মাহমুদউল্লাহর বিদায়ে সাকিব-মাশরাফিসহ যা বললেন সতীর্থরা
প্রকাশিত : ১৫:৫৪, ১৩ মার্চ ২০২৫

বাংলাদেশের অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ দীর্ঘ ১৭ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ইতি টানলেন। বুধবার (১২ মার্চ) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন তিনি। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলার পর থেকেই সতীর্থরা সামাজিক মাধ্যমে তাকে ঘিরে আবেগঘন পোস্ট দিচ্ছেন। আবেগে ভেসে গেছেন সাকিব আল হাসানও। অনেকদিন ধরে নিরব রয়েছেন তিনি; মাহমুদউল্লাহর বিদায়ে নীরবতা ভাঙতে বাধ্য হলেন। সিনিয়র ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মুর্তজা, মুশফিকুর রহিম, তামিম ইকবাল ছাড়াও তরুণ ক্রিকেটারা মাহমুদউল্লাহর বিদায়ে আবেগাক্রান্ত হয়ে পড়েছেন।
দীর্ঘ ক্যারিয়ারে মাশরাফি বিন মুর্তজার অধিনায়কত্বে মাহমুদউল্লাহ খেলেছেন ১১০টি ম্যাচ। মাশরাফির কাছে মাহমুদউল্লাহর নামের পাশে থাকা সংখ্যা কেবল সংখ্যা। এগুলো মাহমুদউল্লাহর বিশালত্বকে ছুঁতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক অধিনায়ক, ‘দারুণ এক আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের জন্য অভিনন্দন, রিয়াদ। তোর নামের পাশে যে সংখ্যাগুলো আছে, সেসবের সীমানা ছাড়িয়ে তুই আমাদের কাছে আরও অনেক ওপরে। আমরা জানি, তোকে দলে কতটা প্রয়োজন ছিল এবং দলের সেই চাওয়ার সঙ্গে তুই কতটা মিশে গিয়েছিলি। মাঠের ভেতরে-বাইরে তোর সঙ্গে কত স্মৃতি! কত কত আনন্দ আর হতাশায় একাকার হয়েছে আমাদের সময়!’
মাহমুদউল্লাহর অবসর ঘোষণার দিনটিতে মাশরাফির চোখে ভাসছে ২০১৫ সালে অ্যাডিলেডে এবং ২০১৭ সালে কার্ডিফে করা তার সেঞ্চুরি দুটি, ‘অ্যাডিলেইড আর কার্ডিফে তোর সেঞ্চুরির কথা আজ আবার মনে পড়ছে। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম সেঞ্চুরিয়ান, তোর এই অর্জন কেড়ে নিতে পারবে না কেউ। তবে আশা করি, তোকে আদর্শ মেনে বৈশ্বিক আসরে তোর চার সেঞ্চুরির রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে দেশের অনেকে। বড় মঞ্চে তুই যেভাবে নিজের সেরাটা মেলে ধরেছিস, সেই পথ অনুসরণ করবে প্রজন্মের পর প্রজন্ম।’
পরে অবশ্য শুভ কামনা জানিয়ে মাশরাফি লিখেছেন, ‘ঘরোয়া ক্রিকেটে তোর বাকি দিনগুলি উপভোগ্য হবে আর অবসর জীবন কাটবে আনন্দে, এই কামনা থাকল।’
রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর দেশের বাইরে আছেন সাকিব আল হাসান। সামাজিক মাধ্যমেও ছিলেন নীরব। মাহমুদউল্লাহর অবসরে কিছুটা সরব হলেন বাঁহাতি এই অলরাউন্ডার। ফেসবুক পোস্টে সাকিব লিখেছেন, ‘রিয়াদ ভাই, আপনার পাশে খেলা এবং আপনার কাছ থেকে শেখা আমার জন্য সৌভাগ্যের। আপনি মাঠে এবং মাঠের বাইরে উভয় ক্ষেত্রেই উদাহরণ স্থাপন করেছেন এবং আপনার রেকর্ডই কথা বলে। খেলার প্রতি আপনার নিষ্ঠা, সহনশীলতা এবং ভালোবাসার জন্য জাতি আপনার কাছে ঋণী।’
শুরুতে মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে মুশফিকের সম্পর্ক ছিল কেবল সতীর্থ হিসেবে। পরবর্তীতে পারিবারিকভাবেও মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হয়। অসংখ্য স্মৃতির জন্য মাহমুদউল্লাহকে ধন্যবাদ দেন মুশফিক, ‘আপনার সঙ্গে এত বছর একসঙ্গে মাঠে খেলা সত্যিই বিশাল সম্মানের ব্যাপার ছিল। আপনার দিক নির্দেশনা ও একসঙ্গে গড়া অসংখ্য স্মৃতির জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ। আপনি দেশের জন্য যা কিছু অর্জন করেছেন, তা নিয়ে আমি অসম্ভব গর্বিত। মাশাল্লাহ, আপনার প্রাপ্য এই অবসর উপভোগ করুন রিয়াদ ভাই।’
লম্বা পথচলায় জাতীয় দলে অবদান রাখায় মাহমুদউল্লাহকে ধন্যবাদ জানিয়ে সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবাল লিখেছেন, ‘বর্ণিল আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার সফলভাবে সম্পন্ন করায় অভিনন্দন, রিয়াদ ভাই। আপনি বাংলাদেশ ক্রিকেটের অন্যতম স্তম্ভ এবং মাঠের ভেতরে ও বাইরে আমাদের অনেকের জন্য অনুপ্রেরণা। আমরা ড্রেসিং রুমে কাটানো স্মৃতিগুলো সবসময় মনে রাখবো। দেশের ক্রিকেটে আপনার অবদানের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ এবং আগামীর দিনগুলোর জন্য শুভকামনা…।’
তরুণ ক্রিকেটারদের জন্য মাহমুদউল্লাহ অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবেন বলে মনে করেন বর্তমান অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। তিনি সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, ‘(মাহমুদউল্লাহ) রিয়াদ ভাই, বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশ ক্রিকেটে আপনার সকল অবদানের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ। ড্রেসিং রুমে আপনাকে খুব মিস করবো। মাঠের ভেতরে ও বাইরে সবসময় আপনার কাজগুলো থেকে অনুপ্রেরণা নেবো। আপনি আমাদের অনেককে অনুপ্রাণিত করেছেন এবং এটি অনেক দিন ধরে অব্যাহত থাকবে… আপনার ভবিষ্যতের জন্য শুভকামনা…’
মেহেদী হাসান মিরাজ তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘প্রিয় মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ভাই, একজন বড় ভাই ও সতীর্থ হিসেবে যে কোনও প্রয়োজনে, যে কোনও মুহূর্তে আপনাকে পাশে পেয়েছি। শৈশবে টিভিতে আপনাকে দেখে বড় হওয়া, ক্রিকেটার পরিচয়ে আপনার সঙ্গে ড্রেসিং রুম শেয়ার করা, ড্রেসিং রুম কিংবা ক্রিজে থেকে আপনার নানা অসাধারণ স্মৃতির অংশ হওয়া, গুরুত্বপূর্ণ সময়ে জুটি গড়ে আমার প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরির সময় আপনার সহযোগিতা পাওয়া- সবকিছুই আমার ব্যক্তিজীবনের অসাধারণ স্মরণীয় ঘটনা ।’
তাসকিন আহমেদ লিখেছেন, ‘পুরো একটি প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা ছিলেন মাহমুদউল্লাহ। বাংলাদেশ ক্রিকেটের এক সত্যিকারের কিংবদন্তি বিদায় নিলেন। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ভাই, আপনার সঙ্গে মাঠে খেলা সত্যিই এক বিশাল সম্মানের বিষয় ছিল। আপনার ধীরস্থির উপস্থিতি, ম্যাচ জেতানো পারফরম্যান্স এবং নেতৃত্ব চিরদিন স্মরণীয় হয়ে থাকবে। আমিসহ আমাদের পুরো এক প্রজন্মকে আপনি অনুপ্রাণিত করেছেন। জীবনের নতুন অধ্যায়ের জন্য আপনাকে শুভকামনা। অবসরের শুভেচ্ছা, রিয়াদ ভাই।’
এদিকে, মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে খেলতে পেরে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করা লিটন দাস লিখেছেন, ‘মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ভাই, আপনি বাংলাদেশ ক্রিকেটে অনেক কিছু দিয়েছেন। আমরা আপনার কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি। আপনার নেতৃত্বে খেলতে পারা এবং একই ড্রেসিং রুম ভাগ করে নেওয়া আমার জন্য এবং নিশ্চয়ই আমাদের অনেকের জন্য সৌভাগ্যের বিষয়। আপনার অবসর-পরবর্তী জীবনের জন্য রইল আন্তরিক শুভকামনা।’
সৌম্য সরকার নিজের পোস্টে লিখেছেন, ‘তাড়না, নিবেদন ও অসংখ্য স্মরণীয় মুহূর্তের একটি ভ্রমণ। প্রতিটি রান, উইকেট ও স্মৃতির জন্য কৃতজ্ঞ। ধন্যবাদ, কিংবদন্তি।’
স্মৃতিচারণ করে তাওহীদ হৃদয় লিখেছেন, ‘ছোটবেলায় টিভির সামনে বসে দেখা প্রত্যেকটি ব্রিলিয়ান্ট মুহূর্তের জন্য ধন্যবাদ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ভাই। সবাই আপনাকে সাইলেন্ট কিলার ডাকলেও, আমাদের বন্ধুমহলে আপনার নাম ছিল 'পেইন-কিলার। এমন অনেক ম্যাচ আছে যেগুলোর শেষ মুহূর্তের রিলিফ আপনার থেকে উপহার পেয়েছি। আমার দোয়ায় থাকবেন আপনি, যেমনটি সবসময় ছিলেন। অবসর জীবনের জন্য শুভকামনা।’
এমবি//