যাদের দাঁড়িয়ে কাজ, তারা আগাম সতর্ক হন
প্রকাশিত : ১৬:২০, ১২ নভেম্বর ২০২২
পায়ে ব্যথা শুনতে হয়তো গুরুতর রোগ মনে হচ্ছে না, কিন্তু বাস্তবে তা নয়। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে কাজ অনেক জটিল রোগের জন্ম দেয়। পেশাগত কারণে অনেককেই ক্রমাগত দাঁড়িয়ে কাজ করতে হয়। এর থেকে পায়ে ব্যথা, কোমরে চাপ... ইত্যাদি সমস্যার সূত্রপাত হয়। পায়ে ব্যথা শুনতে হয়তো গুরুতর রোগ মনে হচ্ছে না, কিন্তু বাস্তবে তা নয়। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে কাজ অনেক জটিল রোগের জন্ম দেয়। যেহেতু পেশার কারণেই দাঁড়িয়ে কাজ করতে হয়, তাই সমস্যার উৎপত্তিগত উৎস থেকে বেরিয়ে আসা যায় না। তবে কিছু নিয়ম মানলে সমস্যা জটিলতর হওয়া থেকে রুখে দেওয়া সম্ভব।
কী কী সমস্যা দেখা দেয়
ইঞ্জিনিয়ার, মেকানিক, চিকিৎসা পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত কর্মী, দোকানে বা মলে যারা কর্মরত... প্রত্যেক দিন সাত-আট ঘণ্টা যারা টানা দাঁড়িয়ে থাকেন, তাদের পায়ে ব্যথা-সহ নানা সমস্যা দেখা দেয়। ঠিক কী কী ধরনের সমস্যা দেখা দেয়? কী বলছেন বিষেজ্ঞরা।
প্রথমত, এদের স্পাইনের উপরে খুব চাপ পড়ে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, লাম্বার স্পাইনে ক্রনিক পেন হচ্ছে। সেই ব্যথা ক্রমশ পায়ের দিকে ছড়িয়ে পড়ে।
দ্বিতীয় সমস্যা হল, পায়ের তলার নার্ভে চাপ পড়ছে। খালি পায়ে দাঁড়িয়ে কাজ করা ক্ষতিকর। ভাল জুতো না পরলেও এই সমস্যা হয়। আমাদের পায়ের পাতায় যে কার্ভ আছে, তাকে বলা হয় আর্চ অব দ্য ফুট। দাঁড়িয়ে থাকা বা হাঁটার সময়ে ওই আর্চ ব্রিজের কাজ করে। যারা সারাক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকেন, তাদের ওই আর্চের উপরে অসম্ভব চাপ পড়ে। তার থেকে পায়ের তলার নার্ভে চাপ পড়ে ক্রনিক পেন তৈরি হয়। যাদের ফ্ল্যাট ফুট অর্থাৎ আর্চ নেই, তাদের সমস্যাটা আরও বেশি।
এ দু’টি ছাড়া আরও একটি সমস্যার কথা বলেন বিশেষজ্ঞরা। যার সঙ্গে নিউরোলজির সরাসরি যোগ নেই। বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে কাজ করলে ভ্যারিকোস ভেনের সমস্যা দেখা দেয়। ‘‘হাঁটার সময়ে আমাদের পায়ের রক্ত চলাচল বেড়ে যায়। সেই ব্লাড ভেনের মাধ্যমে হার্টে পৌঁছয়, আবার পায়ে ফিরে আসে।
যাওয়ার সময়ে রক্তকে অ্যান্টি গ্র্যাভিটি যেতে হচ্ছে। এই অ্যান্টি গ্র্যাভিটি যাওয়ার জন্য আমাদের মাসলগুলো রক্তকে পাম্প করে উপরে তোলে। এবং আমাদের ভেনের মধ্যে একটা ভাল্ভ থাকে, যাতে রক্তটা উল্টো দিকে নেমে না আসে।
ক্রমাগত যারা দাঁড়িয়ে থাকেন, তাদের পায়ের ওই ভাল্ভগুলো অকেজো হয়ে যায়। এতে ব্লাড পায়ের শিরায় এসে জমা হতে থাকে এবং শিরাগুলো দড়ির মতো ফুলে যায়। একেই ভ্যারিকোস ভেন বলা হয়।
সমস্যার সমাধান
এজন্য ভাল জুতো পরার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। নরম সোলের স্নিকার্স ধরনের জুতো পরতে হবে। সিলিকন সোল কিনতে পাওয়া যায়, সেটাও জুতোর ভিতরে ফিট করিয়ে নেওয়া যায়। যাদের দাঁড়িয়ে কাজ, তারা আগাম সতর্কতা হিসেবে এটি করতে পারেন।
লাম্বার স্পাইনের সমস্যার জন্য এক্সারসাইজ় ছাড়া আর কোনও উপায় নেই। স্পাইনের মাসল স্ট্রং রাখতে হবে ব্যায়ামের মাধ্যমে।
আসল কথা হল, পায়ের রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া ঠিক রাখতে হবে। এর জন্য স্ট্রেচিং, সাইক্লিংয়ের মতো এক্সারসাইজ় করতে হবে। টো-হিল রেজ়, পায়ের পাতা ক্লক ওয়াইজ-অ্যান্টি ক্লক ওয়াইজ় ঘোরানো। পায়ের তলায় একটা বল নিয়ে মাসাজ করা। যেমন, মেঝেতে বল রেখে পা দিয়ে গোড়ালি থেকে আঙুলের দিকে যাওয়া এবং তার পরে পিছিয়ে আসা।
কাজের মাঝে ছোট জায়গার মধ্যেই খানিক হাঁটাহাঁটি করে নেওয়া যায়। একটু বিরতি নিয়ে চেয়ারের উপরে একটা পা নব্বই ডিগ্রিতে তুলে দিয়ে শরীরটা সামনের দিকে ঝোঁকালে মাসল স্ট্রেচ হবে। এর পর আবার অন্য পা একই ভাবে স্ট্রেচ করুন।
রান্নাঘরে প্রত্যেক দিন যাঁরা দাঁড়িয়ে কাজ করেন, তাঁরাও পায়ের ব্যথায় ভোগেন। এ ক্ষেত্রে সঙ্গে একটা ছোট্ট পিঁড়ি বা নিচু টুল রাখুন। একটা পা টুলে আর একটা পা মাটিতে রেখে কাজ করুন। কিছুক্ষণ পরে অন্য পা টুলে রেখে দিন।
বাড়ি ফিরে হালকা গরম পানিতে পা ডুবিয়ে রাখলে উপকার পাওয়া যায়। এতে ক্লান্তিও কেটে যাবে, পায়ের মাসল-নার্ভ রিল্যাক্সড হবে।
সাধারণ মানুষের মধ্যে এ নিয়ে সচেতনতার অভাব আছে বলেই, তারা আগাম সতর্ক হওয়ার কথাও ভাবেন না। পায়ে এই জাতীয় সমস্যা হলে কোন ডাক্তারের কাছে যেতে হবে, সেটাও অনেক সময়ে বুঝতে পারেন না অনেকে। গোড়া থেকেই যদি স্ট্রেচিং করা হয় এবং ভাল জুতো পরা যায়, তা হলে এই সমস্যা থেকে অনেকটাই রেহাই মেলে।
এসবি/