রাজস্ব আদায় পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না
প্রকাশিত : ১৬:০১, ১৭ এপ্রিল ২০১৯
উন্নতি হচ্ছে না রাজস্ব আদায় পরিস্থিতির। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় পিছিয়ে রয়েছে। অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত এই ধারা অব্যাহত রয়েছে। এ সময়ে ঘাটতি পর্যায়ক্রমে বাড়ছে। রাজস্ব আয়ে প্রবৃদ্ধিও গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় কমে গেছে। এ বছর রাজস্ব আহরণে প্রবৃদ্ধি গত কয়েক বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ভালো থাকার পরও রাজস্ব আহরণে নাজুক অবস্থার কারণ খুঁজছে এনবিআর।
সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত রাজস্ব আয় লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় পিছিয়ে রয়েছে ৫১ হাজার কোটি টাকার বেশি। এই সময়ে রাজস্ব আয়ে প্রবৃদ্ধি মাত্র ৬ দশমিক ৫১ শতাংশ। গত অর্থবছরে একই সময়ে প্রবৃদ্ধি ছিল ১৩ দশমিক ১৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে দুই লাখ ৩ হাজার ৮৪৫ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রাজস্ব আহরণ হয় এক লাখ ৫২ হাজার ৫৬৬ কোটি টাকা। গত অর্থবছরে এ সময়ে আয় হয় এক লাখ ৪৩ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা। এ রকম এক পরিস্থিতিতে চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করা হচ্ছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র বলেছে, এবার মূল লক্ষ্যমাত্রা থেকে ১৬ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হচ্ছে দুই লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। যদিও এনবিআরের প্রস্তাব আড়াই লাখ কোটি টাকার। চলতি মাসের শেষে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিতব্য সম্পদ কমিটির বৈঠকে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা চূড়ান্ত করা হবে। একই সঙ্গে আগামী অর্থবছরের সম্ভাব্য প্রাক্কলন নিয়ে আলোচনা হবে।
আগামী অর্থবছরের জন্য এনবিআরের মাধ্যমে রাজস্ব আহরণের সম্ভাব্য প্রাক্কলন সাড়ে তিন লাখ কোটি টাকা করা হতে পারে বলে জানা গেছে। প্রস্তাবিত লক্ষ্যমাত্রা চলতি অর্থবছরের মূল লক্ষ্যমাত্রা থেকে ৫৪ হাজার কোটি টাকা এবং সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭০ হাজার কোটি টাকা বেশি হবে।
আয়কর, ভ্যাট ও আমদানি শুল্ক্ক- এই তিনটি উৎস থেকে রাজস্ব আহরণ করে এনবিআর। এর মধ্যে আয়কর ও ভ্যাট এই দুটিকে বলা হয় অভ্যন্তরীণ উৎস। অন্যদিকে, আমদানি পর্যায় বা বহির্খাত রাজস্ব আহরণ করা হয়। এই তিনটি খাতেই এবার বড় ধরনের ঘাটতি হয়। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত ভ্যাটে ঘাটতি হয় ১৯ হাজার ৪৫৭ কোটি টাকা। এ ছাড়া আয়কর ও আমদানি শুল্ক্কে ঘাটতি যথাক্রমে ১৭ হাজার ও ১৫ হাজার কোটি টাকা। এনবিআরের হালনাগাদ তথ্যানুযায়ী, ভ্যাটে আলোচ্য অর্থবছরের ৯ মাসে ৭৮ হাজার ৬৯৮ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আহরণ হয় ৫৯ হাজার ২৪১ কোটি টাকা। আমদানি শুল্ক্কে ৬২ হাজার ৮৩ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আয় ৪৬ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া আয়করে ৬৩ হাজার কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। এর বিপরীতে মার্চ পর্যন্ত আয় দাঁড়ায় ৪৬ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা। তবে তিনটি আয়ের উৎসের মধ্যে তুলনামূলকভাবে আয়করের প্রবৃদ্ধি মোটামুটি সন্তোষজনক। ৯ মাসে আয়করে প্রবৃদ্ধি হয় ১২ শতাংশ।
আগের পরিসংখ্যান বিশ্নেষণে দেখা যায়, এনবিআর কখনোই এর আগের বছরের চেয়ে ১৫ থেকে ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আয় করতে পারেনি। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, চলতি অর্থবছরের অতি উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রা এনবিআরের পক্ষে কখনোই অর্জন করা সম্ভব নয়।
এসএ/
আরও পড়ুন