‘মা দিবস নিয়ে তারুণ্যের ভাবনা’
প্রকাশিত : ১৯:৩২, ১২ মে ২০১৯
মা বললেই চোখের সামনে ভেসে উঠে নিষ্পাপ একটি মুখ। পবিত্র এ শব্দটি ধারণ করেই বেড়ে উঠে প্রায় সবাই। গর্ভধারণী মাকে নিয়ে অনুভূতি শূন্য মানুষ পৃথিবীতে পাওয়া দুস্কর। আর সবাই হয়তো এটাই বিশ্বাস করে, এই মানুষটিকে ভালোবাসার জন্য কোন দিন বা দিবসের দরকার হয় না। তবে বিশেষ একটি দিন যদি শুধু মায়ের জন্য হয়, তাহলে মন্দ কি। বিশেষ মানুষটির জন্য বিশেষভাবে না হয় দিনটি কাটানো যাবে। আবার হয়তো অনেকের সেটাও করা সম্ভব হয়ে উঠে না। মায়ের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের জন্য হয়তো আমরা অনেক অজুহাত খুঁজি। কিন্তু মা, সব সময় ভালোবাসার চাঁদরে ঢেকে রাখেন আমাদের। শুধু পৃথিবীর আলোয় তিনি আমাদের দেখাননি, শৈশব থেকে কৈশর যার আদর আর শাসন নিয়েই বেড়ে উঠি আমরা। বড় বেলাও প্রতিদিন বাহিরে থেকে ঘরে ফেরা পর্যন্ত যে মানুষটি পথ চেয়ে বসে থাকে তিনিই আমাদের মমতাময়ী মা।
কিংবা বৃদ্ধ বয়সেও আশ্রয় স্থল বা সব দুঃখ কষ্টের সারথী হয়ে যিনি সব সময় পাশে থেকে সাহস দেন তিনিই আমাদের জন্মধারীণি। মৃত্যু পর্যন্ত আমাদের জীবনের পুরো জায়গা জুড়ে ভালোবাসাময় একটি নামই মমতার পরশ নিয়ে পাশে থাকে সবমসয়। মে মাসের দ্বিতীয় রোববার প্রতিবছর পালিত হয় বিশ্ব মা দিবস। ১৯১৪ সালের ৮ মে থেকে এটি পালন হয়ে আসছে। আর এই দিন ঘিরে অনেকের অনেক পরিকল্পনা থাকে। মায়ের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশে অনেকে মাকে বিভিন্ন উপহারও দিয়ে থাকেন।
মা দিবস নিয়ে এই প্রজন্মের তরুণদের ভাবণা ও তাদের অনূভূতি তুলে ধরা হলো একুশে টিভি অনলাইন পাঠকের জন্য। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রুবাইয়া নাসরীন সেঁজুতি। মা দিবসে মাকে নিয়ে জানালেন তার অনুভূতির কথা। মা" শব্দটা যতটা ছোট তার অবদান প্রতিটি সন্তানের জীবনে কতটা বেশি তা কল্পনার বাইরে। মা দিবস আমার জন্য প্রতিদিন। একদিন নয়, প্রতিটা মুহুর্ত সন্তানদের উচিৎ মায়েদের স্পেশাল অনুভুতির মুহুর্ত উপহার দেওয়া। তবে মা দিবস এ আমি আমার মা এর মুখে একটু মুচকি হাসি দেখতে চাই সব সময়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আশিকুর রহমান, জানালেন মাকে নিয়ে তার অনূভূতি। তিনি বলেন, খাবার টেবিলে বড় মাছ বা মাংসের টুকরোটা তাকে কখনো নিতে দেখিনি। শত ব্যস্ততার মাঝেও সে কখনো আর্শীবাদ করতে ভুলে যাননি। সব ঝড়-বৃষ্টি, রোগ-শোকেও যে মানুষটি বটবৃক্ষের ন্যায় অবিচল ছায়ার মতো আগলে রেখেছেন। আমাদের জীবন গড়ার এই বন্ধুর পথ পাড়ি দিচ্ছি যার প্রেরণা, ত্যাগ আর অকৃত্তিম ভালোবাসায়- সেই মাকে জানাই মা দিবসের শুভেচ্ছা।
অন্যদিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালযয়ের দর্শন বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী আফরোজা আক্তার জানালেন, মাকে নিয়ে তার অনূভূতি। তিনি বলেন, হঠাৎ মনে হলো, চারপাশের ধরা বাধা নিয়ম থেকে একটু ছুটি নিতে পারলে ভালো হতো। যেখান কেউ কোন খোঁজ পাবে না। খুঁজে দেখলাম না এমন গুহার সন্ধান পাওয়া মেলা ভার। পরক্ষণেই মনে হলো, কেমন হতো যদি আম্মুর কোলে লুকানো যেতো। পৃথিবীতে সব কিছুরই সংজ্ঞা আছে। কিন্তু একটা শব্দের ব্যাখ্যা আমি কখনো দিতে পারি না। চারদিক যখন সব বিষন্ন, কাউকে বলার কিছু নেই। হঠাৎ মনে পড়ে,না একজন তো আছে। যে যাদু জানে! যে মন ভালো করে দিতে জানে, তার সন্তানের সব মন খারাপ করা অভিযোগ গুলো মুছে দিতে জানে। যার কাছে সন্তানের সব ভুলগুলোর ক্ষমা থাকে। যে হাসতে হাসতে আপনার সব বিরক্তিকর কথা গুলো মনোযোগ দিয়ে শোনে।
শুনেছি প্রত্যেক টা মেয়ের মাঝেই নাকি একটা মা সূলভ আচরন সুপ্ত থাকে। একারণেই হয়তো!
সৃষ্টিকর্তা এই `মা` নামক সৃষ্টি কে কতটা শক্তি দিয়ে থাকলে সন্তানের জন্য সারা পৃথীবির সঙ্গে লড়তে জানে একটা মানুষ, আমার জানা নেই। যতটা দুর্ভেদ্য ঘিরে পাগল মেয়েটা তার সন্তান কে আগলে রাখে হয়তো ঠিক ততটাই হয়তো।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী নাজমুস সাকিব। তিনি জানালেন, মা দিবসে তার মায়ের কষ্ট করে তাদের বড় করার গল্প। তিনি বলেন, তার মা তাদের ভাই-বোনদের অনেক কষ্ট করে এ পর্যন্ত নিয়ে আসছেন। তারা এখন সবাই উচ্চ শিক্ষিত। কিন্তু এটা শুধু সম্ভব হয়েছে তার মায়ের জন্য। একজন মা পারে সন্তানের ভবিষৎ নিয়ে সচেতন হতে। তার সিদ্ধান্ত আর সহযোগীতার কারণেই অনেক সন্তান ভালো জায়গায় পৌঁছাতে পারে।
সরকারি বিএল কলেজের শিক্ষার্থী সুবর্ণা নার্গিস বন্যা। পড়ছেন রাষ্টবিজ্ঞান চতুর্থ বর্ষে। তিনি জানালেন তার মাকে নিয়ে অনিুভূতি। তিনি বলেন, মা" হলো এমন এক অস্তিত্ব যার অনুগ্রহ ছাড়া কোনো জীবের প্রাণ ধারণ সম্ভব নয়।
চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জের এইচএসসি পাশ করা তরুণ আবদুল্লাহ ইবনে মাসুদ। মাসুদ জানান, টাকা রোজগারের জন্য বিদেশে পাড়ি জমিয়েছিলাম। কিন্তু যে টাকা মা বেঁচে থাকতে কাজে লাগবে না। তা দিয়ে কি করবো। তাই সব ছেড়ে দিয়ে দেশে এসেছি। এখন মায়ের কাছে থেকেই কিছু একটা করবো। মায়ের জন্যই তো সব।
এভাবেই এখনকার তরুণ-তরুণীদেরও অনুভূতির পুরো জায়গা নিয়ে আছেন মা। তাই শুধু মা দিবস দিয়ে কখনও মায়ের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ সম্ভব নয়। মায়ের জন্য প্রতিটি দিন, প্রতিটি সেকেন্ড।
এসএইচ/