ঢাকা, মঙ্গলবার   ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

রাজধানীর সড়কে ব্যক্তিগত গাড়ির লাগাম টানার সুপারিশ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:১৭, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

রাজধানী ঢাকার সড়কে গণপরিবহনের চেয়ে তুলনামূলক বেশি চলাচল করে  ব্যক্তিগত গাড়ি। প্রত্যেকটি মোড়ে মোড়ে ও রাস্তার পাশে ব্যক্তিগত গাড়ি দাঁড়ানোর কারণে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। রাস্তায় চলাচলকারী অন্য পরিবহনের গতি কমে যাচ্ছে। বেড়ে যাচ্ছে গাড়ির জটলা। ব্যক্তিগত গাড়ির অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি এবং ব্যবহার যানজট, দুর্ঘটনা, দূষণ ও জ্বালানী অপচয় বাড়িয়ে দিচ্ছে। দীর্ঘক্ষণ যানজটে বসে থাকায় হারিয়ে যাচ্ছে সামাজিকীকরণের সুযোগ। এমন প্রেক্ষাপটে রাজধানী ঢাকার ওপর চাপ কমাতে ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারের লাগাম টানতে পরামর্শ দিয়েছে অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণ-সংক্রান্ত সরকারি টাস্কফোর্স। এ জন্য সড়ক ব্যবহারে মাশুল ধার্যের কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি সহজ শর্তে গাড়ি কেনার ঋণ দেওয়ায় নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।

বৈষম্যহীন টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণ ও প্রয়োজনীয় সম্পদ আহরণে গত বছরে ১০ সেপ্টেম্বর টাস্কফোর্স গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। গত ৩০ জানুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে টাস্কফোর্সের প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণাপ্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক কে এ এস মুর্শিদকে টাস্কফোর্স কমিটির প্রধান করে ১২ সদস্যের এই টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনের ‘অবকাঠামো ও সংযোগ: অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথ’ শীর্ষক অংশটি করেন পরিবহনবিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক সামছুল হক।

প্রতিবেদনের এই অংশে ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার নিরুৎসাহিত করার সুপারিশ করা হয়। এ জন্য রাজধানীতে কত গাড়ি চলতে পারবে, সেই সংখ্যা নির্ধারণ করে দেওয়ার কথা বলা হয়। গ্যাস ও বিদ্যুৎ ব্যবহারের জন্য যেমন টাকা ব্যয় করতে হয়, তেমনি সড়ক ব্যবহারে গাড়ির জন্য মাশুল ধার্য করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ব্যাংক থেকে সহজ শর্তে গাড়ি কেনার ঋণ কমিয়ে আনা এবং গাড়ির অবৈধ পার্কিংয়ের জন্য জরিমানা বাড়ানোরও প্রস্তাব করা হয়।

প্রকল্পের অধীন যাতে বিলাসবহুল গাড়ি কেনা না হয়, সে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে। রাইড শেয়ারিং সেবার ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জোর দেওয়া হয়েছে। ব্যাটারিচালিত রিকশা, লেগুনা, দুরন্তর মতো যানের চলাচল বন্ধের পরামর্শ দিয়ে বড় ও দ্বিতল বাস বাড়ানোর কথা বলেছে টাস্কফোর্স কমিটি।

প্রতিবেদনে ঢাকার মতো ঘনবসতিপূর্ণ শহরে এখনই উড়ালসড়ক নির্মাণ বন্ধের সুপারিশ করা হয়েছে। বাস, ট্রেনসহ গণপরিবহনে জোর দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। অবশ্য চাষযোগ্য জমি বাঁচাতে শহরের বাইরে উড়ালসড়ক ও উড়াল রেলপথ নির্মাণের কথা বলা হয়েছে।

টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে সড়ক, রেল, নৌ ও বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয়কে এক করার প্রস্তাব করা হয়েছে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, আলাদা আলাদা মন্ত্রণালয় ও বিভাগ নিজেদের মতো করে উন্নয়ন প্রকল্প নেয়। এতে সমন্বয়ের অভাব দেখা যায়। বিশেষ করে জমি অধিগ্রহণ কিংবা জমি ভাগাভাগির ক্ষেত্রে বড় জটিলতা সৃষ্টি হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা হয়, রেল কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রামে কর্ণফুলী কনটেইনার টার্মিনাল করতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জমি দিতে রাজি হয়নি। সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ ও রেলওয়ের সঙ্গে জমি–সংক্রান্ত জটিলতায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে মাল্টিমোডাল হাব করা যাচ্ছে না। একই কারণে কমলাপুর রেলস্টেশনকেও মাল্টিমোডাল হাব করা যাচ্ছে না। রেলের সঙ্গে জমি নিয়ে বিরোধ রয়েছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প ঘিরেও।

নগরে একটি সমন্বিত গণপরিবহনব্যবস্থা গড়ে তোলার পরামর্শ দেওয়া হয় টাস্কফোর্স কমিটি। প্রতিবেদনে বলা হয়, এতে বাস রুট ফ্র্যাঞ্চাইজ, ট্রাম, বিআরটি (বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট), এলআরটি (লাইট রেল ট্রানজিট), মনোরেল, সাব আরবান কমিউটার রেল, মেট্রোরেল ও রাইড শেয়ারিংয়ের মতো সব ধরনের পরিবহনব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

জানতে চাইলে অধ্যাপক সামছুল হক বলেন, বাংলাদেশে যে উন্নয়ন হয়েছে বা হচ্ছে, তা ‘জট লাগানো’ উন্নয়ন। এ জন্য লাখো কোটি টাকা খরচ করেও সুফল মিলছে না। তারা যে প্রস্তাবগুলো দিয়েছেন, তা হচ্ছে জট ছোটানোর। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ এগুলো বাস্তবায়ন করে উপকৃত হয়েছে। অবকাঠামো খাতে যে সংস্কারগুলো তারা প্রস্তাব করেছেন, সেগুলো বাস্তবায়ন করতে হলে শক্ত রাজনৈতিক সদিচ্ছা দরকার। আর যদি আমলাতন্ত্রের চাপে সংস্কার না করা হয়, ভবিষ্যতে কোনো উন্নয়নই সেভাবে কাজে লাগবে না।

এমবি//


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি