ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪

মিলনের পোস্টার দেখিয়ে গিয়েছে আপোস বিহীন রক্তের নির্দেশ

লুৎফুল কবীর রনি :

প্রকাশিত : ১০:১৭, ২৭ নভেম্বর ২০১৮ | আপডেট: ১৩:৩৯, ২৭ নভেম্বর ২০১৮

আজ ২৭ নভেম্বর শহীদ ডা. শামসুল আলম খান মিলন দিবস। ১৯৯০ সালের এইদিনে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের অগ্নিঝরা উত্তাল সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন টিএসসি এলাকায় তৎকালীন স্বৈরশাসকের গুপ্ত বাহিনীর গুলিতে তিনি নির্মমভাবে নিহত হন। শহীদ ডা. শামসুল আলম খান মিলনের রক্তদানের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচারবিরোধী গণআন্দোলন আরো বেগবান হয় এবং এক ঐতিহাসিক ছাত্র গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে স্বৈরশাসকের পতন ঘটে।
প্রতি বছর ২৭ নভেম্বর আসে। আমরা দিনটিকে শহীদ ডা. মিলন গণঅভ্যুত্থান দিবস হিসেবে পালন করি। পরম যত্নে আমাদের গণতন্ত্রের প্রতীক শহীদ মিলনের মায়ের মুখ থেকে হতাশার কথা শুনি। মিলনের সহযোদ্ধারা, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ চত্বরে চির নিদ্রায় শায়িত মিলনের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানাতে আসে। ফুলে ফুলে ভরে ওঠে জাতির বিবেকের সমাধিসৌধ। সভা সেমিনার করা হয়-করা হয় নানান অঙ্গীকার। বিভিন্ন গণমাধ্যমের সামনে অনেক বড় বড় রাজনৈতিক নেতারা গলা ফাটিয়ে বিভিন্ন নতুন নতুন প্রতিজ্ঞা করেন রাজনৈতিক ফায়দা লোটার আশায়। বছরের ঐ একটি দিনই। আবার পিনপতন নীরবতা। মিলনের সমাধিতে সদ্য রাঙানো রঙ আস্তে আস্তে মলিন হতে থাকে। আবার ঠিক একটি বছরের অপেক্ষা। পচিশটি বছর ধরে ২৭ নভেম্বরের চিরায়ত বাস্তব চিত্র এটি।

নটরডেম কলেজ ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের মেধাবী ছাত্র এবং পরবর্তীতে ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষক ডা. শামসুল আলম খান (মিলন) ন সমাজের আমূল পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন, শোষনমূলক সমাজ ভেঙে নতুন সমাজ বিনির্মাণ করতে চেয়েছিলেন। প্রচলিত পথে না গিয়ে নতুন অথচ বন্ধুর পথে হাঁটতে শুরু করেছিলেন। তিনি সেসব পোশাকি পেশাজীবী নেতার মতো ছিলেন না, যারা কেবলই ক্ষুদ্র বলয়ের মাঝে থেকে সংকীর্ণ গোষ্ঠী-স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করে কিংবা প্রচলিত রাজনৈতিক ব্যবস্থার লেজুড়বৃত্তি করে। নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে সামরিক স্বৈরাচারের উচ্ছেদ হবে এমনটি আশা করেছিল এদেশের আপামর মানুষ। রাষ্ট্র ও সমাজের সর্বত্রই থাকবে স্বাধীন দেশের উপযোগী রাজনীতি। স্বাধীন দেশে শোষণ মুক্তির সংগ্রাম তাই স্বাভাবিকভাবেই আকৃষ্ট করেছিল মিলনের মত অসংখ্য যুবককে। মিলনের স্বপ্নের সমাজ আজো তেমনি করে প্রেরণা যোগায় এখানকার মানুষকে। রাজপথে এখনো জীবন দেয় মুক্তিকামী মানুষ। এ দেশের মানুষ বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে গিয়ে বারবার ফিরেছে নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্র নিয়ে। তবু থেমে থাকেনি, আবারও জীবন দিতে এগিয়ে গিয়েছে বীরের মত বিজয় ছিনিয়ে আনতে। কিন্তু স্বৈরাচারের ধ্বংসস্তুপের উপর দাঁড়িয়ে বিজয়ের পতাকা ওড়াতে পারেনি। পারেনি বিজয়ের নাগপাশগুলো ছিন্ন করতে বরং শোষনের জাল আরও দুর্ভেদ্য হয়ে উঠেছে নতুন নতুন কৌশলে- যোগ হয়েছে শোষনের নতুন নতুন মাত্রা।
গুলিবিদ্ধ মিলনের পোস্টার দেখিয়ে গিয়েছে আপোস বিহীন রক্তের নির্দেশ।
(লেখক: সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক কর্মী)
অা অা//


** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।
Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি