মৌলভীবাজারে জীবিত-মৃত ২২টি বিপন্ন মুনিয়া উদ্ধার
প্রকাশিত : ০৯:২০, ২ এপ্রিল ২০২৩
ছন ক্ষেত যাদের বেঁচে থাকার অবলম্বন। মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় সেই ছন ক্ষেতে গড়ে উঠছে আবাসন ও ফসলের মাঠ। অন্যদিকে মানুষের সক্ষমতা বেড়ে যাওয়ায় এখন আর ছনের প্রয়োজনীয়তা খুবই কম। কারণ এখন কেউই সস্তায় ছন কিনে ঘরের ছাওনী দেয়না। দেশের ৯৯ ভাগ ঘরই টিন ও ইটের। এতে কমে যাচ্ছে ছন ক্ষেত, অন্যদিকে শিকারীদের হাতে প্রতিনিয়তই ধরে বিপন্ন হচ্ছে ছোট্ট মুনিয়া পাখি। মুনিয়াদের ভাগ্যাকাশে এখন মেঘের ঘনঘটা।
ছনখলা বিলুপ্তের যুগে দেশের সিলেট অঞ্চলের চা বাগানের কিছু বাড়িঘরে ছনের ছাউনী থাকায় আলাধা করে রাখা হতো কিছু ছনখলা। কিন্তু চা বাগানেও এখন লেগেছে উন্নয়নের ছোয়া। শ্রমিকের ঘরে লেগেছে টিনের ছাউনী। কমেছে চা বাগানের ছনখলার প্রয়োজনীয়তাও। ক্রমশ: শত শত ছনখলায় গড়ে উঠেছে চারা বাড়ি, না হয় প্লান্টেশন। আবার কোথাও শ্রমিকের আবাসন। তবে নি:শেষ হতে হতে ঠিকে ছিল মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের কুরমা চা বাগানে ১১নং সেকশনে একটি ছনখলা। কিন্তু এই ছনখলায় কর্তৃপক্ষের উৎপাদনের চিন্তা আর শিকারীদের উত্তম স্থান।
পাখিপ্রেমী খোকন সিংহ জানান, এই ছনখলাই ছিল বিপন্ন মুনিয়া পাখির আবাসস্থল। ছোট ছোট মুনিয়া পাখি ছনখলায় বসবাস করতে পছন্দ করে। ছনখলার গোড়ার ভিতরে এরা ডিমপাড়ে এবং বাচ্চা ফোটায়। কুরমা চা বাগানের ১১নং সেকশনের ছনখলায় এবং ঝোপঝাড়ে মুনিয়াসহ বিভিন্ন রকমের পাখি রয়েছে।
তিনি বলেন, সময় পেলেই সেখানে ছবি তুলতে যান। শুধু তিনি নন এখানে মুনিয়াদের দেখতে দেশের পাখিপ্রেমীরা প্রায়শই ছুঠে যান সেখানে।
সরজমিনে দেখা যায়, কুরমা চা বাগানের মুনিয়াদের আবাসস্থলের অর্ধেক ইতিমধ্যেই প্লান্টেশন হয়ে গেছে। যদিও বাগান কর্তৃপক্ষ বলেছেন আর এক্সটেনশন করবেন না।
এদিকে এই ছোট পাখিগুলোও এখন মানুষের জিহ্বার লালসায়। প্রতিনিয়তই শিকারীরা উৎপেতে থাকে এদের ধরতে। বন বিভাগের চোখ ফাঁকি দিয়ে ছনখলার নিচে জাল পেতে একটা চক্র এদের ধরে জবাই করে এর মাংস রান্না করে খায়।
শুক্রবার বিকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খবর পেয়ে বনবিভাগ ও পরিবেশবাদী সংগঠন স্ট্যান্ড ফর আওয়ার এন্ডেঞ্জারড ওয়াইল্ডলাইফ (এসইডব্লিউ)র একটি টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে জবাই করা ১১টি ও জীবিত খাঁচায় বন্দি আরও ১১টি মুনিয়া পাখি উদ্ধার করে।
এ সময় আনসার আলী (৫০) নামে এক পাখি শিকারীকে আটক করে বন বিভাগ। পালিয়ে যায় আরও দুই শিকারী। ধৃত আনসার আলীর উপজেলার কানাইদাশী গ্রামের মৃত তাজ বক্সের ছেলে।
শ্রীমঙ্গল বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা শহীদুল আলম জানান, গোপন খবর পেয়ে তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে জীবিত ও মৃত ২২টি মুনিয়া পাখি, পাখি ধরার সরঞ্জামসহ একজনকে আটক করেন। এ ঘটনায় রাতেই মামলা দিয়ে পাখি ও আসামিকে কমলগঞ্জ থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, কুরমা চা বাগানের ছনখলায় প্রচুর মুনিয়া পাখি রয়েছে। এখানে চা বাগান বর্ধিত না করার জন্য বাগান কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে বনবিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এরপরও তারা ছনখলা কেটে চারা বাড়ি করেছেন। পরে বিষয়টি মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসানকেও লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।
পরিবেশবিদ ও পাখিপ্রেমী সিতেশ রঞ্জন দেব জানান, মুনিয়া খুবই ছোট পাখি। এর ওজন সর্বোচ্চ ১৫ গ্রাম। এই পাখির কতটুকুই আর মাংস। এটাও শিকার করে খেতে হয়! এই শিকারীদের বিরুদ্ধে শক্ত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক শ্যামল কুমার মিত্র জানান, জীবিত পাখিগুলোকে অবমুক্ত করে মৃত পাখিগুলোকে পুলিশের উপস্থিতিতে মাটিতে পুঁতে দেওয়া হয়েছে।
এএইচ
আরও পড়ুন