ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪

রাষ্ট্রভাষা বাংলা আদায়ে ফুঁসে ওঠে বাঙালি (ভিডিও)

মফিউর রহমান

প্রকাশিত : ১২:৩২, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | আপডেট: ১৪:৫৬, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২২

১৯৪৭ সালে ভারত ভাগ হয়ে গঠিত হয় ভারত ও পাকিস্তান। দু’হাজার কিলোমিটার দূরের পশ্চিম পাকিস্তান ঘোষণা করে উর্দুই হবে পুরো পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা। প্রতিবাদে ফুঁসে ওঠে বাঙালি, চলে গুলি। শেষ পর্যন্ত বাংলা পায় রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা।

১৯৪৭ সালে উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটে এবং ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি রাষ্ট্রের জন্ম হয়। কিন্তু প্রশ্ন দেখা দেয় পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা নিয়ে।

১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি করাচিতে অনুষ্ঠিত পাকিস্তান গণপরিষদের অধিবেশনে উর্দু বা ইংরেজিতে বক্তৃতা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়। পূর্ব পাকিস্তানের কংগ্রেস দলের সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত এর প্রতিবাদ করে বাংলাকেও পরিষদের অন্যতম ভাষা করার দাবি জানান।

তখনকার প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানসহ কেন্দ্রীয় নেতারা এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন।

১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ গণপরিষদের ভাষা-তালিকা থেকে বাংলাকে বাদ দেওয়া ছাড়াও পাকিস্তানের মুদ্রা ও ডাকটিকেটসহ সর্বস্তরে বাংলা ব্যবহার নিষিদ্ধ করে পাকিস্তান সরকার। প্রতিবাদে মিছিল করলে গ্রেফতার হন অনেকে। ক্ষোভ ছড়িয়ে পরে সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে। পূর্ববাংলা ডাক দেয় ধর্মঘটের।

১৯৪৮ সালের ২১ মার্চ পূর্ব পাকিস্তান সফরে এসে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঘোষণা দেয় ‘উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্র ভাষা’। সেই সমাবেশেই প্রতিবাদে ফেটে পড়ে জনতা।

১৯৪৯ সালে আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে গঠিত হয় নতুন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ। এ প্রেক্ষিতে ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন এক নতুন মাত্রা পায়। গঠিত হয় সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ। 

ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ ২১শে মার্চ এবং ২৪শে মার্চ ঢাকায় যখন ঘোষণা করলেন যে উর্দু হবে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। তখন তার চেতনায় ছিল যে উর্দু হচ্ছে মুসলমানদের ভাষা।’

২০শে ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় আবুল হাশিমের সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সভা হয়। এতে ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভাঙ্গার সঙ্কল্পে অটুট থাকেন।

সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘কয়েকটি সভা হয়েছিল। একটি সভায় বঙ্গবন্ধু সভাপতিত্ব করেছেন। কৌশলে তিন তিন করে বেড়িয়েছে। তিনজনের বেশি হবে না ১৪৪ ধারায় এবং ছাত্রীরাই আগে বেড়িয়ে ছিলেন।’

পরদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় ছাত্রদের সভা হয়। ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ স্লোগান দিয়ে সেখান থেকে রাস্তায় বেরিয়ে পরে ছাত্র-জনতা। সেই মিছিলে পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালায়। শহীদ হন রফিক, জব্বার, বরকতসহ আরও ক’জন।

পরদিন ২২ ফেব্রুয়ারি ছিল গণবিক্ষোভ ও পুলিশি নির্যাতনের দিন। প্রতিবাদী জনতা গায়েবানা জানাজার নামায পড়ে শোকমিছিল বের হয়। আগের মতোই পুলিশ-মিলিটারি মিলে পুনরায় গুলি চালায়। শহীদ হন শফিউর রহমানসহ আরও ক’জন। পূর্ববাংলা জ্বলে ওঠে ক্ষোভে-বিক্ষোভে। 

অবশেষে গণপরিষদ বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি দিয়ে বিল পাস করে। 

বাঙালির দাবি মানতে বাধ্য হয় পকিস্তান সরকার। উর্দুর পাশাপাশি পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে বাংলাকেও অন্যতম রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি দেয়।

ইতিহাসবিদ সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ভাষা আন্দোলন আমার সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্যের আন্দোলন।’

এএইচ/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি