মে জাতীয় উপলক্ষে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের র্যালি
প্রকাশিত : ১৭:১৬, ১ মে ২০১৯
রাজধানী ঢাকার উপকন্ঠ শিল্পাঞ্চল সাভার-আশুলিয়ায় পহেলা মে জাতীয় শ্রমিক দিবস উপলক্ষে সড়ক-মহাসড়কগুলোতে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের র্যালি ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার সকাল থেকে আশুলিয়ার সড়ক-মহাসড়কগুলোতে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের ব্যানারে পহেলা মে জাতীয় শ্রমিক দিবস উপলক্ষে বর্ণাঢ্য র্যালি ও সমাবেশ করে।
পহেলা মে জাতীয় শ্রমিক দিবস ও আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে সাভার-আশুলিয়ায় যেসকল শ্রমিক সংগঠন র্যালি ও সমাবেশ করে তারা হলো, বিপ্লবী গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন, বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতি, পোশাক শ্রমিক ফেডারেশন, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন, জাতীয় শ্রমিক লীগ, বাংলাদেশ বস্ত্র ও পোশাক শ্রমিক ফেডারেশন, ফাউনটেন গার্মেন্টস শ্রমিক ইউনিয়ন সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ইউনিয়ন, বাংলাশে গার্মেন্টস এন্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনসহ বিভিন্ন সংগঠন।
সকাল সাড়ে ৯টায় আশুলিয়ার বাইপাইল করিম সুপার মার্কেটের সামনে বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতি র্যালি শেষে সমাবেশ করে। সমাবেশে সংগঠনটির কেন্দ্রিয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম বলেন, মৃতদের স্মরণ করো, জীবিতদের জন্য লড়াই করো। এ শ্লোগানকে সামনে রেখে তারা কয়েকটি দফা সরকারের কাছে দাবি জানান। দাবিগুলো হলো, ছাঁটাই নির্যাতন, হামলা-মামলা বন্ধ কর, ৮ হাজার টাকার পরিবর্তে ১৬ হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করার আহবান জানান, প্রডাকশনের চাপ কমাতে হবে, নারী শ্রমিকদের ওপর নির্যাতন বন্ধ করতে হবে, নারী শ্রমিকদের নিয়ন্ত্রণের জন্য পুরুষ কর্মকর্তাদের পরিবর্তে নারী কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে হবে, যখন তখন চাকুরিচ্যূতি বন্ধ কর, কারখানায় নজরদাবি বন্ধ, ছুটির ফাঁদে নির্যাতন বন্ধ, ছুটির নামে প্রতারনা বন্ধ, সরকারি চাকুরিজীবিদের এবং শ্রমিকদের বেতন বৈষম বন্ধ করার আহবান জানান তিনি।
এসময় গণসংহতির আশুলিয়া থানা সংগঠক মাসুম রানা বলেন, এ সরকার অনির্বাচিত সরকার, পুলিশ দিয়ে এসরকার ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতায় এসেছে। শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, এ সরকারে কাছে শ্রমিকদের দাবি করে কোন লাভ হবে না। যে সরকার দেশের মানুষের ভোটের অধিকার দেয় না তাদেরকে ক্ষমতা থেকে হটাতে হবে। বর্তমানে দেশ পুলিশি রাষ্ট্র হয়েছে। জালিম সরকার ফ্যাসিবাদি সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়ার জন্য সকল শ্রমিকদের প্রস্তুত হওয়ার আহবান জানান তিনি।
সকাল ১০টায় আশুলিয়া প্রেসক্লাবের সামনে বিপ্লবী গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি অরবিন্দু বেপারী (বিন্দু) এর নেতৃত্বে সমাবেশে মিলিত হন। লাল পতাকা হাতে শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে জাতীয় বিপ্লবী পার্টির অন্যতম নেতা আবুল কালাম আজাদ, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য সমন্বয়কারী কমরেড ডা. এমএ সামাদ, সমাজতান্ত্রিক মজদুর পার্টির সাধারণ সম্পাদক ডা. সামসুল আলম, শ্রমিক নেতা শফিকুল ইসলাম নেওয়াজ, বিপ্লবী গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সহ-সভাপতি মসিউর রহমান মিন্টু, তৌহিদুর রহমানসহ শ্রমিক নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
এসময় তারা ১১ দফা দাবি তুলেন। এসব দাবীগুলোর মধ্যে- ন্যূনতম মজুরি ১৬ হাজার টাকা ঘোষণা দাবি জানান। মহামান্য সুপ্রীম কোর্ট এর হাইকোর্ট বিভাগের একটি সিদ্ধান্ত ৪৬ ডিএলআর (১৯৪), পৃষ্ঠা ৪৪৫ হতে ৪৪৭ এ প্রকাশিত হয়। উক্ত সিদ্ধান্তের আলোকেও অত্র মামলার দরখাস্তকারী মৌখিক টার্মিনেশন বাবদ দাবিকৃত অর্থ পাইতে হকদার নহেন। এই আইন শ্রমিকদের জন্য কালো আইন বটে।
অত্র মহামান্য আদালত মৌখিক টার্মিনেশন চেয়ে অর্থ দাবিদার বটে, মৌখিক টার্মিনেশন শ্রম আদালত হতে খারিজ করতে পারবে না, আইএলও কনভেনশন ৮৭ ও ৯৮ এর ভিত্তিতে শ্রম আইন ও বিধিমালা সংশোধন করতে হবে, ইপিজেডসহ সকল সেক্টরে ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার নিশ্চিত করা, ইপিজেড শ্রমিকদের জন্য আলাদা আইন না করা, বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৯১ সংস্কার ও বাস্তবায়ন চাই, শিল্পাঞ্চলে শ্রমিকদের জন্য সরকারি হাসপাতাল ও বিনামূল্যে চিকিৎসা চাই, শ্রমিক ছাটাই মামলা-হামলা বন্ধ করা, শ্রমিক হত্যাকারি রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানাসহ তাজরীন ফ্যাশনের মালিক দেলোয়ার হোসেন ও সকল দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে ও শিল্পাঞ্চলে শ্রমিকদের বসবাস করার জন্য সরকারিভাবে কলোনী করার দাবি জানান হয়।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস এন্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশন এর সভাপতি রফিকুল ইসলাম সুজনের নেতৃত্বে শ্রমিকরা। তারা অবিলম্ভে পোশাক শিল্পের সরকার ঘোষিত ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন, ইপিজেডসহ সকল সেক্টরে অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার নিশ্চিত, শ্রমিক স্বার্থবিরোধী ধারা বাতিল করে শ্রম আইন সংশোধন, জাতীয় মজুরি ঘোষণা, কর্মস্থলে নিরাপত্তা, শ্রমিক ছাটাই, শ্রমিকদের ওপর নির্যাতন, মামলা-হামলা বন্ধসহ শ্রমিকদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান হয়। এছাড়াও সমাবেশ করেন আশুলিয়া শ্রমিক লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী,পরিবহন শ্রমিক লীগের নেতাকর্মী।
কেআই/
আরও পড়ুন