‘মেধাবীরাই আ.লীগ-ছাত্রলীগের রাজনীতি করে’
প্রকাশিত : ১৯:১২, ২৯ জানুয়ারি ২০১৮ | আপডেট: ১৯:৫০, ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮
বাহাদুর বেপারী। একসময়ের রাজপথ কাপানো ছাত্রনেতা। ১৯৯৮ সালে থেকে টানা ৪ বছর বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এরপর দলের বড় কোনো পদ-পদবীতে না থেকেও কাজ করে চলেছেন তৃণমূলের অবহেলিত মানুষদের নিয়ে। নিজ হাতে গড়ে তুলেছেন বিবি ফাউন্ডেশন নামে একটি উন্নয়নমূলক সংগঠন।
জাতীয় রাজনীতির বাইরে ওই সংগঠনটির চেয়ারম্যান হিসেবে নীরবে মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন শরীয়তপুর-৩ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী এই নেতা।
তিনি কথা বলেছেন এখন ও তখনকার ছাত্ররাজনীতি, দলে ভেড়া সুবিধাবাদী, নিজের পাওয়া না পাওয়ার নানা বিষয় নিয়ে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ইটিভি অনলাইনের প্রতিবেদক আলী আদনান।
একুশে টেলিভিশন অনলাইনঃ অনেক জনপ্রিয় ছাত্রনেতাকে পরবর্তীতে আর জাতীয় রাজনীতিতে দেখা যায় না। এটা কেন?
বাহাদুর বেপারীঃ মানুষ বেঁচে থাকে কর্মের মাঝে। কাজ না করলে টিকে থাকবেন কিভাবে? যখন আমরা কাজ করেছি তখন সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ পদে আমরা ছিলাম। মাঝখানে কাজ করিনি। তাই থাকা হয়নি। আওয়ামী লীগ বড় দল। এখানে কাজের মধ্য দিয়ে নিজেকে টিকিয়ে রাখতে হয়। কাজ না করে স্রোত থেকে ছিটকে পড়লে কাংখিত লক্ষে পৌঁছা সম্ভব হবে না।
একুশে টেলিভিশন অনলাইনঃ কিন্তু মেধাবী ছাত্রনেতারা যদি রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় হন, তাহলে তো পরবর্তীতে মেধাবীরা ছাত্র রাজনীতিতে উৎসাহ হারাবেন।
বাহাদুর বেপারীঃ নিষ্ক্রিয় কথাটার সঙ্গে আমি একমত নই। একেক জনের কাজের জায়গা বা কাজের ধাঁচ একেক রকম। আমি হয়তো ঢাকায় রাজনীতি করছি না। ফলে মিডিয়ার ক্যামেরা আমাকে দেখছে না। কিন্তু শরীয়তপুরের জনগণ, আমার নিজের এলাকার খেটে খাওয়া মানুষ আমাকে সব সময় পায়। তাদের সান্নিধ্য আমাকে অনুপ্রাণিত করে। আমি একটি উন্নয়নমূলক সংগঠন নিয়ে কাজ করি। এতেও রাষ্ট্রের উন্নয়ন হয়। জনগণের উন্নয়ন হয়। আমি মানুষের সঙ্গে আছি। এটাই আমার তৃপ্তি।
দ্বিতীয়ত, আপনি বললেন মেধাবীরা ছাত্ররাজনীতিতে উৎসাহ হারাবে। মেধাবী মানে কী? যারা শুধু বই মুখস্থ করে বছর বছর পাশ করে তারাই কী মেধাবী? আমি তা মনে করিনা। মেধা হচ্ছে নিজের ভিতর থেকে উৎসারিত জ্ঞান। যা নিজের উপলব্ধির ফল। এই মেধা গ্রামের একজন সাধারণ কৃষকের থাকতে পারে। আমার মায়ের থাকতে পারে। আমি মনে করি, মেধাবী ছাত্ররাই ছাত্রলীগ করে। মেধাবী মানুষগুলোই আওয়ামী লীগ করে। কারণ, তারা নিজের মেধা মননে দেশপ্রেম উপলব্ধি করে। চিন্তা চেতনায় নিজের আসল জাতিস্বত্ত্বাকে চিনতে পারে।
একুশে টেলিভিশন অনলাইনঃ দলীয় পদ পদবীতে ত্যাগী নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়নের অভিযোগ পাওয়া যায়। আপনি কী মনে করেন?
বাহাদুর বেপারীঃ না, আমি একমত না। যে কর্মে থাকে, বর্তমানে থাকে, নেতাকে অনুসরন করে তাকে কখনোই অবমূল্যায়ন করা সম্ভব না। যে নিজেকে `বঞ্চিত` মনে করে সে বঞ্চিত হয়েই আছে। আমি বলব, নেতাকে অনুসরণ করুন। মূল্যায়ন আসবেই। একটা না একটা পর্যায়ে পদ পেয়ে যাবেন। আপনি মানুষের ভালোবাসা পাচ্ছেন। এটার চাইতে বড় মূল্যায়ন আর কী আছে?
একুশে টেলিভিশন অনলাইনঃ দল ক্ষমতায়। চারদিকে ভূইফোঁড়দের দৌরাত্ম। এসব দেখে কখনো কী মনে হয়, ইস! কেন ছাত্ররাজনীতি করেছিলাম?
বাহাদুর বেপারীঃ না, বরং ছাত্ররাজনীতিটাই আমাদের পরিচয়। আজকে আপনি আমার সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন। আমি ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলাম বলেই তো আপনি আমার সাক্ষাৎকার নিতে উৎসাহী হলেন। আমার মতো সারা বাংলায় অসংখ্য বাহাদুর বেপারী আছেন। কই, আপনি তো তাদের সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন না। মানুষের কাজ কখনো বৃথা যায় না। প্রত্যেকটা কাজেরই একটা ফলাফল আছে। এটা বিজ্ঞান স্বীকৃত কথা। ছাত্ররাজনীতি যদি কেউ মহৎ উদ্দেশ্যে করে তবে অবশ্যই তার ভালো ফল আছে। একটা ছেলে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি। তাকে তার জেলার বা ওই মহানগরের সবাই চেনে। এটাও তো একটা প্রাপ্তি।
একুশে টেলিভিশন অনলাইনঃ বর্তমানে রাজনীতিতে `হাইব্রীড` শব্দটি খুব পরিচিত। সাবেক ছাত্রনেতা হিসেবে ওইসব সুবিধাবাদীদের কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
বাহাদুর বেপারীঃ মহাসমুদ্রের বিশাল জলরাশিতে যখন কোন নোংরা পানি ঢুকে যায়, তখন ওটা আর নোংরা থাকে না। পরিষ্কার হয়ে যায়। আজকে যাদেরকে হাইব্রীড হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে তাদেরকেও স্বাগতম জানানো দরকার। আওয়ামী লীগ রাজনীতির ইতিহাসে বড় স্রোত। অনেকে আসছে, আসবে। কাজ প্রমাণ করে দেবে কে ভাল কে খারাপ। গণ সংগঠন হিসেবে কাউকে বাদ দিতে পারি না। বঙ্গবন্ধু উদারচিত্তে সবাইকে ডাকতেন।
একুশে টেলিভিশন অনলাইনঃ বর্তমান ছাত্রলীগের রাজনীতি কেমন হওয়া দরকার বলে আপনি মনে করছেন?
বাহাদুর বেপারীঃ আমি ছাত্রলীগ থেকে বিদায় নিয়েছি তাও আজকে ষোল বছর। আমি দায়িত্বে থাকা অবস্থায় যে পৃথিবীতে এসেছে সেও এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হচ্ছে বা পড়ছে। অর্থাৎ সময়ের স্রোতে প্রজন্মের চিন্তায় বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। সেই বিবেচনায় এখনকার ছাত্রলীগ কী করা উচিত তা এখনকার ছাত্রলীগ নেতারাই ভালো বুঝবেন। ওরা এখন যে প্রেক্ষাপটের মুখোমুখি হচ্ছে তা আমরা হইনি। তবে আমি মনে করি, যা কিছু ইতিবাচক তাই গ্রহণ করা উচিত।
একুশে টেলিভিশন অনলাইনঃ ছাত্রলীগ তার গৌরবান্বিত ঐতিহ্য রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে বলে অনেকে অভিযোগ করেন। হল দখল, সিট দখলসহ নানা ধরনের দুর্বৃত্তায়নের অভিযোগ এখন ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে পাওয়া যায়। উত্তরণের উপায় কী?
বাহাদুর বেপারীঃ ছাত্রলীগ যে করে তার অবশ্যই একটা চেতনা আছে। আমাদের সেই চেতনার বাতিঘর শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার নীতি, নৈতিকতা ও আদর্শ অনুসরণ করলেই অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। যে শেখ হাসিনাকে নেতা মানবে তার পক্ষে কোন অন্যায় সম্ভব না। যদি সে অন্যায় করে তাহলে বুঝতে হবে আনুগত্যে গলদ আছে।
একুশে টেলিভিশন অনলাইনঃ ডাকসু নির্বাচন নিয়ে দাবি উঠছে। আপনার অভিমত…
বাহাদুর বেপারীঃ অবশ্যই ডাকসু নির্বাচন দরকার। শুধু ডাকসু নয়, দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রসংসদ দরকার। যা প্রকৃত ছাত্রদের প্রতিনিধিত্ব করবে। তবে শীতকালের ওয়াজ গরমকালে করলে হবে না। দুপুরের খাবার দুপুরে খেতে হয়, রাতে নয়। ঠিক তেমনি ছাত্রসংসদ নির্বাচন নিয়ে আন্দোলন করার জন্য এই সময়টা ভালো নয়। এটা নির্বাচনের বছর। যে কোন কিছুর বিনিময়ে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে জয়যুক্ত করতে হবে। যারা আন্দোলন করছে তাদের সেটা বুঝা উচিত। এসব আন্দোলনে একদিকে জনগণের মোটিভ ঘুরে যেতে পারে, আবার মৌলবাদী শক্তি সুযোগ নেওয়ার জন্য উঁৎ পেতে থাকবে।
একুশে টেলিভিশন অনলাইনঃ আগামী নির্বাচন নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কী?
বাহাদুর বেপারী : আমি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শরীয়তপুর- ৩ আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী। আমার বিশ্বাস, আল্লাহর রহমতে ও জনগণের দোয়ায় জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে নৌকা প্রতীকে নির্বাচনের সুযোগ দেবেন। আমি ভাগ্যবান, শরীয়তপুর-৩ আসনের জনগণের ভালবাসা আমি পাই। ঢাকার বাহাদুর বেপারী ও শরীয়তপুরের বাহাদুর বেপারী এক না। শরীয়তপুরের সাধারণ মানুষের ভালোবাসায় আমি সিক্ত। সে এক অন্যরকম অনুভূতি।
একুশে টেলিভিশন অনলাইনঃ আমাদেরকে সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
বাহাদুর বেপারী : আপনাকেও ধন্যবাদ। একুশে পরিবারের প্রতি শুভেচ্ছা।
/ এআর /
আরও পড়ুন