ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪

মেক্সিকো কোচের কটাক্ষই তেতিয়ে দিয়েছে নেইমারকে: জিকো

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৩:১১, ৪ জুলাই ২০১৮

মেক্সিকোর বিপক্ষে এবারের বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা ম্যাচ জিতে শেষ ষোলোয় খেলা নিশ্চিত করেছে ব্রাজিল। ওই ম্যাচে অসাধারণ নৈপূণ্য দেখান ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তী নেইমার। যিনি আগের ম্যাচগুলোতে নিজেকে খুঁজে বেড়াচ্ছিলেন।

নেইমারের এই পারফরমেন্সের চুলচেরা বিশ্লেষণ যখন চলছে তখন ব্রাজিলের এক সময়কার কিংবদন্তী ফুটবলার জিকো দিলেন মজার তথ্য। তার মতে নেইমারের সাফল্যের নেপথ্যে মেক্সিকো কোচ কার্লোস ওসোরিয়ো। সেটা কিভাবে? জিকোর ভাষ্য, ম্যাচের আগে কার্লোস যে মন্তব্য করেন তাতেই তেতে উঠেন নেইমার। ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজারে লেখা এক বিশেষ নিবন্ধে এই মন্তব্য করেন জিকো। নিবন্ধের চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো-

মেক্সিকো কোচ কার্লোস ওসোরিয়ো দেখছিলাম প্রাক-ম্যাচ সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন, কুতিনহোকে কেন জানি নেইমারের চেয়ে বেশি বিপজ্জনক মনে হয় তাঁর কাছে। আমার ধারণা, লুই ফিলিপ স্কোলারির কাছ থেকে পরামর্শ পেয়ে মেক্সিকোর কোচ অতি উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলেন।

এটা কোনো রকেট সায়েন্স নয়। ফুটবল খেলাটা সবাই অল্পবিস্তর বুঝতে পারে এখন। এবং, বার বার বলছি কোচ হিসেবে ম্যাচের আগে প্রতিপক্ষের মহাতারকার ইগোকে উস্কে দিতে যাওয়াটা আগুন নিয়ে খেলতে যাওয়ার সমান।

শেষ ষোলোর ম্যাচের আগে যদি নেইমারের একটা খোঁচার দরকার পড়ত, মেক্সিকোর কোচই সেটার ব্যবস্থা করে দিলেন। তিনি যে ম্যাচের আগে ব্রাজিলীয় তারকার নাটকীয়তা নিয়ে কটূক্তি করলেন, তাতেই জেগে উঠল নেইমার। পুড়লেন প্রতিপক্ষ কোচ।

কী অসাধারণ একটা ম্যাচ হল! যেমন রণনীতির দিক থেকে ভালো ছিল, তেমনই দেখতেও সুন্দর লাগল। ব্রাজিল যেখানে যখনই খেলুক, তাদের কাছ থেকে মানুষ সুন্দর ফুটবল দেখতে চায়। জেতাটা নিশ্চয়ই গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু একই সঙ্গে আনন্দ দিয়েও তো জিততে হবে।

তিতের ব্রাজিল যেমন টেকনিক্যাল ফুটবল খেলছে, তেমনই সৌন্দর্যও মেশাচ্ছে। এ বারের বিশ্বকাপে ব্রাজিল শুরু থেকে কুটিনহোকে প্রধান করে ছক সাজাচ্ছিল। মেক্সিকোর বিরুদ্ধে সেটা ওরা পাল্টে ফেলে উইং হাফ এবং উইং ব্যাককে বেশি প্রাধান্য দেয়।

সেই কারণেই ফিলিপে লুইস এবং প্যাগনার বার বার বিপক্ষের ছয় গজ বক্সে হানা দিতে পারছিল। আর থিয়োগা সিলভা মাধখানটা পাহাড়া দিচ্ছিল যাতে কাউন্টার অ্যাটাকে মেক্সিকো গোল করতে না পারে।

উইলিয়াম আর প্যাগনার দারুণ খেলেছে। ওদের জন্যই ডান দিকে একের পর এক আক্রমণের ঝড় তুলল ব্রাজিল। যদি ম্যাচটা আবার দেখেন ভাল করে, দেখবেন ডান দিকে কী দুর্দান্ত ভাবে জুটি গড়ে ফেলেছিল উইলিয়ান আর প্যাগনার।

আর বাঁ দিকে ফিলিপে লুইস জোট বেধেছিল নেমারের সঙ্গে। লুইস যখন উপরে উঠছিল নেমারকে সাহায্য করার জন্য, তখন কুটিনহো, জেসুস, প্যাগনার নীচে নেমে আসছিল রক্ষণে  থিয়াগো সিলভা আর মিরান্ডাকে ভরসা দেওয়ার জন্য। তিন জনের রক্ষণের সামনে কুটিনহো ‘ব্লকার’-এর ভূমিকা নিচ্ছিল।

ব্রাজিল খেলছিল ৩-৪-৩ ছকে। কিন্তু আক্রমণে যাওয়ার সময় ৩-২-৪-১ হয়ে যাচ্ছিল। আবার রক্ষণের সময় সেটাকেই করে দিচ্ছিল ৪-৩-৩। খেলতে খেলতে নকশায় এই বদল আনাটা মোটেও সহজ নয়। বিশেষ করে এমন প্রচণ্ড গতিতে যখন ম্যাচ হচ্ছে। তিতে এবং ওর দলকে এর জন্য কৃতিত্ব দিতেই হবে।

আর একটা জিনিস। যদি ভালো করে লক্ষ্য করেন, তা হলে মেক্সিকো ম্যাচে যখনই কোনও ব্রাজিলীয় ফুটবলার অ্যাটাকিং থার্ডে বল পাচ্ছিল, তার আশেপাশে দু’তিন জন সতীর্থ পৌঁছে যাচ্ছিল। এর ফলে  লং বল না খেলে দ্রুত পাস করে দেওয়া সম্ভব হচ্ছিল।

এর সঙ্গে রয়েছে ‘অফ দ্য বল রান’ অর্থাৎ বল ছাড়া দৌড়। এই জিনিসগুলোই ব্রাজিলকে ভয়ঙ্কর করে তুলেছে। কেউ কি খেয়াল করেছেন যে, এমনকি নেমারও টিমগেম খেলছে! বল নিয়ে অহেতুক কারুকাজ করা বন্ধ করে ও দ্রুত পাস করে দিচ্ছে। প্রফেসর (তিতেকে এই নামেই ডাকে ব্রাজিলের ফুটবল মহল) হোমওয়ার্ক করেছেন এবং যাকে যেটা বলা দরকার, বলতে ভয় পাচ্ছেন না।

ওঁকে দেখে আমাদের চিরসবুজ মারিয়ো জাগালোর কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। দলের উপর তিতের কী দারুণ নিয়ন্ত্রণ, সেটা বোঝা যাচ্ছে ব্রাজিলের রক্ষণের শৃঙ্খলা দেখে। তেমনই আক্রমণে ঝাঁঝ।

সূত্র : আনন্দবাজার।

/ এআর /


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি