‘মৃত্যুকালে ঋণ রেখে গিয়েছিলেন সোহরাওয়ার্দী’
প্রকাশিত : ১৫:৪২, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২১
বিখ্যাত বাঙালী রাজনীতিবিদ হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী’র ১২৯ তম জন্মবার্ষিকী আজ। ১৮৯২ সালের এই দিনে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুরে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন পুর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের অন্যতম এই প্রতিষ্ঠাতা। বর্নাঢ্য ও দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ও অবিভক্ত বাংলার মূখ্যমন্ত্রী ছিলেন তিনি।
সাংবিধানিক শাসন ব্যবস্থায় বাস্তববাদী রাজনীতিতে উপমহাদেশের ইতিহাসে গণতন্ত্রের মানসপুত্র হিসেবে সুপরিচিত হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী।
তার পিতা বিচারপতি স্যার জাহিদ সোহরাওয়ার্দী ও মাতা নামকরা উর্দু সাহিত্যিক খুজাস্তা আখতার বানু। প্রথা অনুযায়ি পরিবারে শিখেছেন উর্দু ভাষা। নিজ উদ্যোগে শিখেন বাংলা ভাষা। কোলকাতা আলিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষা জীবন শুরু করলেও পরে পড়ালেখা করেন সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে। বিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক শেষ করে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরবি ভাষা ও সাহিত্যে অর্জন করেন স্নাতকোত্তর ডিগ্রি।
১৯১৩ সালে পাড়ি জমান যুক্তরাজ্যে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক করার পাশাপাশি ব্যাচেলর অব সিভিল ল ডিগ্রিও অর্জন করেন তিনি। ১৯১৮ সালে গ্রে’স ইন থেকে বার এট ল ডিগ্রি নিয়ে ফিরেন আসেন কোলকাতায়। ১৯২১ সাল থেকে নিয়মিত যুক্ত হন আইন পেশায়।
রাজনীতির হাতেখড়ি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস দলের অভ্যন্তরীণ চিত্তরঞ্জন দাসের স্বরাজ পার্টিতে। ১৯২৪ সালে কোলকাতা পৌরসভার ডেপুটি মেয়র নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৪৩ সাল পর্যন্ত রাজনীতির মাঠে সদর্প পদচারণার পর যুক্ত হন খাজা নাজিমুদ্দিনের মন্ত্রীসভায়। ১৯৪৬ সালে দিল্লী সম্মেলনে মুসলিম লীগের আইন প্রণেতাদের কাছে লাহোর প্রস্তাবের বিতর্কিত সংশোধনীতে অখন্ড স্বাধীন বাংলার প্রস্তাব ছিলো তার।
সেসময় স্বাধীন ভারতবর্ষের ধারণার বিরোধীতা করে প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবসের ডাক দেন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। আর বাংলায় সোহরাওয়ার্দী ঘোষণা দেন সরকারি ছুটির।
মুসলমানদের জন্য আলাদা বাসভূমি পাকিস্তানের দাবীতে বিক্ষোভে কোলকাতায় সৃষ্টি হয় হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা। আর এই পরিস্থিতিতে সোহরাওয়ার্দীর অখন্ড স্বাধীন বাংলার প্রস্তাবনায় একমত ছিলেন না অনেকেই। দ্বিজাতি ভিত্তিতে ভাগ হয় ভারতবর্ষ; বাংলার মূখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরে যান তিনি। দেশভাগ হলেও তখন পাকিস্তানে চলে যাননি সোহরাওয়ার্দী, ১৯৪৯ সালে ক্রমবর্ধমান করের বোঝা চাপানোর কারণে ত্যাগ করেন ভারত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক জানান, রাজনীতির নামে পয়সা আয় করার তো প্রশ্নই ওঠে না, নিজের পরিবারের সম্পদ জনগণের মাঝে বিলি করে, শেষ পর্যন্ত মৃত্যুকালে ঋণ রেখে গিয়েছিলেন সোহরাওয়ার্দী। আর তার এই রাজনৈতিক আদর্শেই উনুপ্রাণিত হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু।
১৯৬৩ সালের ৫ ডিসেম্বর লেবানের বৈরুতে মৃত্যু হয় গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর।
দেখুন ভিডিও :
এসবি/এসএ/