মুজিবকে বিশ্বাসঘাতক আখ্যা দিয়ে পোস্ট করেনি পাকিস্তান সেনাবাহিনী
প্রকাশিত : ১২:৪৮, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
“বিশ্বাসঘাতকের যুগের অবসান হল, বাংলাদেশের বিপ্লবীরা গুঁড়িয়ে দিল মুজবর রহমানের বাড়ি।” পদ্মপাড়ে বুধবার থেকে শুরু হওয়া নৈরাজ্যের ঘটনায় এই ভাষাতেই উল্লাস প্রকাশ করল পাকিস্তান সেনা। মুজিবরের ধানমন্ডির বাড়ি, দেশজুড়ে একাধিক জায়াগায় বঙ্গবন্ধুর মূর্তি ভাঙার ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর এক্স হ্যান্ডেলে প্রতিক্রিয়া জানায় পাক সেনা। ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই দাবি করা হলেও রিউমর স্ক্যানার বলেছে, প্রচারিত পোস্টের এক্স অ্যাকাউন্টটি পাকিস্তান সেনাবাহিনী বা পাকিস্তান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অফিশিয়াল কোনো অ্যাকাউন্ট নয়। ধানমন্ডি-৩২ এর ভাঙচুরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে এখন পর্যন্ত পাকিস্তান সেনাবাহিনী বা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় কোনো মন্তব্য করেনি।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ফ্যাক্টচেক প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।
ওই রিউমর স্ক্যানার জানায়, ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রচারের ঘোষণাকে কেন্দ্র করে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা গতকাল বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাতে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে ব্যাপক বিক্ষোভ করে। একপর্যায়ে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
এরই প্রেক্ষিতে গতকাল (৫ ফেব্রুয়ারি) দিনগত রাত থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ডিফেন্স পাকিস্তান নামের ভেরিফাইড টিক চিহ্ন সম্বলিত একটি এক্স অ্যাকাউন্টের পোস্টের স্ক্রিনশট প্রচার করা হয়। দাবি করা হয় যে, উক্ত পোস্টটি পাকিস্তান সেনাবাহিনী বা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় করেছে। প্রচারিত উক্ত এক্স পোস্ট স্ক্রিনশটটিতে লেখা দেখতে পাওয়া যায়, “এক বিশ্বাসঘাতকের উত্তরাধিকার সমাপ্তি, ঢাকায় মুজিবুর রহমানের বাড়ি বাংলাদেশি বিপ্লবীদের হাতে ধ্বংস। বাংলাদেশি বিপ্লবীরা ধানমন্ডি-৩২ এ শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি ধ্বংস করেছে, যেখানে তিনি পাকিস্তান ভাঙার জন্য ভারতের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করেছিলেন। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে মুজিবুর রহমানের কোনো চিহ্ন আর অবশিষ্ট থাকল না। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিপ্লবীরা এই পদক্ষেপ নেয় শেখ হাসিনার ভারতের মাটি থেকে বাংলাদেশিদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেওয়ার পরিকল্পনার তথ্য ফাঁস হওয়ার পর, যা বলা হচ্ছে দেশকে অস্থির করার ও ভারতের স্বার্থ রক্ষার জন্য করা হয়েছিল।” (অনূদিত)
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত পোস্টের এক্স অ্যাকাউন্টটি পাকিস্তান সেনাবাহিনী বা পাকিস্তান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অফিশিয়াল কোনো অ্যাকাউন্ট নয় বরং অ্যাকাউন্টে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এটি একটি ব্যক্তিগত প্রোফাইল যা একজন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক ও সাংবাদিক পরিচালনা করেন। প্রকৃতপক্ষে ধানমন্ডি-৩২ এর ভাঙচুরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে এখন পর্যন্ত পাকিস্তান সেনাবাহিনী বা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় কোনো মন্তব্য করেনি।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে প্রচারিত পোস্টগুলো পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় তাতে ‘ডিফেন্স পাকিস্তান’ নামের একটি ভেরিফাইড টিক চিহ্ন সম্বলিত এক্স অ্যাকাউন্টের পোস্টের স্ক্রিনশট প্রচার করা হয়েছে এবং দাবি করা হয়েছে যে, উল্লিখিত ‘ডিফেন্স পাকিস্তান’ নামের এক্স অ্যাকাউন্টটি পাকিস্তান সেনাবাহিনী বা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের। এরই প্রেক্ষিতে এক্সে ‘ডিফেন্স পাকিস্তান’ নামক উক্ত এক্স অ্যাকাউন্ট ও উক্ত এক্স পোস্টটি খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার।
উক্ত এক্স অ্যাকাউন্টটির বায়োতে লেখা পরিচিতি থেকে জানা যাচ্ছে, এটি অফিসিয়াল কোনো অ্যাকাউন্ট নয়। এর বায়ো অনুযায়ী, এটি একটি ব্যক্তিগত প্রোফাইল যা একজন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক ও সাংবাদিক পরিচালনা করেন। অ্যাকাউন্টটি প্রতিরক্ষা, ভূরাজনীতি, বৈশ্বিক সংঘাত এবং আফগানিস্তান সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে পোস্ট করে।
অ্যাকাউন্টটির নামের পাশে ভেরিফাইড চিহ্ন থাকলেও এটি এক্স প্ল্যাটফর্মের পেইড সাবস্ক্রিপশন মডেলের মাধ্যমে অর্জিত। ২০২১ সালে চালু হওয়া এই মডেলে নির্দিষ্ট একটি মাসিক ফি প্রদান করে যেকোনো ব্যবহারকারী ব্লু টিক ভেরিফিকেশন পেতে পারেন। তাই ভেরিফাইড চিহ্ন থাকলেও এটি কোনো সরকারি বা অফিসিয়াল সংস্থার প্রতিনিধিত্ব করে না। এছাড়া, পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীর ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ বা তথ্য ও জনসংযোগ অধিদপ্তরের অফিসিয়াল এক্স অ্যাকাউন্টেও উক্ত দাবিতে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
পাশাপাশি প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য সূত্রে আলোচিত দাবিটির সপক্ষে কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, একজন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক ও সাংবাদিকের ব্যক্তিগত এক্স প্রোফাইলে প্রচারিত পোস্টকে পাকিস্তান সেনাবাহিনী বা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অফিশিয়াল পোস্ট দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
এমবি//
আরও পড়ুন