মেহেরপুরে প্রবীণদের প্রতি অন্যরকম ভালবাসা
প্রকাশিত : ১৭:৩০, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | আপডেট: ১৭:৩২, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
মেহেরপুর সদর উপজেলার ৮শ’ শতাধিক বৃদ্ধের জন্য এক অনন্য ভালবাসার দিন উপহার দিলেন কুলবাড়িয়া গ্রামের যুবকরা। গ্রামের ঈদগাহ ময়দানে বৃদ্ধদের জন্য ব্যবস্থা করেন সকাল ও দুপুরে খাওয়া-দাওয়ার।
সকালে দুই, চিড়ি, মিষ্টি, বুদিয়া এবং দুপুরে মাংস, ডাল, ভাজি, সবজি ও ভাত। এছাড়া নিজের পায়ে ঠিকমত হাঁটতে পারেন না এমন মুরুব্বিদের জন্য উপহার হিসেবে ক্র্যাস, লাঠি প্রদান করা হয়।
“মুরুব্বিদের মিলনমেলা” নামে ওই অনুষ্ঠানে খোশগল্প, কোলাকুলি ও পারস্পারিক আলাপচারিতায় মহাখুশি ওই এলাকার প্রবিণরা।
সকালে নাস্তার পর আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। নির্ধারিত প্যান্ডেলে প্রবিণরা বসে একে অপরের সাথে ভাব বিনিময় করেন। এসময় তারা ফিরে যান শৈশবে ফেলে আসা স্মৃতিময় দিনগুলোতে। সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, পড়ালেখা, দুরুন্তপনা করা কোন কিছুই বাদ যায়না আলোচনায়।
এবার দশম বারের মত সদর উপজেলার ৪০টি গ্রামের আট শতাধিক বৃদ্ধদের জন্য এমন আয়োজন করতে পেরে খুশি
কুলবাড়িয়া গ্রামের যুবকরা।
বৃদ্ধ বয়সে ফেলে আসা দিনগুলোর সহপাঠি, সহকর্মী, বন্ধু যাদের সাথে সোনালী দিন কাটিয়েছেন তাদের স্মৃতিতে খুঁজে বেড়ান বৃদ্ধরা। তাই বৃদ্ধদের স্মৃতি হাতড়ানো সোনালী দিনের খবরা খবরের বাস্তব রূপ দিতে এই অনন্য আয়োজন যুবকদের।
অয়োজকরাও বৃদ্ধদের একত্রিত করতে পেরে তাদের স্মৃতি রোমন্থনে খুশি হন, দোয়া চেয়ে নেন তারা।
এলাকার চাঁদপুর গ্রামের অংশগ্রহণকারী মুরুব্বি বীর মুক্তিযোদ্ধা রায়হান বলেন, মিলন মেলায় অংশগ্রহণ করতে পেরে খুব ভাল লাগছে। খাওয়া দাওয়া খুব ভাল হয়েছে। অনেক মুরুব্বিদের সাথে আলাপচারিতা, মতবিনিময় সহ কুলাকুলি করে আনন্দ পেলাম। যুবকরা গ্রামে গ্রামে এরকম আয়োজন করলে আমাদের গর্বে বুক ভরে যেত।
পৌর কাউন্সিলর আব্দুর রহিম বলেন, এই আয়োজনে অংশ নিতে পারা এক অন্যরকম অনুভূতি। এক সাথে এত সমবয়সি মানুষের দেখা হওয়া খুবই ভাগ্যের বেপার। তিনি আয়োজকদের প্রতি কৃতজ্ঞা ও ধন্যবাদ জানান।
প্রফেসর ড. গাজিউর রহমান বলেন, এধরনের আয়োজন সচরাচর আর দেখা যায়না। এখানে আসতে পেরে খুব খুশি লাগছে। তবে বিষাদও লাগছে। কারণ গেল বছরে আমরা যারা অংশ নিয়েছিলোম তাদের মধ্যে থেকে ২৪ জন মুরুব্বি মারা গেছেন। গেল বছরও এই অনুষ্ঠানে একসাথে খাওয়া-দাওয়া করেছি এবছর এসে তাদের আর পেলাম না।
মিলন মেলার প্রধান উদ্যোক্তা খাইরুল ইসলাম বলেন, আমরা নিজেদের বৃদ্ধা মা-বাবার প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা জানাতে তাদের সম বয়সিদেরও একত্রিত করে থাকি। এতে গ্রামের মুরব্বিরা এলাকার অপরাপর ৪০টি গ্রামে তাদের সম বয়সি মুরব্বিদের সাথে আড্ডায় মেতে ওঠেন। এটা এ বছর নিয়ে পর পর ১০ বছর ধরে করা হচ্ছে। আমরা নিজেরাই এ মিলন মেলার আয়োজন করি। এ কাজে বাইরের কারোর কোন চাঁদা নেওয়া হয়না।
“মুরুব্বিদের মিলনমেলা” অনুষ্ঠানের সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক আবু তাহের বলেন, অহরহ খবরে ছাপা হয়, শোনা যায় বৃদ্ধ বাবা-মাকে রাস্তায় ফেলে দেয়, বয়স্ক নিবাসে রেখে আসে, লাশ নিতে অপারগতা প্রকাশ করে। মনে হয় বৃদ্ধ বাবা-মা তাদের একটু সহানুভূতি আদর ভালবাসা পাবার অধিকার হারিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু এই গ্রামের যুবকরা বৃদ্ধদের নিয়ে এই ব্যতিক্রমী আয়োজন করে আসছে।
এএইচ
আরও পড়ুন