রাজনীতির ‘অক্টোবর সিনড্রোম’ ফিরছে ফেব্রুয়ারিতে?
প্রকাশিত : ১৫:৩৪, ২৯ জানুয়ারি ২০২৫ | আপডেট: ১৫:৩৯, ২৯ জানুয়ারি ২০২৫
দেশের রাজনৈতিক মাঠে আবারও উত্তাপের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে বিভিন্ন কর্মসূচিতে সরগরম হয়ে ওঠার ঈঙ্গিত দিচ্ছে রাজনৈতিকদলগুলোর কর্মসূচি। বিএনপিও সমমনা দলগুলো শিগগিরই তাদের কর্মসূচি ঘোষণা করবে বরে জানা গেছে। এছাড়া ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে পতন হওয়া আওয়মী লীগও তাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজ থেকে হরতাল-অবরোধের কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। পিছিয়ে নেই বাম ও ইসলামী ঘরানার দলগুলোও। তারাও নতুন কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করছেন। তবে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি কতটা পালিত হবে তা নিয়ে সংশয় থাকলেও এই মুহুর্তে আগামী ফেব্রুয়ারি এখন টক অব দ্য কান্ট্রি।
এমতাবস্থায়, অনেকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকই বলছেন, রাজনীতির ‘অক্টোবর সিনড্রোম’ আবারও ফিরতে পারে আগামী ফেব্রুয়ারিতে।
জানা গেছে, আসন্ন রমজানকে সামনে রেখে দ্রব্যমূল্য কমানো এবং সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে ফেব্রুয়ারিতে কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামছে বিএনপি। প্রথম কর্মসূচি হবে দ্রব্যমূল্য কমানোর দাবিতে। সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার দাবিতে হবে দ্বিতীয় কর্মসূচি। দ্রুত নির্বাচনের জন্য বিএনপি যে দাবি জানিয়ে আসছিল, সে লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকারকে চাপে রাখতে মূলত দ্বিতীয় কর্মসূচিটি পালিত হবে।
এ দুই ইস্যুতে রোজা শুরুর আগেই ঢাকাসহ দেশব্যাপী সমাবেশ করতে চায় দলটি। শিগগিরই বিভাগীয় সাংগঠনিক ও সহসাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠকে এ সমাবেশের সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ চূড়ান্ত করা হবে। গত সোমবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।
গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সূত্রে জানা গেছে, আগামী জুলাই-আগস্টের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব বলে মনে করছে দলটি। কিন্তু সরকার বলছে, আগামী ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে যে কোনো সময় নির্বাচন হতে পারে। তবে বিএনপি এই সময়কে নির্বাচনের জন্য ‘খুবই অতিরিক্ত সময়’ বলে মনে করছে।
সংস্কার প্রশ্নে বিএনপি নেতারা মনে করেন, বাহাত্তরের সংবিধান ও মূলনীতি স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে পাওয়া। সেক্ষেত্রে বাহাত্তরের সংবিধান বাতিলের কোনো সুযোগ নেই। যদি পরিবর্তন, পরিবর্ধন বা সংশোধন প্রয়োজন হয়, সেটা করা যেতে পারে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ছাত্রনেতারা ঘোষণাপত্রে বাহাত্তরের সংবিধানকে বাতিলের যে দাবি করা হয়েছে তা যুক্তিসংগত নয় বলে মনে করে বিএনপি। দলটির অভিমত, মহান মুক্তিযুদ্ধই হবে বাংলাদেশের ভিত্তি।
তবে ছাত্রদের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্রের খসড়া নিয়ে বিএনপির প্রশ্ন থাকলেও ছাত্রদের এ উদ্যোগকে সম্পূর্ণরূপে ‘ডিনাই’ করতে চায় না দলটি।
এদিকে ফেব্রুয়ারির ১৬ ও ১৮ তারিখ হরতালের ডাক দিয়েছে আওয়ামী লীগ। গতকাল মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) রাতে দলটির ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ থেকে এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
এতে বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকারের পদত্যাগ দাবিতে এবং হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি বাস্তবায়নে পহেলা ফেব্রুয়ারি থেকেই মাঠে নামার ঘোষণা দিয়েছে দলটি।
ঘোষিত কর্মসূচিতে যা যা আছে:
১ ফেব্রুয়ারি থেকে ৫ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দাবির লিফলেট বা প্রচারপত্র বিলি করবে দলটি।
৬ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। ১০ই ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ।
১৬ই ফেব্রুয়ারি রোববার অবরোধ এবং ১৮ই ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা সর্বাত্মক ‘কঠোর’ হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনাসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলাসহ অন্যান্য মামলা প্রত্যাহার এবং প্রহসনমূলক বিচার বন্ধেরও দাবি জানানো হয়।
এই প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে উল্লেখ করেছে গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত দলটি।
অন্যদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের বাম প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলগুলো পেব্রুয়ারিতে তাদের কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামতে চাইছে।
একাধিক বাম সংগঠনের নেতারা জানান, নির্বাচন নিয়ে অন্তর্বর্বীকালীন সরকার এখনও কোনো রোডম্যাপ ঘোষণা করেনি। আমরা চাই তারা তাদের বক্তব্য স্পষ্ট করুক, রোডম্যাপ ঘোষণা করুক।
এছাড়া নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য ও দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি নিয়েও তারা কর্মসূচি দিতে পারে।
অপরদিকে দেশের ইসলামী ধারার অনেক রাজনৈতিক দলও আগামী ফেব্রুয়ারিতে কজয়েখটি ইস্যুতে মাঠে নামছে বলে জানা গেছে। সম্প্রতি ইসলামী ঘারানার দলগুলোর বিভিন্ন দলের সঙ্গে বৈঠক সূত্রে এমন আভাস পাওয়া গেছে। তবে কোনকোন দল কি কি কর্মসূচিতে মাঠে নামবে তা নিয়ে এখনও কেউ কোনো সিদ্ধান্ত বা তাদের বক্তব্য স্পষ্ট করেনি।
এসএস//
আরও পড়ুন