ঢাকা, রবিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

মিউটেশন বা নামজারি কীভাবে করবেন: অ্যাডভোকেট বাবর চৌধুরী

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৭:৪৫, ৩০ অক্টোবর ২০১৮

Ekushey Television Ltd.

জমির মালিক হওয়ার পর মিউটেশন বা নামজারি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। জমির মালিকানা দাবি করা, মালিকানা করা জমি ক্রয় বা বিক্রয়ের ক্ষেত্রে জমির `নামজারি` গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আপনি যদি একটু সচেতন হোন ও সতের্কতা অবলম্বন করেন, তাহলে নামজারি খুব কঠিন কিছু নয়।

অনেকে জমির নামজারি বা মিউটেশন করতে গিয়ে নানাভাবে হয়রানির শিকার হন। অনেকে হয়ে থাকেন প্রতারিত। আবার অনেকে বহু সময় ব্যয় করেও নামজারি করানোর সুযোগ পান না। এ থেকে পরিত্রান পেতে সময়মতো মিউটেশন করা জরুরি।

জমির  নামজারির জন্য সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর আবেদন করতে হয়। সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে মিউটেশন সহকারি পদের একজন দায়িত্বে থাকে। নাজির পদের একজন ফি জমা নেন। তহশিলদাররা তদন্তের দায়িত্বে থাকেন।

আরো পড়ুন :  জমি কেনার সময় যেসব বিষয়ে সতর্ক থাকবেন: অ্যাডভোকেট বাবর চৌধুরী

কোনো আবেদন করা হলে এ নামজারি করা জমির ওপর তদন্ত করার নিয়ম আছে। অনেকে বিভ্রান্ত হয়ে তহশিলদারের অফিসে নামজারির আবেদন করে থাকে। এটা ঠিক নয়। সব সময় মিউটেশন বা নামজারির জন্য আবেদন করতে হবে সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে।

নির্ধারিত আবেদনপত্র সংগ্রহ করে আবেদন করতে হবে। আবেদনের নিচে তফসিল দিতে হয়। জমির বিস্তারিত পরিচয় দিতে হয়। খতিয়ান নম্বর, দাগ নম্বর, জমির পরিমাণ, মৌজা ও জেলা উল্লেখ করতে হয়। আবেদনে নাম, ঠিকানা, রেজিস্ট্রি ক্রয় দলিলের নম্বর ও সাল স্পষ্ট থাকতে হবে।

দলিলের অনুলিপি, ভায়া দলিল, পরচা বা খতিয়ানের অনুলিপি ওয়ারিশ সনদপত্র (ইউপি চেয়ারম্যান, ওয়ার্ড কমিশনারের প্রদত্ত প্রযোজ্য ক্ষেত্রে), কর পরিশোধের দলিল, বণ্টননামা (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) দিতে হবে।

এছাড়া খাসজমি বন্দোবস্তের ক্ষেত্রে কবুলিয়ত, নিলামের ক্ষেত্রে বায়নানামা, কোনো অফিস কর্তৃপক্ষের অনুমতি জমা দিতে হবে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে। কোনো রায় বা ডিক্রির কারণে মিউটেশন করতে হলে ডিক্রি বা রায়ের অনুলিপি জমা দিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে মিউটেশন করাতে গিয়ে কোনো দালালের খপ্পরে যেন না পড়েন।

মিউটেশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এর তদন্ত হয়। সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রথমেই মিউটেশন রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ করে তহশিলদারের কাছে পাঠান। এর পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত হয়। তদন্তে সাধারণত যাচাই করা হয় প্রস্তাবিত জমি দখলে আছে কি নেই। এটি খাসজমি কি-না, সার্টিফিকেট মোকদ্দমা আছে কি না, অধিগ্রহণ করা হয়েছে কি না, সম্পত্তির মূল পরিমাণ ঠিক আছে কি না, আদালতের রায় বা ডিক্রিমূলে কি না, মামলা-মোকদ্দমা চলছে কি না প্রভৃতি।

আরো পড়ুন : জাল দলিল চেনার উপায় কী: অ্যাডভোকেট বাবর চৌধুরী

তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর সহকারী কমিশনার (ভূমি) তা যাচাই-বাছাই করে দেখেন। প্রয়োজনে তিনি আবারও তদন্তে প্রেরণ করতে পারেন কিংবা নিজেও তদন্ত করতে পারেন। পরে যাবতীয় কাগজপত্র, দলিল মিলিয়ে দেখে মিউটেশনের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়। অনুমোদন হলে খতিয়ান খোলা হয়। পক্ষগণ হাজির হতে হয় এবং শুনানীকালে যাবতীয় দলিল পরীক্ষা করা হয়। এর ভিত্তিতে আবেদন মঞ্জুর বা নামঞ্জুর হয়।

খতিয়ান খোলার পর নতুন নম্বর পড়ে। খতিয়ান তহশিল অফিসে পাঠায়। তহশিলদার রেজিস্টারে নতুন জোত খুলে ছক অনুযায়ী তথ্য লিপিবদ্ধ করেন। মালিকের নামে আগে থেকে জমি থাকলে জোত নম্বরও থাকে। তাই নতুন জোত খোলার দরকার হয় না।

পুরোনো জোতে জমির দাগ ও খতিয়ান লিখে জমির পরিমাণ যোগ করে ভূমি উন্নয়ন কর হিসাব করা হয়। মোট পাঁচ কপি খতিয়ান করে এক কপি আবেদনকারীকে দেওয়া হয়। অন্যান্য কপি তহশিল অফিস, সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিস, জেলা প্রশাসকের রেকর্ডরুম ও জেলা জজের রেকর্ডরুমে প্রেরণ করা হয়।

সরকারি আইন অনুযায়ী, মহানগর এলাকায় ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে ৪৫ কর্মদিবসের মধ্যে নামজারি নিষ্পত্তি করার বিধান।

**পরামর্শদাতা: একজন শ্রম আইনজীবী ও ভূমি বিশেষজ্ঞ। ঢাকা বার, চট্টগ্রাম বার, ঢাকা মেট্রোপলিটন বার, ঢাকা ট্যাক্স বার, চট্টগ্রাম ট্যাক্স বার, ঢাকা লেবার কোর্ট বারের সদস্য।

অা অা/ এআর


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি