ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪

মেহেরপুর থেকে শান্তিনিকেতন

প্রকাশিত : ১৭:৫২, ৬ ডিসেম্বর ২০১৭ | আপডেট: ১৮:০৪, ৬ ডিসেম্বর ২০১৭

আশীষ মজুমদার

আশীষ মজুমদার

দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি রাষ্ট্রের জন্ম হয়। এ কারণে পূর্ব বাংলার অধিকাংশ হিন্দুরা জন্মভূমি ছেড়ে হিন্দুস্তান তথা ভারতে পাড়ি জমান। অন্যদিকে ভারতের মুসলমানরা পাকিস্তানে আসেন। অনেকটা বাধ্য হয়েই তখন হিন্দু-মুসলমানদের জন্মভিটা ছাড়তে হয়েছে। আবাল-বৃদ্ধ-বনিতাসহ সব বয়সীদেরই ধর্মীয় এ বিভাজনের রোষাণলে পড়তে হয়েছে। দীর্ঘদিন পর্যন্ত দু’দেশে এ ধরনের লোক বিনিময় চলে।

আশীষ মজুমদার মেহেরপুরের সবুজ-শ্যামলিমা পরিবেশে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু মাত্র ছয় মাস বয়সেই তাকে দ্বি-জাতি তত্ত্বের কোপানলে পড়তে হয়েছিল। জন্মভিটা মেহেরপুর ছেড়ে তাকে বাবা-মায়ের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গে পাড়ি জমাতে হয়। পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানে তারা বসবাস শুরু করেন। ওখানেই তার শৈশব-কৈশোর কেটেছে। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স-মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। ছাত্রজীবন শেষে গভর্মেন্ট অফ ইন্ডিয়ায় অল ইন্ডিয়া সার্ভিসে তিনি চাকরি জীবন শুরু করেন। কালচক্রের নানা বাঁক পরিবর্তন সাপেক্ষে একসময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বীরভূম জেলার শান্তিনিকেতনে চলে আসেন। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত শান্তিনিকেতনের সুনির্মল পরিবেশে এখন তার অবসর সময় কাটছে।

কর্মস্থলে আশীষ মজুমদার। ফাইল ছবি

সংস্কৃতিমনা একটি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছেন আশীষ মজুমদার। তার বাবা হরিপদ মজুমদার সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি ক্রীড়া ও মঞ্চনাটক খুবই পছন্দ করতেন। মা রেনুকা মজুমদার গৃহিনী হলেও কবিতা-সঙ্গীতে ভালো দখল ছিল। ‘গীতবিতান’র প্রতিটি লাইন তার মুখস্ত ছিল। মূলত মায়ের কাছ থেকেই তিনি সঙ্গীতচর্চার পাশপাশি ছড়া লেখার অনুপ্রেরণা পেয়েছেন। চার ভাইবোনের মধ্যে তিনি বড়। তার মেজ ভাই নির্মল্য মজুমদার একজন অধ্যক্ষ। ছোট ভাই কল্যাণ মজুমদার ওমানে থাকেন। একমাত্র বোন সোমা ‍মুখার্জী। তার স্ত্রী স্নিগ্ধা মজুমদার। তিনি একটি মহাবিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। তাদের ঘরে দুই সন্তান রয়েছে। মেয়ে ঐশ্বর্য রূপা পিএইচডি করেছেন। ছেলে অর্কজ একটি মহাবিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করছেন।

আশীষ মজুমদার ছড়া নিয়ে নিয়মিত গবেষণা করেন। রবীন্দ্র-সতেন্দ্র-সুকান্তের লেখা তার খুবই পছন্দ। এছাড়া নিজে ছড়া রচনার ক্ষেত্রে ছন্দ-বৈচিত্রকে প্রাধান্য দেন। বিষয়বৈচিত্রে মানবিক ও সচেতনতামূলক দিকটি সুস্পষ্টভাবে উপস্থাপন করেন। উদাহরণস্বরূপ; সম্প্রতি ‘এ কোন সকাল’ নামে একটি ছড়া রচনা করেছেন তিনি। এতে ধর্মীয় কুসংস্কারের বিষয়টি তুলে ধরেছেন। তিনি মানব সমাজকে ধর্মীয় বাড়াবাড়ি থেকে বেরিয়ে আসতে বলেছেন।

তিনি লিখেছেন,

                        এ কোন সকাল

                        রাতের চেয়েও অন্ধকার

                        হে ঈশ্বর

                        বল তুমি কার?

                        ধর্মের না মানুষের

                        প্রকৃতির না ধ্বংসের?

এ  পর্যন্ত তিনি দুই শতাধিক ছড়া লিখেছেন। কলকাতার একটি স্বনামধন্য প্রকাশনী থেকে এগুলো নিয়ে খুবই শিগগিরই একটি সংকলন প্রকাশিত হবে।

আশীষ মজুমদার নিয়মিত গানের রেওয়াজ করেন। বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও সঙ্গীত পরিবেশন করেন। রবীন্দ্র সঙ্গীতের পাশাপাশি আধুনিক সঙ্গীতেও তার ভালো দখল রয়েছে। শান্তিনিকেতনে বাড়ি হওয়ায় রবীন্দ্র সঙ্গীত শিক্ষার্থীদের দেখভাল করা সহ বিভিন্নভাবে সাহায্য করেন। বিশিষ্ট রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সাদি মহম্মদও তার সহচার্যে থেকে শান্তিনিকেতনে পড়াশোনা করেছেন।

সস্ত্রীক আশীষ মজুমদার। ফাইল ছবি

একজন আবৃত্তিশিল্পী হিসেবে ওপার বাংলায় আশীষ মজুমদারের খুব নামডাক রয়েছে। মঞ্চনাটকের সঙ্গেও তিনি ওতপ্রোতভাবে জড়িত রয়েছেন। তার লেখা কয়েকটি নাটক কলকাতার বিভিন্ন স্থানে নিয়মিত মঞ্চস্থ হচ্ছে।

বহু প্রতিভার অধিকারী আশীষ মজুমদার আরও জানান, ছাত্রজীবনে বিতর্ক প্রতিযোগীতায়ও তার অনেক সুনাম ছিল। বিভিন্ন বিতর্কে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে বহুবার পুরস্কৃত হয়েছেন।

ভাগ্নির বিয়ে উপলক্ষে সম্প্রতি তিনি ঢাকায় এসেছেন। বাংলাদেশের মাটি স্পর্শ করার সঙ্গে সঙ্গেই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি। আগামী সপ্তাহে জন্মভিটা মেহেরপুরে যাবেন বলে জানিয়েছেন।

ঢাকায় আসার পর থেকেই এখানকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলোতে ঘুরছেন তিনি। গত মঙ্গলবার কারওয়ান বাজারে একুশে টেলিভিশনের কার্যালয়ে আসেন। এখানকার কর্মকর্তা ও সংবাদকর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ের পাশাপাশি মতবিনিময়ও করেন।

তিনি বলেন, ওপার বাংলায় বাংলাদেশি চ্যানেল দেখার সুযোগ নেই। এটা খুবই দুঃখজনক। তারপরও তিনি মাঝে মধ্যেই ইউটিউবের মাধ্যমে একুশে টেলিভিশনসহ অন্যান্য চ্যানেলের অনুষ্ঠানমালা ও নাটক দেখেন। তাছাড়া অবসর সময়ে তিনি বাংলাদেশি নিউজ পোর্টালগুলোতে ঢুকে এ দেশের সর্বশেষ তথ্য জেনে নেন।

ইটিভি অফিসে আশীষ মজুমদার

সময় তিনি একুশে টিভি অনলাইনের প্রশংসা করে বলেন, `এখানকার সংবাদগুলো খুবই তথ্যনির্ভর। স্বল্প সময়েই সংবাদমাধ্যমটি পাঠকদের দৃষ্টি কেড়েছে। আশা করি, একুশে টিভি অনলাইন এভাবেই তার অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখবে।`

বাংলাদেশের আতিথিয়তার ব্যাপক প্রশংসা করে আশীষ মজুমদার বলেন, ‘এ দেশের মানুষ এতটা অতিথিপরায়ণ তা শুধু লোকমুখে শুনতাম। এবার স্বচক্ষে দেখেছি। এখানে এসে মনে হয়েছে, বাংলাদেশের মানুষ পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি আন্তরিক, নির্ভীক ও বন্ধুত্বপরায়ণ। পুনর্বার এ দেশের মাটি ও প্রকৃতির স্পর্শ পেয়ে আমি ধন্য হয়েছি। এখন থেকে মাঝে মধ্যেই আমার প্রিয় এ জন্মভূমিতে আসবো।’


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি