ হাজির করতে পারেননি প্রতিপক্ষ কাজী আনোয়ার হোসেন। আবদুল হাকিম চাকরিজীবী হলেও পাণ্ডুলিপিপ্রণেতা হিসেবে রচনার মূল মালিক তিনি। প্রণোদনা, পৃষ্ঠপোষকতা কিংবা চাকরি দিয়ে কারও রচনা নিজের বলে দাবি করা যায় না। যদি যেত, তাহলে ‘আকবরনামার’ লেখক হতেন সম্রাট আকবর, পণ্ডিত আবুল ফজল নন।

‘মাসুদ রানা’ সিরিজের ‘জাল’ নামের বইটি যে শেখ আবদুল হাকিমের লেখা, সেটি কপিরাইট বোর্ড নিশ্চিত বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়। রায়ে বলা হয়, ‘জাল’ বইটি প্রথম মুদ্রণে লেখক হিসেবে শেখ আবদুল হাকিমের নাম ছিল। তবে তৃতীয় মুদ্রণে তাঁর নাম নেই। নিশ্চিত হয়ে গত বছর ‘জাল’ বইটি হাকিমের নামে কপিরাইট সনদ দেওয়া হয়। কপিরাইট বোর্ডের ওই রায়ের বিপক্ষে কাজী আনোয়ার হোসেন কোনো আপিল করেননি। লেখক না হওয়া সত্ত্বেও কাজী আনোয়ার হোসেন বইয়ে নিজের নাম ছেপে কপিরাইট আইন লঙ্ঘন করেছেন। কপিরাইট আইন অনুযায়ী, প্রণেতার স্বত্বের মালিকানা কোনোভাবে হস্তান্তরযোগ্য নয়। প্রণেতার সম্মতি থাকলেও তাঁর পরিবর্তে লেখক হিসেবে নিজের নাম প্রকাশ করাও নৈতিকতার পরিপন্থী।

কাজী আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে করা মামলায় নিজের পক্ষে রায় পেয়ে শেখ আবদুল হাকিম বলেন, ‘এই রায়ের মাধ্যমে সত্যের জয় হয়েছে। কাজী আনোয়ার হোসেন সাহেবকে আমি শ্রদ্ধা করি। মানুষের চিন্তার গভীরতা, মানুষের পাণ্ডিত্য, পর্যবেক্ষণের ম্যাজিক, এগুলো দেখে যে মুগ্ধতা হয়, সেগুলো আমার মধ্যে আছে। এই যা কিছু হয়েছে, এগুলো দেখে কিন্তু আমার ভালো লাগছে না। মানবিক দুর্বলতা বলে একটা জিনিস তো আছে।’

পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ থাকার ফলে টানা ৪৫ বছর একসঙ্গে কাজ করেছেন কাজী আনোয়ার হোসেন ও শেখ আবদুল হাকিম। কথা বলার সময় দুজনই বারবার সেই বিষয়টি বলেছেন।

‘মাসুদ রানা’র জনক কাজী আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘শেখ আবদুল হাকিমের সঙ্গে লিখিত চুক্তি করার প্রয়োজন কখনো আমি মনে করিনি। শেখ আবদুল হাকিম অনেক ছোট বয়সে আমার কাছে এসেছিলেন। আমি তাঁকে অনেক স্নেহ করতাম। পরে লক্ষ করলাম, উনি আস্তে আস্তে অন্য রকম হয়ে গেলেন। হাতে ধরে ধরে অনেক কিছু শিখিয়েছি। সেই লোক এই কাজ করবেন, এটা আমি কল্পনাও করতে পারিনি। এটা আমার কল্পনার বাইরে ছিল। কেউ যদি ডিফেম করে, তাহলে আমি তো ঠেকাতে পারব না। ইফতেখার আমিন ও শেখ আবদুল হাকিম আমাকে বলেছিলেন, তাঁদের কথামতো আমি যদি এই কাজগুলো না করি, তাঁদের ২ কোটি ৯ লাখ টাকা যদি আমি না দিই, তাহলে তাঁরা আমার ঘুম হারাম করে দেবেন। এই হুমকি দিয়েছিলেন তাঁরা। ২০১০ সালের আগে হুমকি দেওয়া হয়।’

আক্ষেপের সুরে কাজী আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘২০১০ সালে সাতটা বইয়ের কপিরাইট দেওয়া হয়। একটা বইয়ের মধ্যে শেখ আবদুল হাকিমের নাম ছিল। তিনি আমাকে অনুরোধ করে বলেছিলেন, তাঁর নাম হলে অন্য বইগুলো ভালো চলবে। আমি সেভাবে দিয়েছিলাম। সব জায়গায় আমার নাম ছিল। প্রকাশক সেবা প্রকাশনী। একটা সময় শেখ আবদুল হাকিম বেরিয়ে যান। পরে তিনি আগামী প্রকাশনীর ওসমান গনি এবং সালাউদ্দিন বইঘরের সালাউদ্দিন সাহেবকে ধরেন। তাঁরা দুজনে আমার কাছে এসেছিলেন। আজ পর্যন্ত কেউই বলতে পারবেন না, আমি টাকা দিইনি। কিন্তু শেখ আবদুল হাকিমের ভয়, আমি টাকা দেব না। আমি তাঁদের বললাম, উনি যখন নিয়মের বাইরে চলে যাচ্ছেন, তখন ওনার লেখার দরকার নেই। ওনাকে আমি নেব না। সালাউদ্দিন সাহেব আমাকে বললেন, ওনাকে একটুখানি ছাড় দিন, যাতে তিনি সম্মানের সঙ্গে ঢুকতে পারেন। যখনই আমাকে পাণ্ডুলিপি এনে দেবেন, আমি যখন এডিট করে বুঝব সব ঠিক আছে, আমি যেভাবে বলেছিলাম, সেভাবে হয়েছে তখনই আমি সঙ্গে সঙ্গে টাকা দিয়ে দেব এবং সেভাবে চলছিল। এখন তিনি (শেখ আবদুল হাকিম) আবার রয়ালিটি চান। আমি তাঁকে ইংরেজি বইটা দিলাম। তিনি লিখে আনলেন। আমি এডিট করলাম। আমি টাকা ব্যয় করে ছাপলাম। আমি এটার ডিস্ট্রিবিউট করার সমস্ত ব্যয়ভার বহন করলাম। কাগজ-ছাপা ইত্যাদি সবকিছু করলাম। সবকিছু করার পর আমি এর কোনো কিছু না। তিনি এটার মালিক?’

এদিকে উচ্চ আদালত থেকে ন্যায়বিচার পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেন কাজী আনোয়ার হোসেন।

কপিরাইট বোর্ডের রেজিস্ট্রার জাফর রাজা চৌধুরী বলেন, ‘মালিকের নির্দেশে কেউ যদি লেখেন, এই স্বত্বটা কর্মচারী দাবি করতে পারেন না। এই যুক্তি দিয়েছিলেন কাজী আনোয়ার হোসেনের আইনজীবী। কপিরাইট আইন বলে, মালিকের নির্দেশে লেখেন আর আর যার নির্দেশে লেখেন, এতে কিছু আসে-যায় না। কারণ, মরাল রাইট প্রণেতারই থাকে, লেখকেরই থাকে। মালিক কখনো লেখক হতে পারেন না। এটাই হলো মূল বিষয়।’
এসএ/
 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি