রাজউকের উদাসীনতায় হারিয়ে যাচ্ছে পুরাতাত্ত্বিক স্থাপনা (ভিডিও)
প্রকাশিত : ১২:১৩, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা সংরক্ষণে ‘ট্রান্সফার অব ডেভেলপমেন্ট রাইট- টিডিআর’ এখন শুধু কাগুজে দলিল। ভবন মালিকদের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড ও বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা-ড্যাপে টিডিআর যুক্ত হলেও বাস্তবায়ন করছে না নিয়ন্ত্রক সংস্থা-রাজউক। এই উদাসীনতায় একে একে হারিয়ে যাচ্ছে পুরান ঢাকার পুরাতাত্ত্বিক বহু স্থাপনা।
ফরাসী স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত দুইশ’ বছরের পুরনো নজরকাড়া বাড়িটি আজও দাঁড়িয়ে কালের সাক্ষী হয়ে।
পুরান ঢাকার ফরাসগঞ্জের বিকে দাস রোডে এটি অক্ষয় দাসের বাড়ি বা বড়বাড়ি নামে পরিচিত। দেশভাগের সময় বদল হয়েছে মালিকানা। তবে ঐতিহ্যের স্থাপনা হওয়ায় থেমে আছে বাড়িটির সংস্কার বা সংরক্ষণ কাজ।
স্থানীয়রা জানান, ছাদে রডের পরিবর্তে যে কাঠগুলো দেয়া হয়েছে একটুও ঘুনে ধরেনি, কাঠগুলো যেভাবে লাগিয়েছে এখনও সে রকমই আছে।
একই রোডে কেউ যেখানে আইনের জালে আটকা, সেখানেই কেউ প্রভাব খাটিয়ে ঐতিহ্যের ভবন গুঁড়িয়ে গড়ছেন সুরম্য অট্টালিকা। বাস্তবতা হলো বিলীন হচ্ছে শেকড়ের গল্প ধারণ করা স্মৃতিচিহ্নগুলো।
ঐতিহ্যের স্থাপনার মালিকানা অপরিবর্তিত রেখে একই সক্ষমতার ভবন অন্যত্র নির্মাণে ‘ট্রান্সফার অব ডেভেলপমেন্ট রাইট-টিডিআর’ ড্যাপে যুক্ত করেছে রাজউক।
আরবান স্টাডি গ্রুপের প্রধান নির্বাহী স্থপতি তৈমুর ইসলাম বলেন, “হেরিটেজ ঘোষণা করা হয়েছে, এটিকে এভাবেই রেখে দিতে হচ্ছে। এই আর্থিক ক্ষতিটাকে মূল্যায়নের জন্যই টিটিআরের ব্যবস্থাটা।”
সংস্থাটির ইস্যু করা এমন সনদ নিয়ে ডেভেলপারের কাছ থেকে নগদ অর্থ আর ফ্ল্যাট নেবার সুযোগ নিতে পারেন পুরাতাত্ত্বিক স্থাপনার মালিকরা। এমনকি, দরকষাকষি করে লাভজনকভাবে বিক্রির সুযোগও তারা পাচ্ছেন।
স্থপতি তৈমুর ইসলাম বলেন, “কিন্তু ওনারা বিষয়টি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে গড়িমসি করছেন। বহুদিন ধরে ঝুলে আছে।”
সংরক্ষণ স্থপতি অধ্যাপক ড. আবু সৈয়দ এম আহমেদ বলেন, “এক টাকাও খরচ নাই সরকারের, একটা সার্টিফিকেট ইস্যু করবে তা দিয়ে অন্য কোথাও তাকে এই জায়গাটা দিবে।”
টিডিআর ন্যাশনাল বিল্ডিং কোডে ২০২০ সাল এবং বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা-ড্যাপে ঠাঁই পেয়েছে ২০২৩ সালে। এখনও এটি বাস্তবায়ন করতে পারেনি নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
রাজউক প্রধান প্রকৌশলী উজ্জ্বল মল্লিক বলেন, “সেখানে রাজউক হচ্ছে এটার অথরিটি। চীফ প্লেনারকে দিয়ে একটা কমিটি গঠন করা হবে। এখান থেকে টিটিআর সার্টিফিকেট ইস্যু করার কথা। যেহেতু এটা নতুন ধারণা, এই কাজটা খুব দ্রুত হওয়া উচিত।”
কোন্ বাধা বা অভিসন্ধিতে আটকে আছে টিডিআর বাস্তবায়ন, এ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন সংরক্ষণ স্থপতি ও নগর পরিকল্পনাবিদরা।
শুধু ব্যাপারটা একপাক্ষিক হলেই হবেনা যাদের এরকম ঐতিহ্যের স্থাপনা রয়েছে তারাও তো চায় একটি উন্নত জীবন যাপন করতে। তাদেরকে যদি ট্রান্সফার অব ডেভেলপমেন্ট রাইট দেয়া হয় তাহলে তারা অন্যত্র এই সনদ দেখিয়ে যেমন একটা স্থাপনা তৈরি করে সেখান থেকে সুযোগ-সুবিধাগুলো পেতে পারে ঠিক তেমনিভাবে আগের স্থাপনাটিও তার থাকছে। এখন শুধু প্রয়োজন এই আইনটির বাস্তবায়ন। সেটি হলে ঢাকার পুরনো যে স্থাপনাগুলো রয়েছে সেগুলো যেমন সংরক্ষণ হবে ঠিক তেমনিভাবে আমাদের শেখড়ের পরিচয়টি নতুন প্রজন্ম জানতে পারবে যুগ থেকে যুগান্তরে।
এএইচ