যশোরে খ্রীষ্টান পরিবারের বাড়িতে হামলা, আটক ৮
প্রকাশিত : ২৩:১০, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮
যশোরের শার্শা উপজেলার উলাশি ইউনিয়নের গিলাপোল গ্রামে শনিবার রাতে খ্রিষ্টান পরিবার জসিব জুড়ন দাসের(৮০)বাড়িতে হামলা চালিয়ে মারধর,ভাংচুর,বাড়িতে থাকা নারী সদস্যদের শ্লীলতাহানি ও স্বর্ণালংকারসহ মালামাল লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা যুবলীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ও ইউপি সদস্য তরিকুল ইসলাম মিলন ও তার সমর্থকদের বিরুদ্ধে।
এ ঘটনায় ২জন আহত হয়েছে। মিলনকে প্রধান আসামি করে স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের ১৭ নেতাকর্মীর নামে শার্শা থানায় একটি মামলা হয়েছে। এতে পুলিশ ৮জনকে আটক করেছে। এ ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন যাবত ইউপি সদস্য তরিকুল ইসলাম মিলন খ্রিষ্টান পরিবার জসিব জুড়ন দাসের কাছে চাঁদা দাবি করে আসছিল। শনিবার রাতে বাজারে এ নিয়ে জসিব জুড়ন দাসের ছেলে সালমন দাস(৪৫)এর সাথে মিলনের কথা কাটাকাটি হয়।
এক পর্যায়ে সালমন দাসের হাতে থাকা টর্চলাইট দিয়ে ইউপি সদস্য মিলনের মাথায় আঘাত করে। এরপর মিলনের সমর্থিত লোকজন হামলা চালায় জসিব জুড়ন দাসের বাড়িতে। এ সময় বাড়ির মধ্যে থাকা আসবাসপত্র ভাংচুরসহ লুটপাট ও বাড়িতে থাকা নারী সদস্যদের পড়নের পোষাক ছিড়ে ফেলে তারা। এ সময় তাদের হামলায় জসিব জুড়ন দাস ও তার ছেলে সালমন দাস আহত হয়।
খবর পেয়ে রাতে শার্শা থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। ওইদিন সকালে এ ঘটনায় শার্শা থানায় সালমন দাস বাদী হয়ে ১৭ জনের নামে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-১৭। পুলিশ অভিযান চালিয়ে ৮ জনকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠিয়েছে। আটককৃতরা হলো উলাশি ইউনিয়নের শরিফুল ইসলাম (৩২), আমিনুর রহমান (২৮), শ্যামল কুমার দাস (৩৫), আশিক হোসেন (২৯), আসাদুল(২৮), আক্তারুল ইসলাম(২১), আশরাফুল ইসলাম(২৩)ও কামরুজ্জামান খোকন(৩০)। আটকরা সবাই মিলনের সমর্থক।এ মামলার প্রধান আসামী তারিকুল ইসলাম মিলন রবিবার সকালে শার্শা থানার সামনে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের ঘটনার বিবরন দিলেও পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেনি বলে অভিযোগ বাদীর লোকজনের।
ইউপি সদস্য তরিকুল ইসলাম মিলন বলেন, সম্প্রতি জমি জমা সংক্রান্ত একটি শালিশী বৈঠকে উলাশি ইউনিয়নে সঠিক বিচারের দাবিতে প্রতিবাদ করায় উলাশি ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আয়নাল হকের সাথে তার বিরোধ হয়। সেই সুত্র ধরে, চেয়ারম্যান আয়নালের পোষ্যবাহিনীর লোকজন তার নামে মিথ্যা অপবাদ ছড়ায়। এমনকি তাকে আয়নাল চেয়ারম্যান বেধে রেখে মারধর করেছে এরকম ভিডিও চিত্র আছে গিলাপোলের সালমন দাসের কাছে বলে অপবাদ ছড়ায়।
শনিবার রাতে উলাশি বাজারে সালমানের কাছে সেই ভিডিও চিত্র চাইলে সে তাকে চর্টলাইট দিয়ে মাথায় আঘাত করে পালিয়ে যায়। তার মাথায় নাভারন বুরুজবাগন হাসপাতাল থেকে ৭টি সেলাই দেওয়া হয়। তখন তার লোকজন এর প্রতিবাদ করলে তাকে ও তার লোকজনের নামে মিথ্যা অপবাদ দেয় ঐ সংখ্যালঘু পবিারের লোকজন। সে বা তার কোন লোকজন এলাকায় কোন ভাংচুর লুটপাটের মত ঘটনা ঘটায়নি বলে দাবি করেন মিলন।
উলাশী গ্রামের বিজয় কুমার গিলাপোল গ্রামের মন্টু সরকার রাজু আহম্মেদ বলেন, মিলন মেম্বারের নামে মিথ্যা অপবাদ ছড়িয়ে এলাকায় তাকে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করছে এলাকার চেয়ারম্যানের কিছু লোকজন। মিলন মেম্বারকে মারধর করার ভিডিও আছে তা দেখাতে বললে চেয়ারম্যানের পোষ্য বাহিনীর লোকজন তার উপর চড়াও হয়। এবং তাকে সালমন নামে একজন লাইট দিয়ে মাথায় আঘাত করে হত্যার চেষ্টা করে।
এ ব্যাপারে উলাশি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আয়নাল হক জানান, মিলন মেম্বারের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই।একটি পার্ক নির্মাণ করে সেখানে দেহ ব্যবসা চালায়। ইউনিয়নের সকল কাজে নাক গলিয়ে থাকে। এ কারণে তাকে ইউনিয়ন পরিষদে আসতে নিষেধ করা হয়েছে। চাঁদাবাজির নানা অভিযোগ রয়েছে তার বাহিনীর নামে। চাঁদার দাবিতে রবিবার রাতে সংখ্যালঘু খ্রিষ্টান পরিবার জসিব জুড়ন দাসের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও লুটপাট চালায় তারা।
এ ব্যাপারে শার্শা থানার ওসি (তদন্ত)তাসলিম আহমেদ তুষার জানান, ঘটনা শোনার সাথে সাথে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। চাঁদাবাজির দাবিতে এই হামলা করা হয়েছে বলে তিনি বলেন। রবিবার সকালে থানায় ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এজাহারভুক্ত ৮ জন আসামীকে আটক করা হয়েছে। অন্য আসামীদের আটকে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।
কেআই/এসি
আরও পড়ুন