ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪

যে কারণে মেয়েরাও কোটা সংস্কার আন্দোলনে

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২১:২৩, ১০ এপ্রিল ২০১৮ | আপডেট: ২১:২৪, ১০ এপ্রিল ২০১৮

বাংলাদেশে বহু মিছিলে সামনের সারিতে কয়েকজন নারী হাঁটছেন অথবা ব্যানার বহন করছেন এমন দৃশ্য অনেকেই দেখেছেন। তবে মিছিলে সামনের সারিতে থাকলেও তারা যে তাতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন এমনটা চোখে পড়ে না। কিন্তু গত কয়েক দিনে কোটা সংস্কারের আন্দোলনে, মিছিলে, স্লোগানে নারীদের উপস্থিতি ছিল খুবই চোখে পড়ার মতো। এখনও রয়েছে নারীর অংশগ্রহণ।

গত শনিবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের গেটের তালা ভেঙে বের হয়েছিলেন কবি সুফিয়া কামাল হল, রোকেয়া হল ও কুয়েত মৈত্রী হলের মেয়েরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের এক ছাত্রী বলেন, তিনি তার হল থেকে রাত একটার দিকে বের হয়েছেন। আসার সময় ভিসি চত্বরের দিক থেকে দফায় দফায় কিছু ছেলে আক্রমণ করে। ওই সময়ই আমাদের দুই আপুর মাথা ফেটে যায়। এরপর তিনি টিএসসির ভেতরে দৌঁড়ে চলে যান এবং সেখানে অনেক সময় ধরে আটকে পরেছিলেন তিনি।

সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন জায়গায় বিচ্ছিন্নভাবে ঘোরাফেরা করছেন কোটা সংস্কারপন্থী আন্দোলনকারীরা। তার আগের রাতের সহিংসতা আর উপাচার্যের বাড়িতে ভাঙচুরের ঘটনায় কিছুটা যেন চুপচাপ তারা।

কিন্তু হঠাৎ সবাই দ্রুত রোকেয়া হলের দিকে যেতে শুরু করলেন। কারণ সেখান থেকে ভেসে আসছে নারী কণ্ঠের স্লোগান। তাতে সবাই মিলে একসাথে গলা মেলালেন। এই আন্দোলনে মেয়েদের সম্পৃক্তা যে বেশি মনে হয়েছে শুধু তাই নয় বরং অনেক ক্ষেত্রে তারাই নেতৃত্ব দিচ্ছেন বলেও মনে হচ্ছে।

কিন্তু মেয়েরা কেনো কোটা সংস্কারের আন্দোলনে এতটা আগ্রহী? এ বিষয়ে কথা হয় অনেকের সাথে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ছাত্রী সায়মা কানিজ বলেন, আমি কেনো এই আন্দোলনে অংশ নেবো না? আমাকে যে আর কয়েক দিন পরেই চাকরী করতে হবে।

চাকরী করাই তার ভবিষ্যৎ গন্তব্য, স্বামী অথবা সংসার নয়। তার মতো এত জোরের সাথে হয়ত কিছুদিন আগেও মেয়েদের মুখ থেকে এমনটা শোনা যেতো না। কিন্তু ইদানীং বাংলাদেশে এসএসসি পরীক্ষাই হোক আর বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যায়ের পরীক্ষা, সবখানেই ফলাফলে উপরের দিকে দেখা যাচ্ছে মেয়েদের।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞানের ছাত্রী নুসরাত জাহান জানান, যেহেতু মেয়েরা এখন অনেক পড়াশোনা করছে, তাই তারা চাচ্ছে না যে সময়, শ্রম আর মেধার বিনিয়োগ এতদিন ধরে সে করেছে সেটা বৃথা যাক। কিন্তু এমন নয় যে তারা ছেলেদের থেকে এগিয়ে যেতে চায়। মেয়েরা তাদের মেধার স্বীকৃতিটা চাইছে।

সরকারী চাকরীর নিরাপত্তার বিষয়টি কি তাদের বেশি আগ্রহী করছে?

বাংলাদেশে সরকারি চাকরীর প্রতি ছেলে-মেয়েদের বা অভিভাবকদের আগ্রহ যে কতটা তা বোধহয় বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু সরকারি চাকরীর স্থিতিশীলতা আর নিরাপত্তা কি মেয়েদের একটু বেশি টানছে?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের চতুর্থ বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেরুখ কবির জানান, বিসিএস পরীক্ষার টার্গেট বেশির ভাগেরই থাকে। কারণ সব সাবজেক্টে তো ভাল চাকরী পাওয়া যায় না। তিনি বলেন, মেয়েদের আজকাল পরিবার থেকেও বলা হয় বিসিএস চেষ্টা করতে। কারণ প্রাইভেট জবে অনেক সময় দিতে হয়।

তিনি আরো বলেন, কিছু চাকরীকে মেয়েদের জন্য উপযোগী বলে মনে করা হয় বা সেফ মনে করা হয়। যে চাকরীতে তারা ঘরের কাজগুলোও করতে পারবে। সরকারী চাকরীকে এখন মেয়েদের জন্য সেরকম কিছু মনে করা হচ্ছে।

ইদানীং অবশ্য সরকারি চাকুরীতে খুব দাপটের সাথে জায়গা করে নিচ্ছেন মেয়েরা। এই আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী মেয়েদের সাথে কথা বলে আরেকটি বিষয় জানা গেলো যে তারা অনেকেই কোনো ধরনের নারী কোটার পক্ষপাতী নন।

সায়মা কানিজ জানান, আমরা নিজের যোগ্যতা দিয়েই তো চাকরীর বাজারে প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছি। যে কোটার বিরুদ্ধে এত আন্দোলন তার ৫৬ শতাংশের মধ্যে মেয়েদের জন্য রয়েছে ১০ শতাংশ কোটা। তবে একই সঙ্গে অনেকেই বলেছেন, ছেলেরা হামলার শিকার হচ্ছিলো বেশি, তাই তারা সামনে এসেছেন।

ভূতত্ত্ববিদ্যা শিক্ষার্থী তামীরা তাসনিম লাবণ্য জানান, বিগত কয়েকদিনের যে রেকর্ড দেখা যাচ্ছে তাতে আমাদের প্রচুর ছেলে শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তারা অনেক রকম চাপের মুখে আছেন। আমরা মেয়ে হিসেবে না শুধু, প্রত্যেকে শিক্ষার্থী হিসেবে এসেছি। সব মিলিয়ে কোটা সংস্কারের আন্দোলনে মেয়েদের শক্তিশালী উপস্থিতি খুবই চোখে পড়েছে। সূত্র: বিবিসি

আর/টিকে


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি