ঢাকা, মঙ্গলবার   ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪

‘রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের শীর্ষে যুক্তরাষ্ট্র’

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৭:৪১, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৭

বিশ্বজুড়ে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়া দেশগুলোর মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সবার শীর্ষে অবস্থান করছে। বিশেষ করে ১৮৪৮ থেকে আজ পর্যন্ত ৫৮টি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে দেশটিতে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের ৩ প্রেসিডেন্ট, বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের মেয়র ও সিনেট সদস্যসহ মোট ৫৮ রাজনীতিক আততায়ীর হাতে নিহত হন। এবারের পর্বে থাকছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওই গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের নিহতের নেপথ্য কাহিনী-

রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড শব্দটি শুনা মাত্রই চোখের সামনে প্রথমে ভেসে ওঠে মার্কিন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কনের কথা। গৃহযুদ্ধের পর পরই যুক্তরাষ্ট্রকে পুণর্গঠনে যে ব্যক্তিটির ভূমিকা অপরিসীম, তিনি আর কেউ নন মার্কিন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কন। গণতন্ত্র বিষয়ে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য যে মডেল তিনি দাঁড় করিয়েছেন তা বিশ্বব্যপী সমাদৃত। আব্রাহাম লিঙ্কন বলেছিলেন, ‘ডেমোক্রেসি ইজ দ্য গভর্নমেন্ট অব দ্য পিপল, বাই দ্য পিপল এন্ড ফর দ্য পিপল’ (গণতন্ত্র হলো জনগণের, জনগণের দ্বারা এবং জনগণের জন্য সরকার)।

সারা দুনিয়াব্যপী সমাদৃত হয়ে উঠলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কন ষড়যন্ত্রকারীদের কাছে হেরে যান। ১৮৬৫ সালের ১৪ এপ্রিল প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালনকালে ওয়াশিংটনের ফোর্ডস থিয়েটারে নাটক দেখাকালে অভিনেতা জন উইলকিস বুথ নিজের পকেট থেকে বন্দুক বের করে প্রেসিডেন্টকে গুলি করেন। এতে লিঙ্কনের মাথায় গুলি লাগে। আব্রাহাম লিঙ্কন সঙ্গেসঙ্গে মাঠিতে লুটিয়ে পড়েন। ওই সময় দর্শকদের একজন ছিলেন ডাক্তার। তিনি লিঙ্কনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু পরের দিন ভোর ৭:২২ মিনিটে আব্রাহাম লিঙ্কন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এটিই কোনো প্রেসিডেন্টকে হত্যার প্রথম ঘটনা।

তবে এ ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে কোনো রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের প্রথম ঘটনা নয়। যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের সুত্রপাত হয় ১৮৪২ সালে। দেশটির হোয়িগ পার্টির নেতা চার্লস চিপি আর্নটকে গুলি করে হত্যার মধ্য দিয়ে দেশটিতে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের শুরু হয়। রাজনৈতিক যুক্তিতর্ক উপস্থাপনকালে উইন্সকিন্সের ম্যাডিসনে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এসময় তিনি উইন্সকিন্সের প্রাদেশিক প্রশাসক ছিলেন। ঘটনার ৫ বছর পরে ১৮৪৭ সালে নিউ মেক্সিকোর গভর্নর চার্লস বেনেটকে গুলি করে  হত্যা করে দুবৃত্তকারীরা।

এদিকে ৫৮ হত্যাকাণ্ডের অধিকাংশই ঘটেছে ডেমোক্রেট পরিবারের। দুজন প্রেসিডেন্টসহ ২৮ রাজনীতিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। এমনকি ডেমোক্রেট প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির পুরো বংশই রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যে ডেমোক্রেটিক নেতা ডারউইন ব্রাউনের হত্যার মধ্য দিয়ে ডেমোক্রেট পরিবারে প্রথম ধাক্কা লাগে। এরপর একে একে ডেমোক্রেটের আরও ২৭ প্রাণ ঝরে যায়।

অপরদিকে বর্তমান ক্ষমতাসীন দল রিপাবলিকান পরিবার থেকে ঝরে যায় আরও ১৩ প্রাণ। নিউ মেক্সিকো অঙ্গরাজ্যের জোস ফ্রান্সিসকো শেভস এর হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে রিপাবলিকান দলের রাজনীতিবিদদের গুপ্তহত্যা শুরু হয়। এরপর একে একে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন সাবেক প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কন, জেমস এ গারফিল্ড ও উইলিয়াম মেকাইনলি। প্রেসিডেন্টগণ ছাড়াও অনেক রিপাবলিকান সিনেট সদস্য রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হন।

১৮৮১ সালের ২ জুলাই যুক্তরাষ্ট্র্রে ২০তম প্রেসিডেন্ট জেমস এ গারফিল্ডকে সরকারি কর্মকর্তা চার্লস জে গিতাউ গুলি করে হত্যা করে। ওয়াশিংটনের বাল্টিমোর ও পটোম্যাক রেলওয়ে স্টেশনের নিকটে এক জনাকীর্ণ জায়গায় তাকে গুলি করেন চার্লস জে গিতাউ। ১১ সপ্তাহ তাকে সার্বক্ষণিক নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসা দেওয়া পর তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ২৫তম প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম ম্যাকাইলি ১৯০১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর একটি গির্জায় ভ্রমণকালে আতঁতায়ীর গুলিতে নিহত হন। ওই আঁততায়ীর নাম সিজোলগুজ। সিজোলগুজ কয়েকবার ম্যাকাইলিকে হত্যা চেষ্টা করেন। তবে অবশেষে টেম্পল অব মিউজিকে বক্তৃতাকালে তাকে গুলি করে হত্যা করে ওই দুবৃত্তকারী।  ম্যাকাইলির পাকস্থলিতে দু রাউন্ড গুলি করেন সিজোলগুজ।

এদিকে ডেমোক্রেট দলের সবচেয়ে বড় বিয়োগের নাম জন এফ কেনেডি। যুক্তরাষ্ট্রের ৩৫তম প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি নিজেও ১৯৬৩ সালের ২২ নভেম্বর প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের মাত্র তিন বছরের মাথায় আততায়ীর গুলিতে প্রাণ হারান। তার ছোট ভাই রবার্ট এফ কেনেডিও ১৯৬৮ সালে প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়ন প্রার্থী হওয়ার পরই আততায়ীর হাতে নিহত হয়েছিলেন। কেনেডি পরিবারের এ দুর্ভাগা পরিণতির কারণে বিশ্বজুড়ে একে `কেনেডি ফ্যামিলি কার্স` বা কেনেডি পরিবারের অভিশাপ নামে ডাকা হয়।

সর্বশেষ টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের রিপাবলিকান নেতা মার্ক হাসেস ২০১৩ সালে আততায়ীদের গুলিতে নিহত হন। তিনি টেক্সাসের অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।

সুত্র: উইকিপিডিয়া

এমজে/ এআর

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি