মোংলায় পানি বিশুদ্ধ করার দুই প্ল্যান্ট অচল, সুপেয় পানির সংকট
প্রকাশিত : ১৭:৪৯, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | আপডেট: ১৮:০১, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
মোংলায় পানির লবণাক্ততা ও জীবানুমুক্ত করণের জন্য জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে প্রদত্ত দুটি পানি শোধনাগারই দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। সুপেয় পানির সংকটে দিন কাটছে এর উপকারভোগীদের।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল কর্মকর্তা সোহান আহমেদ জানান, মোংলা উপজেলায় লবনাক্ততার কারণে সুপেয় পানির সংকট দীর্ঘদিনের। এই সংকট দূর করার লক্ষে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে বিভিন্ন সময়ে ২টি পানি শোধনাগার কেন্দ্রের ব্যবস্থা করা হয়। এই দুটিকে স্থাপন করা হয় যথাক্রমে ২০১৩ সালে সোনাইল তলা ইউনিয়নের আমড়াতলায় এবং ২০১৮ সালে মিঠাখালি ইউনিয়নের মিঠাখালি বাজার সংলগ্ন মসজিদের পুকুর পাড়ে। কেন্দ্র দুটিকে পরিচালনার জন্য কর্মীর মজুরী ও বিদ্যুৎ বিল প্রদানের জন্য লিটার প্রতি ৫০ পয়সা করে গ্রহণ করার নিয়ম করা হয়।
জানা গেছে, মিঠাখালি পানি শোধনাগারটির দরজায় ঝুলছে মরিচা ধরা একটি লোহার তালা। সেখানে কথা হয় মিঠাখালি নিবাসী আক্কাস আলী শেখের সঙ্গে, তিনি জানান, এটি চালু হবার পর থেকে এ এলাকার মানুষের পানির সংকট দূর হয়। কিন্তু এ সুবিধা বেশি দিন স্থায়ী হয়নি, দুই আড়াই বছর চলার পর কেন্দ্রটি হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর আর চালু হয়নি সেটি। এখন বাধ্য হয়ে পুকুরের লবণাক্ততা পানি ফিটকিরি, কখনো কখনো সরাসরিও পান করতে হচ্ছে তাদের।
তিনি আরও বলেন, এখন থেকেই পানির লবণাক্তটা বাড়তে শুরু করেছে। এখনও যদি এটি ঠিক না করে, তাহলে তাদের ভোগান্তীর আর শেষ থাকবে না।
এই শোধনাগারটি পরিচালনা করার জন্য ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃক একটি কমিটি গঠন করে দেয় স্থানীয়দেরকে নিয়ে ২০১৮ সালে। সেই কমিটির একজন সদস্য আবুল হোসেন শেখ বলেন, পানি শোধনাগারটি পরিচালনা করার সময় মাঝে মধ্যেই এটিতে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিতো। যার কারণে বার বার তাদের বড় অংকের অর্থ ব্যায় করতে হতো। বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য নামে মাত্র অর্থ গ্রহণ করে সে ব্যায় ভার মেটানো সম্ভব হচ্ছিল না তাদের পক্ষে। তাই বাধ্য হয়ে তারা তাদের উপর ন্যাস্ত দায়িত্ব থেকে মুক্তির জন্য শোধনাগারটির চাবি ও যাবতীয় কাগজপত্র ইউনিয়ন পরিষদে ফেরত দিয়ে দেন বলে জানান তিনি।
অপর দিকে উপজেলার সোনাইল তলা ইউনিয়নে আমড়াতলা বাজার সংলগ্ন অপর পানি শোধনাগার কেন্দ্রটিকেও তালারুদ্ধ অবস্থায় দেখতে পাওয়া যায়। যেটি ভূগর্ভস্থ লবনাক্ত পানি শোধন করে লবণাক্ততা দূর করতো। সেখানে কথা হয় ওই গ্রামের সরমা মন্ডলের সাথে।
তিনি বলেন, পানির সমস্যা দিন দিন প্রকট হচ্ছে। ধরে রাখা বর্ষার পানি শেষ হয়ে গেছে। এখন পুকুরের লবণাক্ততা ও ঘোলা পানি পান করতে হচ্ছে বাধ্য হয়ে। তিনিসহ অন্যান্যরা এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
পানি শোধনাগারটির কর্মী সাগর হাওলাদার বলেন, ২০১৩ সালে এটি যখন প্রতিষ্ঠিত হয়, বছর খানেক সেখান থেকে নির্বিঘ্নে পানি সরবরাহ করা যায়। তারপর থেকে দেখা দেয় নানা রকম যান্ত্রিক সমস্যা। কয়েকবার সে সকল সমস্যা বিশাল অর্থ ব্যয়ে সমাধান করা গেলেও পরবর্তীতে অর্থ সংকটের কারণে তা আর ঠিক করা হয়নি। যার কারণে বাধ্য হয়ে কেন্দ্রটি বন্ধ করে দিতে হয়েছে তাদের।
জনদুর্ভোগের বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে মোংলা উপজেলার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল কর্মকর্তা সোহান আহম্মেদ বলেন, জনগণের পানি নিয়ে ভোগান্তি মোটেও কাম্য নয় কর্তৃপক্ষের। এ সমস্যাটির সমাধানে তিনি অতিসত্তর বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদগুলোর জনপ্রতিনিধিদের সাথে কথা বলবেন এবং যাতে এই সংকট দূর হয় তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে তিনি জানান।
কেআই//
আরও পড়ুন