‘মৃত্যুর আগে কিডনি দিন, অন্যের জীবন বাঁচান’ (ভিডিও)
প্রকাশিত : ১০:৫৪, ৫ ডিসেম্বর ২০১৮ | আপডেট: ১৭:৪৭, ৫ ডিসেম্বর ২০১৮
কিডনির কাজ হলো শরীরে প্রসাব তৈরি করা। প্রসাব তৈরির মাধ্যমে কিডনি শরীরের বর্জ্য পদার্থগুলো বাইরে বের করে দেয়। আর যেগুলো শরীরের কাজে লাগে সেগুলো শরীরের কাজে সংরক্ষিত করে রাখে। কিন্তু যখন দুটো কিডনি ফেইলিউর হয়ে যায় তখন তারা শরীরের বর্জ্য বাইরে বের করতে পারেনা।
এগুলোকে বের করার জন্য দরকার রিপ্লেসমেন্ট থেরাপী। রিপ্লেসমোন্ট থেরাপী দু`ভাবে হতে পারে। একটা হচ্ছে ডায়ালাইসিস। অন্যটি হলো কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশান।
আমরা এখানে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশান নিয়ে আলাপ করব। মূলত কিডনি সংযোজন বা প্রতিস্থাপন ট্রানাসপ্লান্টেশান হিসেবে সবার কাছে পরিচিত। আমাদের দেশে ১৯৮২ সালে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশান চালু হয় তৎকালীন পিজি হসপিটালে যা এখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। আমরা অত্যান্ত সফলতার সাথে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশান করে যাচ্ছি।
রোগী যখন প্রাথমিক ভাবে বুঝতে পারে তার প্রসাবের পরিমাণ কম হচ্ছে বা শরীর ফুলে যাচ্ছে, অতিরিক্ত ক্লান্তি লাগছে অথবা তার রক্তশূণ্যতা দেখা দিচ্ছে এরকম পর্যায়ে সে কিডনি চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়। তখন আমরা তাকে পরামর্শ দিই যে, আপনার কিডনি রিপ্লোসমেন্ট থেরাপী লাগবে। ট্রান্সপ্লান্টেশানের অনেকগুলো ধাপ বা প্রক্রিয়া আছে। আমাদের দেশে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশান নিয়ে আইন আছে। যেটা প্রথম ১৯৯৯- এ পাস হয়। সেটাকে রিভিউ করে ২০১১ সালে অনেককে এটার সাথে এড করা হয়।
কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন আমাদের দেশে এখন এমন এক পর্যায়ে এসেছে, অর্থাৎ আমরা লিভিং রিলেটেড ট্রান্সপ্লান্টেশন করে থাকি। অর্থাৎ আপনি যদি আপনার ভাইকে কিডনি দিতে চান সেটা হবে লিভিং রিলেটেড ট্রান্সপ্লান্টেশন। একইভাবে স্বামী স্ত্রী, বাবা মা, ভাই বোন, চাচা, মামা, ফুপু, সকল ধরনের কাজিন, এগুলো সব লিভিং রিলেটেড ট্রান্সপ্লান্টেশন। এ আইনের মধ্য থেকে অনেকে চাইলে কিডনি ডোনেট করে আত্মীয় স্বজনকে বাঁচাতে পারেন।
কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশানের আরেকটা পদ্ধতি আছে। সেটাকে বলা হয় braindeath কিডনি ডোনার। এটা আমাদের দেশে এখনো চালু করতে পারিনি। কিন্তু আমরা চেষ্টায় আছি। কেউ যদি মরনোত্তর বা braindeath কিডনি ডোনেট করতে না চায় আমরা তো জোর করে কিডনি নিতে পারি না। এজন্য আমাদের জনসচেতনতা দরকার। গণমাধ্যমকর্মীরা এই জনসচেতনতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারেন। আমাদের দেশে এখন প্রচুর রোড এক্সিডেন্ট হচ্ছে। অস্বাভাবিক মৃত্যুর সংখ্যা কম নয়। braindeath মানেই কিন্তু একজন রোগী মারা যাওয়া। সেই রোগীকে ventilation- এর মাধ্যমে আইসিইউতে রাখা হয়। কিন্তু ventilation খুলে ফেললে সেই রোগীর আর জ্ঞান থাকে না। দেশের জনগণকে যদি এই জিনিশটা বুঝানো যায়, যে আমি মারা যাচ্ছি, কিন্তু আমার কিডনি দিয়ে আরেকজন মানুষ বাঁচুক- তাহলে অনেক প্রাণ বাঁচানো সম্ভব।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, রেনাল ট্রান্সপ্লান্ট ডিভিশন, বিএসএমএমইউ।
ভিডিও দেখুন: