রাজধানীতে রেলের টিকেট কালোবাজারি চক্রের ১০ জন আটক
প্রকাশিত : ১৮:১০, ১৫ জুন ২০২৪
রাজধানীতে রেলের টিকেট কালোবাজারির সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে এ সংঘবদ্ধ চক্রের ১০ জনকে আটক করেছে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। এসময় বিপুলসংখ্যক রেলওয়ে টিকেট জব্দ ও আলামত উদ্ধার করেছে র্যাব।
র্যাব সূত্র জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু দুষ্কৃতিকারী ও টিকেট কালোবাজারি চক্রের দৌরাত্মে স্বস্তিকর রেলভ্রমনের টিকেট প্রাপ্তি অনেক সাধারণ জনগণের জন্য জন্য অস্বস্তি, চিন্তা ও ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনলাইনে বা রেল স্টেশনের টিকেট কাউন্টারে টিকেট পাওয়া না গেলেও কালোবাজারে অধিক মূল্যে টিকেট বিক্রি করতে দেখা যায়। টিকেট কালোবাজারিরা বিভিন্ন কৌশলে ট্রেনের টিকেট অগ্রিম সংগ্রহ করে অবৈধভাবে নিজেদের কাছে মজুদ করে রেখে সাধারণ যাত্রীদের নিকট দুই-তিন গুন বেশি দামে টিকেট বিক্রি করছে। সাধারণ যাত্রীদের চাহিদা অনুযায়ী টিকেট না পাওয়া এবং টিকেট কালোবাজারীরা অধিক মূল্যে টিকেট বিক্রয়ের বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ব্যাপক সমালোচিত হয়।
ইতিপূর্বে টিকেট কালোবাজারি চক্রের মূলহোতাসহ ১০ জন সক্রিয় সদস্যকে বিপুল সংখ্যক ট্রেনের টিকেটসহ গ্রেফতার করেছে র্যাব।
বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে বিভিন্ন সময় র্যাব-৩ এর একটি চৌকস দল রাজধানীর কমলাপুর ও মৌচাক এলাকায় পৃথক ঝটিকা অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। শনিবার র্যাব-৩ এর মিডিয়া উইংয়ের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফয়জুল ইসলাম এসব তথ্য জানান।
তিনি জানান, ট্রেনের টিকেট কালোবাজারি চক্রের সদস্যরা হলো, মোঃ সোহেল রানা (২৭), মো: মাহবুবুর রহমান (২৮), মোঃ বকুল হোসেন (২৫), মোঃ শিপন আহমেদ (২৯), মোঃআরিফ (৩৮), শাহাদাত হোসেন (৩৫), মোঃ মনির (২৫) ,শিপন চন্দ্র দাস (৩৫), মো: মনির আহমেদ (৩০) ও মো: রাজা মোল্লা (২৬)। ঠাকুরগাঁও, রংপুর, নাটোর, চুয়াডাঙ্গা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, জামালপুর , নরসিংদী ও ফরিদপুর জেলার তাদের গ্রামের বাড়ি বলে জানা গেছে।
অভিযানকালে তাদের নিকট থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ট্রেনের বিপুল পরিমাণ টিকেট, ১০ টি মোবাইল ফোন, ১০ টি সীমকার্ডসহ কালোবাজির বিভিন্ন আলামত উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা ট্রেনের টিকেট কালোবাজারির সাথে জড়িত থাকার কথা অকপটি স্বীকার করেছে।
র্যাব বলছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃতরা জানান, দেশব্যপী ট্রেনের টিকেট কালোবাজারি চক্রটি সংঘবদ্ধভাবে দীর্ঘদিন যাবৎ বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রায় সকল ট্রেনের টিকেট কালোবাজারি করে আসছিল। তারা দীর্ঘদিন যাবৎ বাংলাদেশ রেলওয়ের টিকেট বুকিং এর জন্য চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানসমূহের সাথে যুক্ত হয়ে টিকিটি কালোবাজারী করে আসছে। বিশেষ করে ঈদ, পূজা, সাপ্তাহিক ছুটিসহ বিশেষ ছুটির দিনকে উপলক্ষ করে এই সংঘবদ্ধ চক্রটি বিভিন্ন কারসাজির মাধ্যমে সাধারণ সময়ের তুলনায় অধিক সংখ্যক টিকেট সংগ্রহ করতো।
জিজ্ঞাসাবাদে তারা র্যাবকে আরও জানান, প্রতিবছর ঈদ মৌসুমে দেশব্যাপী বিভিন্ন স্টেশনের অসাধু কর্মচারী ও টিকেট কাউন্টারম্যানদের মাধ্যমে আনুমানিক প্রায় ২-৩ হাজার রেলওয়ের টিকেট কালোবাজির মাধ্যমে বিক্রি করতো। তারা আসন্ন পবিত্র ঈদ-উল-আযহার পূর্বের চাইতেও অধিক সংখ্যক টিকেট সংগ্রহের জন্য পরিকল্পনা করছিল বলে জানায়। র্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, টিকেট বিক্রয়ের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ দুইভাগে বিভক্ত হয়ে সিন্ডিকেটের মূলহোতাসহ বাকি বিক্রয়কারী সহযোগীদের মাঝে ভাগাভাগি হতো। এই অর্থ কখনো তারা নগদ হাতে-হাতে বুঝিয়ে দিতো আবার কখনো মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে লেনদেন করতো।
সিন্ডিকেটের প্রত্যেক সদস্য অবৈধভাবে ট্রেনের টিকেট বিক্রি করে প্রতি মাসে ২০/২৫ হাজার টাকা উপার্জন করতো বলে জানা যায়। এভাবেই পরষ্পরের যোগসাজশে চক্রটি দীর্ঘদিন যাবৎ দেশব্যাপী ট্রেনের টিকেট কালোবাজারি করে আসছিল বলে জানান র্যাবের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার। তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে।
আরও পড়ুন