ঢাকা, সোমবার   ০২ ডিসেম্বর ২০২৪

মিরসরাইয়ে চাষ হচ্ছে ডায়াবেটিস প্রতিরোধী শস্য কিনোয়া

ইকবাল হোসেন জীবন

প্রকাশিত : ১৭:১৬, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার মঘাদিয়া ইউনিয়নের তিনঘড়িয়াটোলা বিলে থোকা থোকা দুলছে ডায়াবেটিস প্রতিরোধী শস্যদানা কিনোয়া। প্রথমবারের মতো এই শস্যদানা চাষ করেছেন স্থানীয় কৃষক দীলিপ নাথ। এটি নজর কেড়েছে স্থানীয় কৃষকদেরও।

দীলিপ নাথ বলেন, মিরসরাই উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় ২৪ শতক জমিতে প্রথমবারের মতো সম্ভাবনার এই ফসল চাষ করা হয়েছে। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই ঘরে উঠবে স্বপ্নের এই ফসল। অন্যান্য ফসলের তুলনায় স্বল্প সময়, খরচ আর পরিশ্রমের হওয়ায় লাভ ভালোই হবে। কারণ এই ফসলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে ইউরোপ আমেরিকায়। বাংলাদেশের সুপারশপগুলোতেও বাজার গড়ে উঠছে বিদেশি এই ফসলের। কেজিপ্রতি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে এই ফসল।

তিনি বলেন, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায়ের সঙ্গে আলাপচারিতায় প্রথম জানতে পারেন উত্তর আমেরিকার এই ফসল সম্পর্কে। শুনে মনে কিছুটা সংশয় কাজ করলেও শেষমেশ নেমে পড়ি ফসল ফলাতে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার সহযোগিতায় বীজ সংগ্রহ করা হয় বাংলাদেশে কিনোয়ার নতুন বীজ উদ্ভাবক শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (শেকৃবি) কৃষিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক পরিমল কান্তি বিশ্বাসের কাছ থেকে। ১৭ ডিসেম্বর তিনি বীজ আবাদ করেন। ৪-৫ দিনের মধ্যে চারা গজিয়ে এখন ফসল ঘরে উঠার অপেক্ষায়। 

কৃষক দিলীপ নাথ বলেন, কিনোয়া সম্পর্কে আমি তেমন কিছুই জানতাম না। তাই ফলনের ব্যাপারে শুরুতে কিছুটা ভয় কাজ করেছে। তবে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কিনোয়া নিয়ে যে সম্ভাবনার পথ দেখিয়েছেন, এতে আমি পুরোপুরি আশ্বস্ত হয়ে ২৪ শতক জমিতে কিনোয়া চাষ করি। এখন পুরো ক্ষেতে ফসলে ভরপুর। থোকা থোকা দোলছে কিনোয়া ফসল। দেখে আনন্দ লাগছে। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই ফসল ঘরে তুলতে পারব। আশা করছি, ভালো দাম পাব।

২৪ শতক জমিতে চাষ করতে আমার ১৪ হাজার টাকা খরচ পড়েছে। দুই থেকে তিন মণ ফসল উঠার সম্ভাবনা আছে। যার দাম প্রায় ৫০ হাজার টাকা মতো হতে পারে। যদি এই পরিমাণ লাভ হয়, তাহলে আমি আবারও কিনোয়া চাষ করব। এ নিয়ে স্থানীয় আরও অনেক কৃষক আগ্রহী হয়েছেন শস্যদানা কিনোয়া চাষে, জানান দীলিপ নাথ।

উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, চট্টগ্রামে এই প্রথম হলেও দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে কিনোয়ার চাষ শুরু হয়েছে অনেক আগে। পরীক্ষামূলকভাবে প্রথমবারের মতো ২৪ শতক জমিতে চাষ করা হয়েছে মিরসাইয়ের এই বিলে। এই ফসলের বেশ চাহিদা রয়েছে ইউরোপ-আমেরিকায়। বাংলাদেশের সুপারশপগুলোতেও বাজার গড়ে উঠছে বিদেশি এই ফসলের। কেজিপ্রতি ৫০০-৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে কিনোয়া। রান্না করলে এই কিনোয়া বীজ প্রায় চারগুণ ফুলে-ফেঁপে ওঠে এবং কিছুটা স্বচ্ছ দানাদার আকৃতি ধারণ করে। মৃদু স্বাদের কিনোয়া একেবারে গলে যায় না এবং কিছুটা চিবিয়ে খেতে হয়। 

সুপারফুড নামে পরিচিত পাওয়া কিনোয়ায় রয়েছে হাইপ্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল, আয়রন ও এন্টিঅক্সিডেন্ট। তবে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বেশ উপকারী। তাই বৈশ্বিক বাজারে এর জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে।

মিরসরাই উপজেলা কৃষি অফিসার প্রতাপ চন্দ্র রায় এ প্রসঙ্গে বলেন, কিনোয়া উত্তর আমেরিকার ফসল। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক পরিমল কান্তি বিশ্বাস স্যার বাংলাদেশে সর্ব প্রথম কিনোয়া নিয়ে কাজ করছেন। স্যারের কাছ থেকে বীজগুলো সংগ্রহ করেছি। পরীক্ষামূলকভাবে প্রথমবারের মতো চাষ করে আশাব্যঞ্জক ফলাফল পাওয়া গেছে। ধীরে ধীরে চাষের পরিমাণ বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে।

প্রতাপ চন্দ্র রায় আরও বলেন, অপরিচিত ফসল হওয়ায় এখনও স্থানীয় বাজার গড়ে উঠেনি। তবে ডা. জাহাঙ্গীর কবিরসহ বেশ কয়েকটি সুপারশপ বিদেশ থেকে আমদানি করে বিক্রি করছে। দিলীপ নাথের ফসল অগ্রিম বুকিং দিয়ে রেখেছেন ঢাকার বেশ কয়েকজন। হারভেস্ট করলেই তা ক্রেতার কাছে পৌঁছে যাবে।

এএইচ


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি