ঢাকা, বুধবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

যে কারণে সর্বকালের সেরা পেলে

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৪:২৯, ৩০ ডিসেম্বর ২০২২

Ekushey Television Ltd.

তর্কসাপেক্ষে তিনি সর্বকালের সেরা ফুটবলার। কেউ আবার তর্কেও যেতে চান না। ব্রাজিলের এক বিখ্যাত ক্রীড়া লেখক বলেছিলেন, ‘মানুষ হিসেবে জন্ম না নিলে, ফুটবল হিসেবে জন্ম নিতেন পেলে।’ দক্ষতা, ছন্দ, শিল্প, জাদু- কী ছিল না তার পায়ে।

পেলের ফুটবল শৈলী তাদের এতোটাই বিমোহিত করেছে যে, অনেকেই সর্বকালের সেরা ফুটবলার প্রশ্নে কেবল পেলের নাম বলেই দাঁড়ি টানেন। তাদের জন্য আজকের দিনটা বড্ড বেদনার। কেননা ১ হাজার ২৭৯ গোল ও ৩১টি শিরোপার মালিক ত্যাগ করেছেন ইহকালের মায়া।

তবু পেলে অমর হয়ে থাকবেন তার শ্রেষ্ঠত্বের মাধ্যমে। ফুটবল যতদিন বেঁচে থাকবে, ততদিন নেওয়া হবে তার নাম। ইতিহাসের প্রথম ফুটবলার হিসেবে তিনটি বিশ্বকাপ জিতেছেন তিনি। যেই কীর্তি আর কেউ ছুঁয়ে দেখতে পারেননি এখন পর্যন্ত।

পেলের গল্পের শুরুটা বিশ্বকাপ দিয়েই। ১৯৫০ সালে ঘরের মাঠে উরুগুয়ের কাছে বিশ্বকাপ ফাইনাল হারের দুঃখ এখনো কাঁদায় ব্রাজিলিয়ানদের। সেদিন কেঁদেছিলেন ৯ বছরের ছোট্ট পেলেও। খেলার মধ্যে ব্যস্ত থাকলেও ক্ষণে ক্ষণে রেডিওতে কান রেখেছিলেন তিনি। খেলা শেষ হওয়ার পর আবেগে ভেঙে পড়েন পেলের বাবা দনদিনিও। হাঁটুর ইনজুরির কারণে তার ফুটবলার স্বপ্নটাও অকালেই শেষ হয়ে পড়েছিল।  

তাই ফুটবলটা পেলের রক্তেই। সেদিন বাবার চোখের জল মুছে দিয়ে তিনি বলেছিলেন একদিন আমি এই বিশ্বকাপ এনে দেব। পাড়ার ফুটবলার থেকে পেশাদার ফুটবলার হওয়া যাত্রাটা পেলের শুরুর সেখান থেকেই। তার অসাধারণ প্রতিভা নজরে পড়ে যাওয়ার ব্রাজিলের বিখ্যাত ক্লাব সান্তোসের এক কর্মকর্তার। মাত্র ১৫ বছর বয়সেই তাকে সান্তোসে নিয়ে আসেন তিনি। দ্রুতই সান্তোসের মুল দলে সুযোগ করে নেন পেলে। সেই পারফরম্যান্স তাকে জায়গা করে দেয় ১৯৫৮ বিশ্বকাপে।

তবে তা নিয়ে বিতর্কের শেষ ছিল না! কেননা পেলেকে জায়গা দিতে উপেক্ষা করা হয়েছিল করিন্থিয়াস কিংবদন্তি লুজিনিওকে। সেই করিন্থিয়াসের বিপক্ষে  প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে গিয়েই ইনজুরিতে পড়েন পেলে। খেলতে পারেননি বিশ্বকাপের প্রথম দুই ম্যাচ।

সোভিয়েত ইউনিয়নের বিপক্ষে অভিষেক হলেও গোল করতে পারেননি সেই ম্যাচে। তবে পেলের একমাত্র গোলেই কোয়ার্টার ফাইনালে ওয়েলসকে হারায় ব্রাজিল। বুক দিয়ে বল নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পর এক ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে গোলটি করেছিলেন ১৭ বছর বয়সি পেলে। এখন হয়তো পেলের থেকে কেউ ভালো ড্রিবলিং করতে পারে, কেউ বা ভালো দৌড়াতে পারেন। কিন্তু বল রিসিভ করাকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন পেলে। তার মতো বল রিসিভ করতে পারেন এমন ফুটবলার এখনো খুঁজে পাওয়া মুশকিল।

সেমিফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে সবাইকে স্তম্ভিত করে ছাড়েন পেলে। রাইট উইংয়ে থাকা গারিঞ্চার সঙ্গে তার রসায়ন ছিল অনবদ্য। তার হ্যাটট্রিকে ৫-২ গোলের জয় পায় ব্রাজিল। এবং ফাইনালে সুইডেনের বিপক্ষেও সেই একই গল্প। রাসুন্দা স্টেডিয়ামে প্রায় ৫০ হাজার দর্শকের সামনে জোড়া গোল করেন পেলে। ব্রাজিলকে এনে দেন প্রথম বিশ্বকাপ শিরোপা। পূরণ করেন বাবাকে দেওয়া সেই প্রতিশ্রুতি।  

অন্যদিকে পুরো বিশ্ব তখন পেলের প্রেমে পড়তে শুরু করে। ১৯৬২ বিশ্বকাপে বিশ্বের সেরা ফুটবলার হিসেবেই মাঠে নামেন পেলে। মেক্সিকোর বিপক্ষে প্রথম ম্যাচেই আবারও নিজের জাত চেনান তিনি। প্রথমে ভাভাকে দুর্দান্ত এক গোল বানিয়ে দেন এই ফরোয়ার্ড। পরে চার ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে স্কোরশিটে নিজেই নাম লেখান।  কিন্তু পরের ম্যাচে ইনজুরিতে পড়ে বিশ্বকাপ শেষ হয়ে যায় তার। যদিও ব্রাজিল বিশ্বকাপ জিতেই আসর শেষ করে।  

১৯৬৬ বিশ্বকাপে ব্রাজিলকে নিয়ে উচ্চাশা ছিল তুঙ্গে। কিন্তু সবাইকে হতাশ করে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নেয় সেলেসাওরা। বুলগেরিয়া ও পর্তুগালের বিপক্ষে একের পর এক ভয়ানক ফাউলের শিকার হন পেলে। বিশ্বকাপ শেষে অবসরের সিদ্ধান্তই নিয়ে ফেলেন পেলে। কিন্তু ১৯৭০ বিশ্বকাপের আগে অবসর ভেঙে ফেরানো হয় তাকে। কেননা রাজার গল্পের শেষটা রাজকীয়ভাবেই হওয়া উচিত।  

ক্রোদোয়ালদো, রিভেলিনো ও তোস্তাওকে নিয়ে দুর্দান্ত এক আক্রমণভাগ গড়ে তোলেন তিনি। যার ফলে একের পর এক দাপুটে জয় পায় ব্রাজিল। ফাইনালে ইতালিকে হারায় ৪-১ গোলে। যেখানে একটি গোলের পাশাপাশি একটি অ্যাসিস্টও করেন পেলে। সেই অ্যাসিস্টের জন্য আজীবন স্মরণীয় থাকবেন পেলে। ডি বক্সের বাইরে কিছুটা বাইরে বল পেয়ে সেটা প্রথম স্পর্শেই কার্লোস আলবার্তোর দিকে ঠেলে দেন তিনি। দৌড়ে এসে বুলেট গতির এক শটে জালের ঠিকানা খুঁজে নেন আলবার্তো।  

চার গোল করা সেই বিশ্বকাপের সেরা ফুটবলার হওয়ার পাশাপাশি অমরত্বের দেখা পান পেলে। তার আগের বছরই ইতিহাসের প্রথম ফুটবলার হিসেবে এক হাজার গোলের মালিক হন। ক্লাব ফুটবলে আঠারোটা বছর তিনি কাটিয়েছেন সান্তোসে। ক্লাবটির হয়ে জিতেছেন ২৫টি শিরোপা। 

১৯৭৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের  মানুষদের ফুটবলের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য যোগ দেন নিউইয়র্ক কসমসে। তিনটি মৌসুম খেলার পর ১৯৭৭ সালে ফুটবলকে বিদায় জানান পেলে।

ব্রাজিলের হয়ে তার ৭৭ গোলের রেকর্ডটি এখনো অটুট রয়েছে। সদ্য সমাপ্ত কাতার বিশ্বকাপে সেই রেকর্ডে নাম লিখিয়েছেন নেইমারও। 

ফুটবল ছাড়ার পর ব্রাজিলের ক্রীড়ামন্ত্রী হয়েছিলেন পেলে। দুর্নীতির অভিযোগে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই পদত্যাগ করতে হবে তাকে। 

তবে রাজনীতিবিদ তকমা ছাপিয়ে পেলের মূল পরিচয়টা ফুটবলে। বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলাটির অনন্তকালের রাজা হয়ে থাকবেন তিনি!
এনএস/ এসএ/


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি