ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪

রাজধানীর হাতিরপুলে বাজার নিয়ন্ত্রণে মেয়রের হানা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৯:৫১, ১৭ মে ২০১৮ | আপডেট: ১৯:৫৩, ১৭ মে ২০১৮

প্রতিদিনের মতো সবজির পসরা নিয়ে বসেছিলেন রাজধানীর হাতিরপুল বাজারের ব্যবসায়ীরা। হঠাৎ পুলিশসহ গাড়িতে চড়ে বাজারে পা রাখেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন। মুহুর্তেই শুরু হয়ে গেল ব্যবসায়ীদের ছুটাছুটি। কেউ ফুটপাতে নিজের দোকান গুটিয়ে নিতে ব্যস্ত। কেউ কপালে চিন্তার ভাঁজ রেখে কমদামে পণ্য বিক্রিতে ব্যস্ত। আবার কেউবা পণ্য নিয়ে অন্যন্ত্র সরে যাওয়ায় ব্যতিব্যস্ত। যে বেগুন ৭৫ থেকে ৮০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছিল, মেয়রের আগমনে তা বিক্রি শুরু হলো ৫০ থেকে ৬০ টাকা।

তবে অবাক করা বিষয় হলো অন্যদিন হাতিরপুল বাজারে রাস্তার পাশ দিয়ে অসংখ্য সবজির দোকান থাকলেও বৃহস্পতিবার মাত্র দুটি সবজির দোকানের দেখা মেলে। কারণ এখানকার প্রায় সব সবজির দোকান ফুটপাত ঘেঁষে গড়ে ওঠা। মেয়র আসার খবরে দ্রুত সবাই যারযার মতো দোকান গুটিয়ে পালিয়েছে বলে জানার স্থানীয় মুদি দোকানদার মাহবুব।

তিনি বলেন, রাস্তার চারপাশ দিয়ে অনেক দোকান ছিল। এখন উঠিয়ে নিয়েছে। বিকালের দিকে আবার বসবে। এখন বিক্রি করলে কমদামে বিক্রি করতে হবে, তাই সবাই লোকসানে বিক্রি না করে, দোকান বন্ধ করে দিয়েছে। আমরা তো দোকান বন্ধ করতে পারি না। কারণ আমাদের দোকান ভাসমান নয়, স্থায়ী। বন্ধ দেখলে আরো সন্দেহ করবে। তখন ব্যবসা করা হবে না।

রমজান উপলক্ষে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে হাতিরপুল কাঁচাবাজার পরিদর্শনে এসে কাঁচা পণ্য, মাছ মাংসসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রীর মূল্য যাচাই অভিযানে নামে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন। অন্যদিনের মতো এ সময় বাজারে সবজি কিনতে আসে বেসরকারি চাকরিজীবী নিখিল ভদ্র। কিন্তু আজ বাজারে গিয়ে তিনি হয়েছেন অবাক। সব পণ্যই যেন দাম কম। তিনি বেগুনের দাম জিজ্ঞেস করলে বিক্রেতা উত্তর দেন ৬০ টাকা কেজি, আর মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকা কেজি। তিনি খুব দ্রুতই ২ কেজি বেগুন আর ৪ কেজি মিষ্টি কুমড়া ক্রয় করলেন।

ক্রয় শেষে নিখিল ভদ্র দোকানদার আলমকে জিজ্ঞাসা করলেন, ভাই মিষ্টি কুমড়া ভালো তো? কিনলাম তো বেশি করে। যদি আবার খাওয়া না যায়, তবে তো সবই লোকসান হয়ে যাবে। দোকানদার জানালেন, ভাই কথা কম বলে যা দিয়েছি দ্রুত নিয়ে যান। দেরি করলে পরে ফিরিয়ে নিবো কিন্তু। আপনার কাছে যা বিক্রি করেছি পাইকারি দামে। আজ মেয়র আসছে তাই। এভাবে সব সময় বিক্রি করলে আমাদের পুঁজিপুতি গুটিয়ে ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হবে।

হাতিরপুল বাজারে ঝুলিয়ে দেওয়া চার্টে সিটি করপোরেশনের বেঁধে দেওযা দাম অনুযায়ী, প্রতিকেজি বেগুণের পাইকারি দাম ১৫ টাকা থেকে ১৮ টাকা। আর খুচরা যৌক্তিক বিক্রয় মূল্য ১৮ টাকা থেকে ২২ টাকা। একইভাবে চার্টে প্রতিকেজি বেগুণের পাইকারি দাম ৪০ টাকা থেকে ৬০ টাকা। আর খুচরা যৌক্তিক বিক্রয় মূল্য ৪৮ টাকা থেকে ৭২ টাকা।

বাজারে হঠাৎই এমন দামের তারতম্য বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অন্য দোকানদার বলেন, বাজার মনিটরিং এ এসেছে মেয়র, তাই পাইকারি দাম চাইছি। কিন্তু এ দামে বিক্রি করলে আমার পেটে ভাত যাবে না। আমার বেশি দামে কেনা, তাই বেশি দামেই বিক্রি করতে হবে। একটু পরেই এ বেগুন ৭৫ টাকা কেজি, আর মিষ্টি কুমড়া ৩৫ টাকা থেকে ৪০ টাকা কেজি বিক্রি করতে হবে। অন্য সবজিরও দাম বাড়াতে হবে। মেয়র আসার আগেও এ দামেই বিক্রি করেছি। এটা আমাদের কারসাজি না। ব্যবসা টিকিয়ে রাখার জন্য করি। কারণ আমরা ছোট ব্যবসায়ী। তাই কিছু করতে পারি না। শুধু জরিমানা গোনার ভয়ে কিছু সময়ের জন্য দাম কমাতে হয়। মেয়রের বাজার ঠিক করতে হলে বড় বাজারে আগে ঠিক করুক।


আরকে/ এমজে


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি