যুব গেমসের কোচসহ ১২ খেলোয়াড় গ্রেপ্তার, কারাগারে ৭
প্রকাশিত : ০৯:০২, ৬ মার্চ ২০২৩ | আপডেট: ০৯:০৬, ৬ মার্চ ২০২৩
শেখ কামাল দ্বিতীয় বাংলাদেশ যুব গেমসের এবারের আসরে অংশ নেয়া রাজশাহীর এক কোচসহ ১২ জন খেলোয়াড়কে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশকে পেটানোর মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে রোববার সন্ধ্যায় তাদেরকে আদালতে পাঠানো হয়।
গ্রেপ্তার ১১ খেলোয়াড়ের মধ্যে তিনজন ছেলে ও আটজন মেয়ে। তাদের মধ্যে ছয়জনের বয়স ১৮ বছরের বেশি। এরা হলেন আলী আজম (১৯), আকাশ আলী মোহন (২০), রিমি খানম (১৯), পাপিয়া সারোয়ার পূর্ণিমা (১৯), মোছা. দিপালী (১৯) ও সাবরিনা আক্তার (১৯)।
অন্য পাঁচজনের বয়স ১৪ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে। আর গ্রেপ্তার কোচের নাম আহসান কবীর (৪৫)। মামলায় গ্রেপ্তার ১২ জন ছাড়াও রমজান (১৯) নামের আরেক খেলোয়াড়কে আসামি করা হয়েছে। তবে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
এই খেলোয়াড়েরা জুডো, কুস্তি, কারাতেসহ বিভিন্ন খেলা খেলেন। রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকায় তাদের বাড়ি। তাদের বিরুদ্ধে একজন পুলিশ সদস্যকে পেটানো এবং তার স্ত্রীর স্বর্ণের চেইন চুরির মামলা দেওয়া হয়েছে।
মামলার বাদির নাম গোলাম কিবরিয়া (৩০)। তিনি পুলিশের কনস্টেবল। তার বাড়ি রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার প্রেমতলী খেতুর গ্রামে। কিবরিয়া জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কর্মরত।
রোববার স্ত্রী রাজিয়া সুলতানা জয়াকে নিয়ে ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরছিলেন কনস্টেবল কিবরিয়া। দুপুরে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে গোলাম কিবরিয়াকে মারধর করা হয়। এরপর রাজশাহী রেলওয়ে থানা পুলিশ সবাইকেই থানায় নিয়ে যায়। বিকালে গোলাম কিবরিয়ার স্ত্রী রাজিয়া সুলতানা বাদী হয়ে ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
এরপর সন্ধ্যায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ১২ জনকে আদালতে নিয়ে যায় পুলিশ।
গ্রেপ্তার হওয়া ১৭ বছর বয়সী এক মেয়ে খোলোয়াড়ের চাচা বেলাল হোসেন বলেন, ‘আমার ভাতিজিসহ এইসব খেলোয়াড়রা ঢাকায় যুব গেমস খেলতে গিয়েছিল। খেলে পুরস্কারও পেয়েছে। খেলা শেষে তারা রোববার ধুমকেতু ট্রেনে আসছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘খেলোয়ারদের সবার ২৬ হাজার টাকা ও একটি মোবাইল ছিল একটি লাগেজে। ট্রেনে সেটি খুঁজে পাচ্ছিল না। তখন তারা ট্রেনে লাগেজটি খুঁজছিল। ওই সময় সিভিলে থাকা পুলিশ সদস্য গোলাম কিবরিয়ার সঙ্গে এক মেয়ে খেলোয়াড়ের কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে ওই পুলিশ সদস্য মেয়েটিকে থাপ্পড় দেয়। এছাড়া আরেক ছেলে খেলোয়াড়কেও মারে। দুপুরে স্টেশনে নামার পর তাদের আবারও হাতাহাতি হয়। এরপরই পুলিশ দুইপক্ষকে মীমাংসার নামে থানায় নিয়ে যায়। পরে মামলা করা হয়।’
রাজশাহী রেলওয়ে থানার ওসি গোপাল কুমার বলেন, মারামারিতে পুলিশ সদস্য গোলাম কিবরিয়ার নাক ফেটে গেছে। তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মামলায় তার স্ত্রী দাবি করেছেন, স্বামীকে মারধরের সময় তার গলার চেইন চুরি করে নেওয়া হয়েছে। মামলায় সাক্ষী করা হয়েছে কিবরিয়ার ভাই গোলাম সারওয়ার এবং সারওয়ারের বন্ধু সাব্বির ইসলামকে।
গোলাম সারওয়ার দাবি করেন, ট্রেনের ভেতরে কোনো ঘটনা ঘটেনি। ট্রেন থেকে আগে নামাকে কেন্দ্র করে স্টেশনে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে মেরে তার ভাইয়ের নাক ফাটানো হয়েছে।
ওসি গোপাল কুমার আরও বলেন, ‘খেলোয়াড়দেরকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানোর সাহস আমার নেই। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী মামলা নিয়েছি। সেই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কোচ এবং খেলোয়াড়দের আদালতে পাঠানো হয়েছে।’
এদিকে, রাত ৮টার দিকে আটজনকে রাজশাহীর চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তোলা হয়। আদালতের তাদের কারাগারে পাঠান। আর অপ্রাপ্তবয়স্ক পাঁচজন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল-২ এ তোলা হয়। আদালত তাদের সোমবার সকাল ১০টা পর্যন্ত জামিন দেয়।
আসামী পক্ষের আইনজীবী মাইনুল ইসলাম জানান, এই শিশুদের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল-২ এ তোলা হয়েছিল। শিশুদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ নেই। এজাহারে যা আছে তাও জামিনযোগ্য। রাত হয়ে যাওয়ায় পূর্ণাঙ্গ শুনানি হয়নি। তাই আদালতের বিচারক তাদের সোমবার সকাল ১০টা পর্যন্ত অন্তর্বতীকালীন জামিন দিয়েছেন। সোমবার আদালতে জামিন আবেদনের পূর্ণাঙ্গ শুনানি হবে। তারপর আদালত সিদ্ধান্ত দেবেন।
অন্যদিকে, জেলা জজ আদালতের আদালত পরিদর্শক পরিমল চক্রবর্তী জানান, প্রাপ্তবয়স্ক ছয়জন খেলোয়াড় ও কোচকে রাতে রাজশাহীর চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তোলা হয়েছিল। ভারপ্রাপ্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. লিটন হোসেন আসামিদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
রাতেই তাদের রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।
এএইচ
আরও পড়ুন