রাবির সহিংসতায় বহিরাগত বিশেষ গোষ্ঠী জড়িত: ভিসি
প্রকাশিত : ১৭:০৯, ১৩ মার্চ ২০২৩
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অগ্নিকাণ্ড ও হামলার সঙ্গে বহিরাগত বিশেষ গোষ্ঠী জড়িত বলে মন্তব্য করেছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার। সোমবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন উপাচার্য।
তিনি বলেন, আমাদের কাছে তথ্য আছে বহিরাগতরা ছাত্রদের মধ্যে ঢুকে পড়ে সহিংসতা চালিয়েছে। ফলে পরিস্থিতি ছাত্রদের নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলে যায়। কারণ ছাত্ররা আগুন জ্বালিয়ে সহিংসতা করবে সেটা আমরা বিশ্বাস করি না। প্রথম দিকে ছাত্ররা থাকলেও পরে তারা ফিরে গেছে। কিন্তু বহিরাগতরা যায়নি। যারা জড়িত ছিল তাদের খুঁজে বের করতে পুলিশকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিটির কলেবর তিন থেকে পাঁচে বৃদ্ধি করে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে বলেও জানান উপাচার্য।
ঘটনা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে উপাচার্য বলেন, ঘটনা নিয়ন্ত্রণে পুলিশের কি ভূমিকা ছিল সে নিয়ে কথা বলতে চাইনা। তবে আমার সবাই মেলে সচেষ্ট থাকলে এতে বড় ঘটনা এড়ানো যেত।
উপাচার্য বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন প্রত্যাহার করা হয়েছে। তাদের দাবি মেনে তা বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার শিক্ষার্থী প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনায় বসা হবে। এছাড়াও তিন সদস্য কমিটি পুনর্গঠন করে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট করা হয়েছে। সাতদিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ঘটনায় অজ্ঞাত ৫০০ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবদুস সালাম বাদী হয়ে নগরীর মতিহার থানায় মামলাটি করেছেন। পুলিশ তদন্ত করে ব্যবস্থা নিবে।
মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) থেকে যথারীতি ক্লাস-পরীক্ষা চলবে বলেও জানান উপাচার্য। তিনি বলেন, এর আগে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষের ঘটনায় ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। ফলে রোববার ও সোমবার এই দুই দিন ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ছিল। তবে মঙ্গলবার থেকে যথারীতি ক্লাস-পরীক্ষা চলবে।
এদিকে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় এবার পুলিশের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করা হয়েছে। রোববার রাতে নগরীর মতিহার থানা পুলিশের এসআই আমানত উল্লাহ বাদী হয়ে মামলাটি করেন বলে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার আনিসুর রহমান জানান।
তিনি বলেন, মামলায় অজ্ঞাত ৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। পুলিশ বক্স ও মোটরসাইকেলে আগুন এবং সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে এ মামলায়।
এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আব্দুস সালাম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ৪০০/৫০০ জনকে আসামি করে রাজশাহী মহানগরের মতিহার থানায় একটি মামলা করেন। দুটি মামলায় তসলিম আলী ওরফে পিটার (৪৫) নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বাস যাত্রী এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে পরিবহন শ্রমিকদের ভাড়া ও সিটে বসা নিয়ে কথা কাটাকাটির জেরে গত শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর গেইট সংলগ্ন এলাকায় সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত থেমে থেমে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, সংঘর্ষ, হামলা, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় গোটা এলাকায় রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
সংঘর্ষের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর গেইটের পাশে সীমানা প্রাচীর লাগোয়া বেশ কয়েকটি দোকানপাটে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। কিছু দোকানে হামলার ঘটনা ঘটেছে। আগুন দেওয়া হয়েছে বিনোদপুর গেইট সংলগ্ন পুলিশ বক্সেও। পুলিশের একটিসহ বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে সংঘর্ষের সময় ইট-পাটকেল, কাঁদুনে গ্যাস ও রাবার বুলেটের আঘাতে প্রায় দুশ শিক্ষার্থী আহত হন। এর মধ্যে ভোর পর্যন্ত দেড়শজন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নেন। তাদের মধ্যে ৯২ জনকে ভর্তি করা হয়। একজন আইসিইউতে আছেন।
এর ঘটনার জেরে রোববার দিনভর বিক্ষোভে উত্তাল ছিল ক্যাম্পাস। সোমবারও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং আশেপাশের এলাকা থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। মহাসড়ক দিয়ে বাস-ট্রাকসহ বড় যানবাহন চলাচল বন্ধ আছে।
পুলিশ কমিশনার আনিসুর রহমান বলেন, “ছাত্রদের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা হচ্ছে। তারা যদি আন্দোলনে না নামে তা হলে রাস্তা খুলে দেওয়া হবে। তবে পুলিশ, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারপাশে সতর্ক অবস্থানে আছে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, “আহত ছাত্রদের চিকিৎসা নিশ্চিত করা হয়েছে। চিকিৎসার খবর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বহন করছে। আহত তিনজনকে ঢাকায় পাঠানোর জন্য চিকিৎসকরা পরামর্শ দিয়েছেন। দু-একদিনের মধ্যে তাদের ঢাকায় পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে।
তিনি বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণ উদঘাটন ও ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সুপারিশ প্রদানের জন্য রাবি কর্তৃপক্ষ উপ-উপাচার্য অধ্যাপক হুমায়ুন কবীরকে সভাপতি করে সাত সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, অধ্যাপক মো. তারিকুল হাসান (রসায়ন বিভাগ), অধ্যাপক মো. আব্দুর রশিদ সরকার (অর্থনীতি বিভাগ), মো. শফিকুজ্জামান জোয়ার্দার (সিন্ডিকেট সদস্য) ও ড. মো. আরিফুর রহমান (সহকারী প্রক্টর)।
শনিবার বগুড়া থেকে বাসে করে রাজশাহী আসছিলেন রাবির সমাজবিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থী। সিটে বসাকে কেন্দ্র করে এক ব্যক্তির সঙ্গে বাক-বিতণ্ডার জেরে স্থানীয়দের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত দফায় দফায় সংঘর্ষে দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। যাদের মধ্যে ৯২ জনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এরই ঘটনার জেরে রোবদার দিনভর বিক্ষোভ উত্তাল ছিল ক্যাম্পাস।
কেআই//
আরও পড়ুন