মীর কাসেম ছিলেন বাঙালি হত্যার অন্যতম ত্রাস
প্রকাশিত : ০৯:৫৯, ৩০ আগস্ট ২০১৬ | আপডেট: ১৩:০৩, ৩০ আগস্ট ২০১৬
মুক্তিযুদ্ধকালে কুখ্যাত আলবদর নেতা গুপ্তঘাতক মীর কাসেম ছিলেন মুক্তিকামী বাঙালিদের হত্যার অন্যতম ত্রাস। চট্টগ্রাম অঞ্চলের বদর কমান্ডার মীর কাসেমের নেতৃত্বে বন্দর নগরীর আন্দরকিল্লায় ডালিম হোটেলে গড়ে তোলা হয় বন্দি শিবির বা ডেথ ফ্যাক্টরি; যেখানে মুক্তিযোদ্ধা জসীমসহ অসংখ্য বাঙালীকে হত্যা করে লাশ ফেলে দেয়া হয় কর্নফুলী নদীতে।
মীর কাসেম; একাত্তরে পাকিস্তানের খান সেনাদের সহযোগিতার জন্য যিনি বাঙালি খান হিসেবে ছিলেন বেশি পরিচিত। সে সময় জামাতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের পূর্ব পাকিস্তান শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন, ছিলেন চট্টগ্রামের ত্রাস। সে সময় তিনি এক সমাবেশে ঔদ্ধত্যের সঙ্গে বলেছিলেন চট্টগ্রামের প্রতিটি কোণা থেকে খুঁজে খুঁজে পাকিস্তান বিরোধীদের শেষ চিহ্নটি মুছে ফেলতে হবে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তনি সেনাদের সহযোগিতায় ছাত্রসংঘের বাছাই করা সদস্যদের নিয়ে চট্টগ্রামে গঠন করেন সশস্ত্র আলবদর বাহিনী। তার নির্দেশেই চট্টগ্রামের মহামায়া ভবন দখল করে নাম দেয় ডালিম হোটেল। যেখানে গড়ে উঠে চট্টগ্রাম অঞ্চলের ঘাঁটি এবং বন্দি শিবির অর্থাৎ ডেথ ফ্যাক্টরি। সেখানেই অসংখ্য মানুষকে হত্যা করে ফেলে দেয় কর্ণফুলী নদীতে। শুধু ডালিম হোটেল নয়, বিভিন্ন জায়গায় ছিল বদর ক্যাম্প ও নির্যাতন কেন্দ্র।
মীর কাসেমের নেতৃত্বেই ১৯৭৭ সালে ইসলামী ছাত্রসংঘ নাম পরিবর্তন করে ছাত্রশিবির নামে আত্মপ্রকাশ করে। তিনি হন শিবিরের প্রথম কেন্দ্রীয় সভাপতি। এরপর মীর কাসেমকে আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি। ১৯৮০ সালে তিনি রাবেতা আল ইসলামীর এ দেশীয় পরিচালক হন। ১৯৮৫ সাল থেকে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ মজলিসে শুরার সদস্য হিসেবে দলে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পান।
পরবর্তীতে মীর কাসেম হয়ে উঠেন জামায়াতের পঞ্চম শীর্ষ নেতা। তার যোগানো অর্থেই স্বাধীন বাংলাদেশে শক্ত ভিত্তি পায় জামায়াতে ইসলামী।
চট্টগ্রাম ও আশপাশের এলাকায় মানবতাবিরোধী কর্মকান্ডের দায়ে তার বিরুদ্ধে আনা হয় ১৪টি অভিযোগ। ২০১৪ সালের ২রা নভেম্বর অভিযোগ প্রমান হওয়ায় ট্রাইব্যুনালের রায়ে কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিম উদ্দিন আহমদসহ আটজনকে হত্যার ঘটনায় মীর কাসেমকে দেয়া হয় মৃত্যুদন্ড।
রায়ের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট সময়ে সুপ্রীম কোর্টে ১৮১টি যুক্তি দেখিয়ে একই বছরের ৩০ নভেম্বর আপিল দায়ের করেন মীর কাসেম। দীর্ঘ শুনানী শেষে চলতি বছরের ৮ মার্চ আপিলের রায়ে ১৯৭১ সালে চট্টগ্রামের কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিমকে হত্যার দায়ে মীর কাসেমের ফাঁসির আদেশ বহাল রাখেন সর্বোচ্চ আদালত। রায়ের কপি হাতে পেয়ে ১৯ জুন রিভিউ আবেদন করেন তিনি।
এরইমধ্যে বিচারের রায়কে প্রভাবিত করতে আড়াই কোটি ডলারে লবিস্ট নিয়োগ করেও ব্যর্থ হন মীর কাসেম। শেষ পর্যন্ত গত ২৪ ও ২৮ অগাস্ট দুই দিন রিভিউ শুনানি নিয়ে রায়ের তারিখ ঠিক করে দেয় আপিল বিভাগ।
আরও পড়ুন